জাতীয় নাগরিক পার্টির নেতা হাসনাত আব্দুল্লাহ অভিযোগ করেছেন, নির্বাচন কমিশন এখন একটি দলের পার্টি অফিসে পরিণত হয়েছে। রোববার সীমানা নির্ধারণ শুনানিতে এনসিপি নেতাদের ওপর হামলার পর তিনি ইসিকে দলকানা ও প্রশ্নবিদ্ধ আখ্যা দিয়ে পুনর্গঠনের দাবি জানান।
জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আব্দুল্লাহ নির্বাচন কমিশনের নিরপেক্ষতা নিয়ে তীব্র প্রশ্ন তুলেছেন। তার অভিযোগ— কমিশন এখন আর নিরপেক্ষ কোনো সংস্থা নয়; বরং একটি বিশেষ দলের স্বার্থ রক্ষার পার্টি অফিসে পরিণত হয়েছে। তিনি সতর্ক করে বলেছেন, নির্বাচন কমিশন যদি পেশাদারিত্ব ও বস্তুনিষ্ঠতা বজায় রাখতে ব্যর্থ হয়, তবে এনসিপি পুনর্গঠনের দাবি তুলতে বাধ্য হবে।
রোববার (২৪ আগস্ট) বিকেলে নির্বাচন ভবনে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ অভিযোগ করেন। এর আগে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রস্তাবিত সীমানা নিয়ে শুনানিকালে মারামারির ঘটনা ঘটে। অভিযোগ উঠেছে, বিএনপি নেত্রী রুমিন ফারহানা ও তার সমর্থকরা পরিকল্পিতভাবে এনসিপি নেতা মো. আতাউল্লাহসহ অন্যদের ওপর হামলা চালান। এনসিপি এই ঘটনাকে নির্বাচন প্রক্রিয়ার জন্য অশনিসংকেত বলে আখ্যা দিয়েছে।
দুপুরে শুনানি চলাকালে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩ আসন নিয়ে যুক্তি উপস্থাপনের সময় এনসিপি নেতা আতাউল্লাহ দাঁড়ালে রুমিন ফারহানা ক্ষুব্ধ হয়ে তাকে ধাক্কা দেন বলে অভিযোগ। এরপর তার অনুসারীরা আতাউল্লাহকে লাথি-ঘুষি ও পায়ে পিষ্ট করে গুরুতর আহত করে। এ সময় এনসিপির আরও দুই নেতা মারধরের শিকার হন।
সংবাদ সম্মেলনে হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেন, “আজকের এই ঘটনা প্রমাণ করেছে আসন্ন নির্বাচনে বিএনপি কীভাবে ভোটকেন্দ্র দখল করবে। নির্বাচন ভবনের ভেতরেই যদি এ অবস্থা হয়, তাহলে সারা দেশে কী ঘটতে পারে সেটি সহজেই অনুমান করা যায়। এটি ছিল আসলে ভোটকেন্দ্র দখলের এক মহড়া।”
তিনি আরও বলেন, ইসি যদি সত্যিই নিরপেক্ষ ভূমিকা না নেয় তবে সেটি দেশের গণতন্ত্রের জন্য বড় হুমকি হয়ে দাঁড়াবে। হাসনাতের অভিযোগ— কমিশনের বর্তমান সদস্যরা ‘পিক অ্যান্ড চুজ’ পদ্ধতিতে নিয়োগপ্রাপ্ত এবং তাদের কর্মকাণ্ড সবসময় প্রশ্নবিদ্ধ।
হাসনাত স্পষ্ট করে বলেন, নির্বাচন কমিশনের প্রতি জনগণের আস্থা দ্রুত ক্ষয় হচ্ছে। “এই কমিশন অন্য কারও রিমোট কন্ট্রোলে চলছে কিনা তা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে। আমরা আগেও নূরুল হুদা কমিশনের পরিণতি দেখেছি। জনগণ আর কোনো মঞ্চস্থ নির্বাচন চায় না,” যোগ করেন তিনি।
তিনি আরও হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, যদি এই ধরনের দলকানা আচরণ চলতে থাকে, তাহলে বাংলাদেশ আবারও রাজনৈতিক সংকটে পড়বে।
হাসনাত আব্দুল্লাহ বিএনপি নেত্রী রুমিন ফারহানাকে সরাসরি অভিযুক্ত করেন। তার ভাষায়, “রুমিন ফারহানা বিগত ১৫ বছর আওয়ামী লীগের সুবিধাভোগী ছিলেন। এখন তিনি আবারও অস্থিতিশীলতা ছড়ানোর চেষ্টা করছেন। তার নেতৃত্বে এই হামলা হয়েছে।”
এনসিপি নেতা আতাউল্লাহও বলেন, সিসিটিভি ফুটেজে প্রমাণ পাওয়া যাবে যে হামলাটি ছিল সম্পূর্ণ পরিকল্পিত। তিনি দাবি করেন, “আমাদের টার্গেট করেই বিএনপি নেত্রী ও তার অনুসারীরা হামলা চালিয়েছে। এর দৃষ্টান্তমূলক বিচার করতে হবে, অন্যথায় নির্বাচনী পরিবেশ নিরাপদ থাকবে না।”
তবে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে রুমিন ফারহানা অভিযোগ অস্বীকার করেন। তিনি দাবি করেন, “প্রথমে আমাকেই ধাক্কা দেওয়া হয়েছিল। এরপর আমার সমর্থকেরা স্বাভাবিকভাবেই প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে।” তিনি আরও বলেন, এনসিপির ওই নেতা কোনো পরিচিত মুখ নন এবং শুনানির সময় নিজেই অস্থিরতা সৃষ্টি করেছিলেন।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এই ঘটনাই প্রমাণ করছে নির্বাচনের আগে রাজনৈতিক অস্থিরতা ও সহিংসতা আরও বাড়তে পারে। হাসনাত আব্দুল্লাহর বক্তব্যে স্পষ্ট যে, এনসিপি আগামী দিনে একটি গ্রহণযোগ্য ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য চাপ সৃষ্টি করতে চায়। কিন্তু বিএনপি-সমর্থিত সহিংসতা ও ইসির পক্ষপাতদুষ্ট ভূমিকা নির্বাচনকে আরও জটিল করে তুলতে পারে।
হাসনাত আব্দুল্লাহর মতে, “বাংলাদেশের মানুষ গণতান্ত্রিক উত্তরণের অপেক্ষায় আছে। তারা আর গুন্ডাতন্ত্র বা মঞ্চস্থ নির্বাচন দেখতে চায় না।” তিনি সিইসির পদত্যাগ দাবি করে বলেন, রুমিন ফারহানার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি না হলে আস্থা ফেরানো সম্ভব নয়।