উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া বলেছেন, নির্বাচন পিছিয়ে দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। জুলাই সনদ বাস্তবায়ন হলে নির্বাচনের রূপরেখা আরও স্পষ্ট হবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
বাংলাদেশের রাজনীতির অঙ্গনে যখন নির্বাচন নিয়ে নানা আলোচনা-সমালোচনা চলছে, তখন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া পরিষ্কার জানিয়ে দিলেন— “নির্বাচন পেছানোর কোনো সুযোগ নেই।” তার মতে, নির্বাচন সময়মতোই অনুষ্ঠিত হবে এবং এ বিষয়ে সরকারের প্রস্তুতি ইতিমধ্যেই সম্পন্ন।
বুধবার (২০ আগস্ট) বিকেলে রংপুর শহরের স্থানীয় পার্কের মোড়ে জুলাই অভ্যুত্থানের প্রথম শহীদ আবু সাঈদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, “জুলাই সনদ বাস্তবায়ন হলে নির্বাচনের রূপরেখা আরও স্পষ্টভাবে জনগণের সামনে উন্মোচিত হবে। সরকারের লক্ষ্য হচ্ছে সময়মতো নির্বাচন সম্পন্ন করা এবং জনগণকে একটি স্বচ্ছ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগের সুযোগ দেওয়া।
আসিফ মাহমুদ স্মরণ করিয়ে দেন যে, অতীতে সিটি করপোরেশন, পৌরসভা ও উপজেলা নির্বাচনে ব্যাপক কারচুপি ও কেন্দ্র দখলের অভিযোগ উঠেছিল। এ কারণে অনেক প্রতিষ্ঠান ভেঙে দেওয়া হয়েছিল। তবে ইউনিয়ন পরিষদ পর্যায়ে তা হয়নি। কারণ, স্থানীয় সরকার পরিচালনার জন্য পর্যাপ্ত জনবল সেখানে ছিল না। তিনি বলেন, জনগণের ভোগান্তি বিবেচনা করে স্থানীয় সরকার পুনর্গঠন করে এই নির্বাচনের আয়োজন করা দরকার ছিল, কিন্তু রাজনৈতিক দলগুলোর ঐকমত্যের অভাবে তা সম্ভব হয়নি।
তিনি আরও বলেন, দেশের বাজেট ব্যবস্থায় বৈষম্য দীর্ঘদিন ধরে একটি বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। তবে বর্তমান সরকার ইতিমধ্যেই বৈষম্য নিরসনে কাজ শুরু করেছে এবং ভবিষ্যতেও এ কার্যক্রম চলমান থাকবে। সরকারের নীতিগত অবস্থান হলো, দেশের উন্নয়ন ও সম্পদ বণ্টনে কোনো বৈষম্য যাতে না থাকে তা নিশ্চিত করা।
এর আগে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শহীদ আবু সাঈদের স্মরণে নির্মিত স্মৃতিস্তম্ভে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ। সেখানে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন।
শিক্ষার্থীরা উপদেষ্টার কাছে বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়নকল্পে কয়েকটি দাবি জানান। এর মধ্যে অন্যতম ছিল— বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি ইনডোর ও আউটডোর স্টেডিয়াম নির্মাণ এবং শিক্ষার্থীদের যাতায়াত সমস্যার সমাধানে দুটি বাস প্রদানের অনুরোধ। শিক্ষার্থীদের এই আবেদনকে তিনি গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করবেন বলে আশ্বাস দেন।
উপদেষ্টার এই বক্তব্য আসলে একটি স্পষ্ট রাজনৈতিক বার্তা বহন করে। তিনি জানিয়ে দিলেন, নির্বাচন নিয়ে কোনো প্রকার অনিশ্চয়তার সুযোগ নেই। সরকার তার পরিকল্পনা অনুযায়ী অগ্রসর হচ্ছে। রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে মতপার্থক্য থাকলেও সরকারের অবস্থান সুদৃঢ়— নির্ধারিত সময়েই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
বাংলাদেশের নির্বাচনপূর্ব পরিস্থিতি নিয়ে নানা মহলে যে প্রশ্ন উঠছে, আসিফ মাহমুদের এই বক্তব্য সেই প্রশ্নের জবাব হিসেবেই ধরা হচ্ছে। জুলাই সনদের বাস্তবায়ন কার্যক্রম সফল হলে নির্বাচনের রূপরেখা আরও দৃশ্যমান হবে এবং জনগণ আশ্বস্ত হবে যে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া সময়মতোই অগ্রসর হচ্ছে।