close

কমেন্ট করুন পয়েন্ট জিতুন!

নির্বাচন কমিশন বনাম রাহুল গান্ধী: 'ভোট চুরির' অভিযোগে উত্তাল ভারতের রাজনীতি!..

Abdullah Al Mamun avatar   
Abdullah Al Mamun
"ভোট চুরির" মাধ্যমে জনগণের রায়কে প্রভাবিত করা হচ্ছে এবং এর জন্য নির্বাচন কমিশনই দায়ী থাকবে।..

আন্তর্জাতিক ডেস্ক, ঢাকা: ভারতের নির্বাচন কমিশনের নিরপেক্ষতা নিয়ে উঠেছে তীব্র প্রশ্ন। প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে শাসক দল বিজেপির হয়ে কাজ করার সরাসরি অভিযোগ এনেছেন কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী, যা দেশটির রাজনৈতিক অঙ্গনে এক নজিরবিহীন উত্তাপ সৃষ্টি করেছে। নির্বাচন কমিশনের কাছে হলফনামা জমা দেওয়ার পরিবর্তে জনগণের কাছে বিচার চাওয়ার যে ঘোষণা রাহুল গান্ধী দিয়েছেন, তা ভারতের গণতন্ত্রের অন্যতম প্রধান স্তম্ভকেই যেন নাড়িয়ে দিয়েছে।

সম্প্রতি এক জনসভায় রাহুল গান্ধী নির্বাচন কমিশনারদের সরাসরি চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়ে বলেন, তারা যদি নিরপেক্ষ হন, তবে বিরোধীদের তোলা অভিযোগের ভিত্তিতে ব্যবস্থা নিন। তিনি অভিযোগ করেন, "ভোট চুরির" মাধ্যমে জনগণের রায়কে প্রভাবিত করা হচ্ছে এবং এর জন্য নির্বাচন কমিশনই দায়ী থাকবে। তাঁর এই বক্তব্যের পর কমিশন ৭ দিনের মধ্যে প্রমাণসহ হলফনামা জমা দিতে বললেও, রাহুল গান্ধী সেই পথে না হেঁটে দেশজুড়ে এই কথিত অসদাচরণের বিরুদ্ধে প্রচারণার ঘোষণা দিয়েছেন।

এই সংঘাতের প্রেক্ষাপট বেশ গভীর। সমালোচকরা বলছেন, ভারতের নির্বাচন কমিশন, যা একসময় তার স্বায়ত্তশাসন এবং নিরপেক্ষতার জন্য প্রশংসিত ছিল, ধীরে ধীরে তার সেই গৌরব হারাচ্ছে। ভিডিও প্রতিবেদনে উঠে এসেছে বেশ কিছু উদ্বেগজনক তথ্য:

  • পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ: বিজেপি নেতাদের বিরুদ্ধে ঘৃণাসূচক বক্তব্যের একাধিক অভিযোগ জমা পড়লেও কমিশন কোনো ব্যবস্থা নেয়নি, অথচ বিরোধী নেতাদের সামান্য বিষয়েই নোটিশ পাঠানো হচ্ছে।

  • ভোটার তালিকায় গরমিল: ভোটার তালিকায় লক্ষ লক্ষ নকল ভোটার, ভুয়া ঠিকানা এবং ভুল ছবি থাকার মতো গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। এমনকি ওড়িশার বিজু জনতা দলের মতো দলও অভিযোগ করেছে যে, অনেক কেন্দ্রে ভোট পড়ার চেয়ে ১৫-৩০% বেশি ভোট গণনা করা হয়েছে।

  • বিতর্কিত নিয়োগ ও পদত্যাগ: অরুণ গোয়েলের মতো নির্বাচন কমিশনারের ঝড়ের বেগে নিয়োগ এবং লোকসভা নির্বাচনের ঠিক আগে তাঁর রহস্যজনক পদত্যাগ কমিশনের স্বচ্ছতাকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। এর আগে প্রধানমন্ত্রী মোদীর বিরুদ্ধে আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগে ভিন্নমত পোষণ করায় অশোক লাভাসার পদত্যাগের ঘটনাও জনমনে সন্দেহ উস্কে দিয়েছিল।

  • বিরোধীদের আর্থিক কণ্ঠরোধ: সাধারণ নির্বাচনের ঠিক আগে কংগ্রেস পার্টির ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ করে দেওয়ার ঘটনাকে বিরোধীরা "অপরাধমূলক কাজ" বলে আখ্যা দিয়েছে। তাদের অভিযোগ, নির্বাচনে সমান সুযোগ নষ্ট করার জন্যই পরিকল্পিতভাবে এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছিল এবং নির্বাচন কমিশন এক্ষেত্রে নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করেছে।

পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন, রাহুল গান্ধী এই লড়াইকে আইনি প্রক্রিয়ার মধ্যে সীমাবদ্ধ না রেখে সরাসরি জনগণের আদালতে নিয়ে যেতে চাইছেন। তাঁর কৌশল হলো, নির্বাচন কমিশনের প্রতি সাধারণ মানুষের আস্থাহীনতাকে রাজনৈতিক আন্দোলনে রূপ দেওয়া।

এই নজিরবিহীন সংঘাতে ভারতের গণতন্ত্র এক সন্ধিক্ষক্ষণের মুখে দাঁড়িয়ে। যদি দেশের নির্বাচন পরিচালনাকারী সর্বোচ্চ সংস্থাই তার নিরপেক্ষতা হারায়, তবে জনগণের ভোটের অধিকার এবং পুরো নির্বাচনী প্রক্রিয়ার ভবিষ্যৎ কী হবে—সেই প্রশ্নই এখন বড় হয়ে দেখা দিয়েছে।

Tidak ada komentar yang ditemukan