চরমোনাই পীর মুফতি সৈয়দ মুহাম্মাদ রেজাউল করীম বলেছেন, নির্বাচন এলে রাজনৈতিক মহল দেশপ্রেমীর ভান করে আর ক্ষমতায় গিয়ে দুর্নীতিতে দেশকে চ্যাম্পিয়ন বানায়। তিনি জনগণকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানান।
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির ও চরমোনাই পীর মুফতি সৈয়দ মুহাম্মাদ রেজাউল করীম দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে কঠোর সমালোচনা করেছেন। তিনি অভিযোগ করে বলেন, স্বাধীনতার পর থেকে বিগত ৫৪ বছরে বিভিন্ন স্বার্থান্বেষী মহল বারবার জাতিকে ধোঁকা দিয়েছে। যখন নির্বাচন আসে, তখন তারা নিজেদের দেশপ্রেমিক হিসেবে তুলে ধরে, ধর্মীয় মূল্যবোধের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়ার ভান করে এবং উলামায়ে কেরামের দ্বারস্থ হয়। কিন্তু ক্ষমতায় পৌঁছানোর পরই তাদের আসল রূপ প্রকাশ পায়। তখন তারা দুর্নীতিকে হাতিয়ার বানিয়ে জাতিকে বারবার প্রতারিত করে।
গত রোববার (২৪ আগস্ট) নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলার চৌমুহনীতে বেঙ্গল কনভেনশন হলে অনুষ্ঠিত এক বিশাল উলামা ও সুধী সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি। নোয়াখালী উত্তর জেলা ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ এ সমাবেশের আয়োজন করে।
চরমোনাই পীর বলেন, “এই জাতি অতীতে দেখেছে কিভাবে একাধিকবার দেশকে দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন করা হয়েছে। যারা জনগণের ভালোবাসার কথা বলে ক্ষমতায় যায়, তারাই পরবর্তীতে হাজার কোটি টাকা পাচার করে দেশের সম্পদ বিদেশে স্থানান্তর করেছে। একসময় গর্ব করে বলা হয়েছিল, ‘হাসিনা পালায় না’। অথচ জনতার রোষে তাকেও পালাতে হয়েছে। ক্ষমতার অপব্যবহার ও জনগণের সাথে প্রতারণার ফল কতটা ভয়াবহ হতে পারে, তা ইতিহাস ইতিমধ্যেই প্রমাণ করেছে।”
তিনি আরও বলেন, “গত জুলাই মাসে গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে এই জাতি আবারও রক্ত দিয়েছে। হাজার হাজার মায়ের বুক খালি হয়েছে, অসংখ্য মানুষ অন্ধত্ব ও পঙ্গুত্বের অভিশাপ নিয়ে বেঁচে আছে। এত ত্যাগ ও আত্মাহুতির বিনিময়ে আমাদের সামনে নতুন সুযোগ এসেছে দেশকে গড়ার। এই সুযোগ যদি কাজে না লাগানো যায়, তাহলে ইতিহাস কখনো আমাদের ক্ষমা করবে না। আগামী প্রজন্ম আমাদের ধিক্কার দেবে।”
তার মতে, এ দেশের প্রকৃত শক্তি ইসলাম ও ইসলামী মূল্যবোধ। তিনি বলেন, “উলামায়ে কেরামই দেশের প্রকৃত স্তম্ভ। ইসলাম এ দেশের রক্ষাকবচ। তাই আগামীর বাংলাদেশকে সঠিক পথে পরিচালিত করতে হলে উলামায়ে কেরামকে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে।”
এসময় তিনি জনগণকে সতর্ক করে বলেন, নির্বাচন আসলেই যারা দেশপ্রেমীর মুখোশ পরে, তাদের আসল চরিত্র চেনার দায়িত্ব জনগণের। কারণ, অতীতে যারা দুর্নীতির চক্রে দেশকে বারবার পিছিয়ে দিয়েছে, তারা আবারও একই কৌশল অবলম্বন করতে পারে।
সমাবেশে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা গাজী আতাউর রহমান। সভার সভাপতিত্ব করেন দলের নোয়াখালী জেলা সভাপতি হাফেজ নজির আহমদ। এছাড়া উপস্থিত ছিলেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ প্রবাসী উপকমিটির সদস্য ও নোয়াখালী-১ আসনের সম্ভাব্য সংসদ সদস্য পদপ্রার্থী জহিরুল ইসলাম, বাংলাদেশ ওমান কেন্দ্রীয় কমিটির সহসভাপতি সলিম উদ্দিন, নোয়াখালী-৩ আসনের সম্ভাব্য সংসদ সদস্য পদপ্রার্থী মাওলানা নুর উদ্দিন আমানতপুরীসহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ।
সমাবেশে বক্তারা ঐক্যমত্য প্রকাশ করেন যে, বাংলাদেশের রাজনীতিকে ইসলামী মূল্যবোধ ও ন্যায়ের ভিত্তিতে পুনর্গঠন করা জরুরি। দুর্নীতিমুক্ত একটি ন্যায্য সমাজ প্রতিষ্ঠায় ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশকে আরও শক্তিশালী করার ওপর তারা গুরুত্বারোপ করেন।
চরমোনাই পীর তার বক্তব্যের শেষে জনগণকে আবারও আহ্বান জানান—“যারা বারবার জনগণকে ধোঁকা দিয়েছে, যারা দেশের সম্পদ লুট করে বিদেশে পাচার করেছে, তাদের আর কোনোভাবেই ক্ষমতায় আসতে দেওয়া যাবে না। এ দেশ আল্লাহর দান, এদেশকে রক্ষা করতে হলে সবাইকে একসাথে দাঁড়াতে হবে।