ড. মুহাম্মদ ইউনূস জানিয়েছেন, তিনি নির্বাচন-পরবর্তী সময়ে আর কোনো পদে থাকতে চান না। কেবলমাত্র দেশকে সঠিক পথে দাঁড় করাতেই তিনি এই দায়িত্ব নিয়েছেন বলে জানান।
নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ ও বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস স্পষ্ট করে জানিয়েছেন, নির্বাচন শেষ হওয়ার পর তিনি আর কোনো পদে বহাল থাকবেন না। তিনি বলেন, বর্তমান সংকটময় পরিস্থিতিতে দেশের মানুষের প্রত্যাশা পূরণ করতেই তিনি দায়িত্ব নিয়েছেন। তবে এ দায়িত্ব স্থায়ী নয় এবং ক্ষমতার প্রতি তাঁর কোনো মোহও নেই।
ড. ইউনূস বলেন, “আমার জীবনের লক্ষ্য কখনোই রাজনীতি ছিল না। আমি কেবলমাত্র এই মুহূর্তে দেশের প্রয়োজনে এসেছি। নির্বাচন শেষ হওয়ার সাথে সাথেই আমি সমস্ত দায়িত্ব ছেড়ে দেব। আমার কাজ হচ্ছে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন নিশ্চিত করা। এর পর আর কোনো পদে থাকতে আমি আগ্রহী নই।”
তিনি আরও উল্লেখ করেন, দেশ আজ একটি গুরুত্বপূর্ণ সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে আছে। জনগণের দীর্ঘদিনের দাবি ছিল একটি নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন। সেই দাবি বাস্তবায়ন করাই তাঁর এবং তাঁর নেতৃত্বাধীন সরকারের মূল লক্ষ্য। ক্ষমতার লোভে তিনি আসেননি—বরং জনগণের চাপ ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রত্যাশা পূরণ করতেই তিনি এই দায়িত্ব নিয়েছেন।
প্রসঙ্গত, গত কয়েক মাসে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গন অস্থির হয়ে উঠেছিল। একদিকে আন্দোলন, অন্যদিকে সরকার ব্যবস্থার ওপর জনআস্থা হারিয়ে গিয়েছিল। ঠিক সেই সময়ে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে একটি অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়। দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই তিনি সবার কাছে বারবার আশ্বস্ত করেছেন যে, তিনি কোনো পক্ষের নন এবং তাঁর একমাত্র লক্ষ্য দেশের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া পুনরুদ্ধার করা।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ইউনূসের এই ঘোষণা দেশের মানুষকে নতুন করে আস্থা দিচ্ছে। কারণ, দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশে যে অভিযোগ শোনা যাচ্ছিল—ক্ষমতায় এলে কেউ আর ক্ষমতা ছাড়তে চায় না—তার বিপরীতে ইউনূস স্পষ্ট করে জানিয়েছেন যে তিনি নির্বাচন শেষ হওয়ার পর দায়িত্ব থেকে সরে দাঁড়াবেন।
অন্যদিকে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো বলছে, এই ঘোষণার মাধ্যমে নির্বাচন আরও গ্রহণযোগ্য হবে। আন্তর্জাতিক মহলও ইউনূসের এই সিদ্ধান্তকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছে। কারণ, একটি অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান যখন নিজে ঘোষণা করেন যে তিনি ক্ষমতায় থাকার জন্য আসেননি, তখন নির্বাচনকালীন পরিবেশ অনেক বেশি নিরপেক্ষ হয়।
ড. ইউনূস আরও বলেন, “আমি বিশ্বাস করি, জনগণই দেশের মালিক। আমার ভূমিকা শুধুমাত্র সাময়িক একজন অভিভাবকের মতো। নির্বাচন শেষ হওয়ার পর জনগণের ভোটে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের হাতেই দেশ পরিচালনার দায়িত্ব থাকবে।
তিনি এও জানান যে, নির্বাচনকালীন সময়ে তিনি সর্বোচ্চ চেষ্টা করবেন সবার জন্য সমান সুযোগ তৈরি করতে। প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও নির্বাচন কমিশনকে নিরপেক্ষ রাখতে তিনি কঠোর পদক্ষেপ নেবেন। তাঁর মতে, একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমেই দেশ আবার স্থিতিশীলতার পথে ফিরবে।
ড. মুহাম্মদ ইউনূসের এই বক্তব্য এখন রাজনৈতিক মহল, সাধারণ মানুষ ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মধ্যে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু। অনেকেই মনে করছেন, এ ঘোষণার মাধ্যমে তিনি স্পষ্ট করেছেন যে তাঁর উদ্দেশ্য কেবল দেশের স্বার্থ রক্ষা করা, ব্যক্তিগত বা রাজনৈতিক কোনো লাভ নয়।
বাংলাদেশের ইতিহাসে এই ধরনের ঘোষণা অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। কারণ, অতীতে বহুবার দেখা গেছে, যে নেতৃত্ব ক্ষমতায় এসেছে সে নানা অজুহাতে ক্ষমতা আঁকড়ে রাখার চেষ্টা করেছে। সেখানে ইউনূসের এই প্রতিশ্রুতি দেশের গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের প্রক্রিয়ায় নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে পারে।
সবশেষে তিনি বলেন, “আমি চাই আমার দায়িত্ব শেষ হোক জনগণের হাসিমুখ দেখে। একটি শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের মাধ্যমে সবাই যাতে নতুন ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে যেতে পারে।