close

ভিডিও আপলোড করুন পয়েন্ট জিতুন!

নিজেকে এনএসসি'র কর্মকর্তা পরিচয় দিয়ে চাকুরি প্রতারণা।

News Ajker Shatabdi  avatar   
News Ajker Shatabdi
জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের কর্মকর্তা পরিচয় দিয়ে চাকুরি প্রতারণায় লক্ষ টাকা হাতিয়ে নেন তেইশ বছরের তরুণ। ‎..
 
নিজেকে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের কর্মকর্তা পরিচয় দিয়ে বিভিন্ন সময় চাকুরি দেওয়ার কথা বলে প্রতারণা করে আসছিলো শেরপুর জেলার সদর উপজেলার, ডুবার চর কড়ইগাছ গ্রামের মোঃ সরাজল মিয়ার ছেলে মো: শরিফুল ইসলাম (শরিফ) ।
‎বিভিন্ন সূত্রে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নিজেকে কখনো পরিচয় দিতো ব্যাংক কর্মকর্তা আবার কখনো বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের ডাটা এন্ট্রি অপারেটর। এছাড়াও বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সরকারি কর্মকর্তা পরিচয়ে নিজ জেলা শেরপুরে চাকুরির প্রলোভন দেখিয়ে অর্থ আত্মসাৎ, জাল সনদ তৈরি করা,মেডিকেলে অসহায় রোগীদের সাথে প্রতারণা, বন্ধুবান্ধব সহ পাড়া প্রতিবেশী এমনকি নিজ আত্মীয় স্বজনের কাছ থেকে বিভিন্ন অজুহাতে অর্থ আত্মসাৎ, নারী কেলেংকারী সহ নানা অভিযোগ উঠেছে ২৩ বছর বয়সী এই তরুণের। তার বিরুদ্ধে অভিযোগের শেষ নেই নিজ এলাকা শেরপুরে ।
‎শরিফুলের বাড়ি শেরপুর জেলার সদর উপজেলার ডুবার চর এলাকায়। সে নবারণ পাবলিক স্কুল থেকে মাধ্যমিক ও ডাঃ সেকান্দর আলী কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক পাস করে ।
‎২০২১ সালে করোনার পেন্ডামিক পরিস্থিতির শেষের দিকে চাকুরির সন্ধানে নিজ জেলা হতে ঢাকায় চলে আসে শরিফুল। সেখানে ডাচ বাংলা ব্যাংকে চাকরি নেয় বলে জানান শরিফুলের পরিচিত জনেরা। এর কয়েকমাস পরেই নিজ এলাকা শেরপুরে চলে আসে সে। আর প্রচার করে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের অধিভুক্ত বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে সরকারি চাকরি পেয়েছে।
‎উল্লেখ্য প্রতারণার শিকার ভুক্তভোগীদের মধ্যে নাম প্রকাশে ইচ্ছুক এবং নাম প্রকাশে অনিচ্ছুকদের মধ্যে সাক্ষাৎকার ও অভিযোগের বিবরণী থেকে জানা যায়, প্রায় ১০ জনের কাছ থেকে আনুমানিক কয়েক লক্ষ টাকা বিভিন্ন অজুহাতে আত্মসাৎ করে শরিফুল। শুধু তাই নয়, সরকারি বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রশিক্ষণের জাল সনদ তৈরি করেও অর্থ আত্মসাৎ করে আসছিলো এই প্রতারক।
‎উল্লেখ্য ভুক্তভোগীদের মধ্যে, শেরপুর সদর উপজেলার বাসিন্দা, মো রাকিবুল হাসান রিপন তার সাথে ঘটে যাওয়া প্রতারণার বিবরণ দিতে গিয়ে তিনি জানান, "শরিফুল আমার খুব ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিল। আমরা একই সাথে পড়াশোনা করেছিলাম,পরে দীর্ঘদিন আমাদের যোগাযোগ ছিল না। ঘটনাক্রমে তার সাথে দেখা হলে কথোপকথনে শরিফুল আমাকে জানায়, সে সরকারি চাকরি করছে । তৎক্ষণাৎ জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের একটি আইডি কার্ড আমাকে বের করে দেখায়। আর জানায়, তার অফিসে রাজস্ব অস্থায়ী (০৯ বছর) মেয়াদি লোকবল নিয়োগ করা হচ্ছে। আমি সেই সময় বেকার থাকায় তার প্রস্তাবে রাজি হই।
‎ঘটনাটি ২০২৩ সালের জুলাই মাসে আমার হোয়াটসঅ্যাপ ( WhatsApp ) নাম্বারে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের চাকরি প্রাপ্তির আবেদন পত্র উল্লেখ স্মারক নাম্বার ৩৪.৩.০০০০.০০০৮ /২২৪২ এ একটি ফর্ম প্রেরণ করে আর জানায়, উক্ত ফর্মটি ডাউনলোড করে হাতে লিখে তার নিকট প্রেরণ করতে এবং ব্যাংক ড্রাফ্ট করতে হবে বলে ৩৯০০ ( তিন হাজার নয়শত) টাকা জরুরি ভাবে পাঠাতে বলে । এর ০২ (দুইমাস) পরে আমার ফোনে টেলিটক (01576-634362) নাম্বার থেকে এস.এম.এস এর মাধ্যমে জানানো হয় আমি প্রাথমিক ভাবে বাছাই হয়েছি। মেসেজ আসার আধঘন্টা পরে শরিফুল আমাকে ফোন করে জানায়, আরও কিছু টাকা লাগবে। অফিসের রেজিস্ট্রার মিষ্টি খাওয়ার জন্য টাকা দাবি করেছে সেজন্য । কেননা আমার চাকরি কনফার্ম হয়েছে, শুধুমাত্র ফর্মালিটি অনুযায়ী এস.এম.এস এ উল্লেখিত তারিখে উপস্থিত হতে হবে এবং সেদিন আমার নিয়োগপত্র হাতে প্রদান করা হবে বলে শরিফুল জানায়। এস.এম.এস এ উল্লেখ ১০ই আগস্ট ২০২৩ ইং তারিখ উপস্থিত হওয়ার জন্য জানানো হয়। আমি উপস্থিত হওয়ার জন্য ঢাকায় রওনা করবো ঠিক একদিন পূর্বে শরিফুল আমাকে ফোনে জানায় যে, কোনো কারণবশত তারিখ পরিবর্তন করা হয়েছে। আবার নতুন করে সাক্ষাৎ এর তারিখ এসএমএস এ পাঠানো হবে। আমি যেন এসএমএস এর জন্য অপেক্ষা করি। তখন থেকে আমার একটু সন্দেহ তৈরি হয় কারণ শরিফুল ছাড়া ক্রীড়া পরিষদ থেকে আমার সাথে অন্য কেউ যোগাযোগ করছে না বা আমিও কারোর সাথে যোগাযোগ করতে পারছি না।
‎ তখন শরিফুলকে বিভিন্ন বিষয়ে প্রশ্ন করতে সে জানায়, আমি যেন দুশ্চিন্তা না করি।
‎০৩/১০/২০২৩ইং তারিখ উল্লেখিত স্মারক এ
‎৩৪.৩.০০০০.০০০৮ /১২৮ একটি নিয়োগ চূড়ান্ত করা হয়েছে মর্মে একটি তালিকা আমার
‎হোয়াটসঅ্যাপ ( WhatsApp) এ প্রেরণ করে।
‎উল্লেখ্য এর মাঝে চারটি ( ৪টি) সাক্ষাৎ এর তারিখ পরিবর্তন হয়, যার মধ্যে কোন না কোন কারণদশা দেখানো হয়, উল্লেখ এসএমএস এর ধরনটি ছিল এমন,
‎(প্রিয় প্রার্থী,
‎জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের সৃজিত প্রকল্প "অফিস সহকারী (অস্থায়ী) " পদে আপনাকে চূড়ান্ত ভাবে নির্বাচিত করা হয়েছে। আগামী ২৯ই আগস্ট, রোজ:মঙ্গলবার ,সময়- সকাল: ১০.০০ টায়, জাতীয় ক্রীড়া আইন ৭(ক) অনুযায়ী উক্ত নিয়োগটি দুর্নীতির অভিযোগে স্থগিত করা হল। পরবর্তী ১২ই সেপ্টেম্বর,রোজ- মঙ্গলবার, সময়-সকাল ১০.০০ টায়, নিম্নের ঠিকানায় উপস্থিত থাকার জন্য বলা হল।
‎৬২/৩, বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়াম ৪র্থ গেইট, ২য় তলা,পুরানা পল্টন ঢাকা-১০০০)
‎উল্লেখ্য এর মধ্যে প্রতারক শরিফুল বিভিন্ন অজুহাতে আমার কাছ থেকে প্রায় ৩৯,০০০ ( উনচল্লিশ হাজার) টাকা নিয়েছিল । শেষ পর্যায়ে তার বিভিন্ন অজুহাত সন্দেহজনক মনে হওয়ায় আমি সরাসরি জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ এর কর্তৃপক্ষ বরাবর যোগাযোগ করার চেষ্টা করি৷ সেখানে গিয়ে জানতে পারি এ ধরনের কোনো নিয়োগ অফিসিয়াল ভাবে দেওয়া হয়নি। আরও ভয়াবহ বিষয় হলো শরিফুল নামে কেউ জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ এ কোন শাখায়ই কর্মরত ছিলো না বলে তারা সাফ জানায়। তারা এও জানায়, শেরপুর থেকে আমার মতো ভুক্তভোগী আরো কয়েকজন অভিযোগ করে গিয়েছে। লিখিত অভিযোগ পেলে তারা আইনানুগ পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন বলে জানান। সবকিছু জানার পর আমার মাথায় যেন আকাশ ভেঙ্গে পড়ে। প্রতারক শরিফুলের কথা মতো আমি বিভিন্ন আত্মীয়স্বজনের কাছ থেকে টাকা ধারদেনা করে তাকে দিয়েছি। আমার একমাত্র মেয়েকে হাসপাতালের বেডে মুমূর্ষু অবস্থায় রেখে শরিফুলের কথা মতো ঢাকায় রওনা হই। আবার মাঝপথে থাকাকালীন শরিফুল জানাতো আজকে আসার প্রয়োজন নেই। পরিচালক স্যার আজকে ইন্টারভিউ নিবেন না এমন অজুহাত দিতো। পরবর্তীতে শরিফুলের পরিবারের সাথে যোগাযোগ করা হলে তারা সালিসি ভাবে বিষয়টি মীমাংসা করে, আর শরিফুল তার সব অপরাধ শিকার করে। যার ফলে আইনগত ভাবে আমরা কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করিনি৷"
‎কয়েকটি সূত্রে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, শেরপুর সদর উপজেলার লতারিয়া গ্রামের দ্বীন ইসলামের ছেলে সাইদুর রহমানের সাথেও একই কায়দায় জাতীয় ক্রীড়া পরিষদে চাকরি দেওয়ার নামে প্রতারণা করে অর্থ আত্মসাৎ করে শরিফুল। তিনিও লোকলজ্জার ভয়ে আইনগত পদক্ষেপ নেননি।
‎শেরপুর সদর উপজেলার আরেকজন ভুক্তভোগী মো: শহিদুল ইসলাম। ট্রাস্ট ব্যাংকে অফিস সহকারী পদে চাকরি দেওয়ার নাম করে তার কাছ থেকে হাতিয়ে নেয় প্রায় অর্ধলক্ষ টাকা। শহিদুল জানান, " প্রতারক শরিফুল আমার স্ত্রী'র সাথে ইন্টারমিডিয়েট এ একই সাথে পড়াশোনা করেছে। সেই সুবাদে আমার স্ত্রীর মাধ্যমে পরিচয়। শরিফুল আমার স্ত্রী'র ফেসবুকে যোগাযোগ করে আমার বিষয়ে সে জানতে পারে। আমি সেসময় বেকার ছিলাম, চাকরির জন্য বিভিন্ন জায়গায় যোগাযোগ করছিলাম, তখন শরিফুল ব্যাংকের চাকরির বিষয়ে জানায় আর বলে পূর্বে সে ঐ ব্যাংকে চাকরি করেছিলো। সে ব্যাংকের ম্যানেজারের সাথে কথা বলে চাকরি পাইয়ে দিবে।তাদের সাথে তার ( শরিফুলের) ভালো সম্পর্ক রয়েছে। আমার স্ত্রী জানায় শরিফুল ভালো ছেলে, বিভিন্ন সামাজিক সেচ্ছাসেবী সংগঠন এ সেবামূলক কাজের সাথে জড়িত। তাকে বিশ্বাস করতে সমস্যা নেই। তার কথা মতো আমি সব করি। আবেদন পত্র, লিখিত পরিক্ষা, ভাইভা পরিক্ষা ইত্যাদি বিষয়ে কয়েক ধাপে আমার কাছ থেকে বিভিন্ন অজুহাতে অর্ধলক্ষ টাকা হাতিয়ে নেয়। এক পর্যায়ে ব্যাংকে যোগাযোগ করিয়ে দেওয়ার কথা জানালে শরিফুল বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়ে ফোন বন্ধ করে দেয়, ফোন দিলে ফোন রিসিভ করে না। পরে আইনগত পদক্ষেপ নেওয়ার বিষয়ে জানালে প্রতারক শরিফুল টাকা ফেরত দেওয়ার আশ্বাস দেয়।
‎শরিফুলের প্রতারণার বিষয়ে আমি সবাইকে জানালে জানতে পারি সে শুধু আমার সাথেই প্রতারণা করেনি, শেরপুরে প্রায় অনেকের সাথেই এমন প্রতারণা করে টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। "
‎তথ্য অনুসন্ধানে আরো উঠে আসে, জামালপুর জেলার কড়াইতলা ঝগড়ারচর গ্রামের রনি হাসানের কাছ থেকে মোটরসাইকেল কেনা নিয়ে প্রতারণা করে ৪০ হাজার (চল্লিশ হাজার) টাকা আত্মসাৎ করে।
‎শেরপুরের নন্দীবাজারের জাকির হোসেনের কাছ থেকে আশি হাজার (৮০ হাজার ) টাকা চাকরি দেওয়ার নাম করে আত্মসাৎ করে।
‎এছাড়াও নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক শেরপুরের কুসুম হাটী গ্রামের একজন মেয়ের কাছ থেকে প্রতারণা করে ত্রিশ হাজার ( ৩০ হাজার) টাকা আত্মসাৎ করে ২৩ বছর বয়সী এই প্রতারক।
‎ময়মনসিংহের সদর উপজেলার নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তরুণদের কাছ থেকে চাকরি দেওয়ার নামে হাতিয়ে নিয়েছে প্রায় এক লক্ষ টাকা।
‎ প্রতারক শরিফুল ইসলাম নিজেকে সরকারি কর্মকর্তা পরিচয়ে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের ব্যবহৃত লোগো, উপপরিচালক কর্তৃক স্বাক্ষর, সম্মিলিত পরিচয় পত্র ও জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের মনোগ্রাম সম্বলিত সীল, স্বাক্ষরকৃত নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি,নিয়োগপত্র সহ শরিফুলের চাকরির সত্যতা ও উপ-পরিচালক কর্তৃক ইস্যুকৃত আইডি কার্ড বিষয়াদি সহ অন্যান্য নথিপত্র উপস্থাপন করা হলে, মো: সিহাব উদ্দিন,সহকারী পরিচালক (প্রশাসন) - সাধারণ, জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ (ঢাকা) উক্ত ঘটনার বিষয়ে তিনি বলেন, "আমাদের সকল কর্মকর্তা এবং কর্মচারীদের তালিকা এনএসসি'র ওয়েবসাইট দেওয়া রয়েছে যা প্রতিনিয়ত আপডেট করা হয়ে থাকে । তাছাড়া মো: শরিফুল ইসলাম (শরিফ) নামে আমাদের কোন কর্মকর্তা বা কর্মচারী নেই, তিনি স্পষ্টতই জানান উল্লেখ্য পরিচয় পত্রটি ভূয়া । উপ- পরিচালক মহোদয়ের স্বাক্ষর এনএসসির ওয়েবসাইট থেকে সংগ্রহ করে খুব চতুরতার সাথে কম্পিউটারের মাধ্যমে তৈরি করা হয়েছে। আমরা মৌখিক ভাবে কয়েকটি অভিযোগ পেয়েছি, লিখিত ভাবে অভিযোগ পেলে আমরা আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করবো৷ তিনি আরো বলেন, যদি আমাদের কোনো কর্মকর্তা বা কর্মচারীর নিয়োগ-বাণিজ্যের সাথে কোনরূপ সম্পৃক্ততা পাওয়া যায় তাহলে আমরা তার বিরুদ্ধে যথাযথ আইনানুগ পদক্ষেপ গ্রহণ করবো।" তাছাড়া এ ধরনের প্রতারণার ফাঁদে যেন কেউ পা না দেয় তার জন্য সবাইকে আরো সচেতন থাকার আহ্বান জানান তিনি।
‎ উপ-পরিচালক (ঢাকা), জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ, এস এম সাইফুল ইসলাম, সরাসরি সাক্ষাৎ করলে তিনি জানান, "দুইজন প্রতারণার শিকার ভুক্তভোগী আমার সাথে দেখা করেছিল, একজন ময়মনসিংহ থেকে আরেকজন শেরপুর থেকে। কথা বলে জানতে পারি আমার দপ্তরে ভূয়া আইডি কার্ড ব্যবহার করে এবং এনএসসির ওয়েবসাইট থেকে নথিপত্র নকল করে শেরপুর জেলার শরিফুল ইসলাম শরিফ নামের একজন প্রতারক তাদের কাছ থেকে আমার দপ্তরে চাকরি দেওয়ার কথা বলে অর্থ হাতিয়ে নিয়েছে। বিষয়টি দুঃখজনক, যেহেতু শরিফুল নামের ছেলেটি আমার দপ্তরে কোনো কর্মচারী হিসেবে নিযুক্ত ছিলো না কিন্তু আমার দপ্তরের নাম ব্যবহার করে মানুষের সাথে প্রতারণা করেছে, এই ক্ষেত্রে আমার কোনো কর্মকর্তা যদি সম্পৃক্ত থাকে কিংবা সহযোগিতা করেছে বলে প্রমাণিত হয় তবে আইনত ভাবে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। "
 
‎তিনি আরো বলেন, "জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ এবং অধিভুক্ত সকল স্টেডিয়ামের স্থায়ী ও অস্থায়ী সকল নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি এনএসসির ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হয়ে থাকে, তাই আবেদন প্রার্থীদের প্রতি আহ্বান থাকবে সঠিক তথ্য যাচাই করে আবেদন করার জন্য।
‎শরিফুলের বিষয়ে তার স্ত্রী তাসলিমা আক্তারের কাছে জানতে চাওয়া হলে তার স্ত্রী বলেন, "আমার বিয়ে হয়েছে ০৩ ( তিন ) বছর চলছে। বিয়ের আগে জানতাম সে একটা ব্যাংকে চাকরি করতো।
‎ বিয়ের চার-পাঁচ মাস ভালোই চলছিলো কিছুদিন পর থেকে সংসারে খরচপত্র কম পাঠাতো বাড়িতেও কম আসতো। একদিন বাড়িতে এসে জানালো ব্যাংকের চাকরি ছেড়ে দিয়েছে, একটা সরকারি চাকরি পেয়েছে। এটুকু বলেছিলো আর তেমন কিছু জানায় নি আমাকে। কিছুদিন বাড়িতে থাকার পরে আবার ঢাকায় চলে যায়। এর মাসখানেক পরে বাড়িতে আমার শ্বশুর-শাশুড়ীর কাছে এসে মানুষজন টাকা-পয়সা চাইতো, বলতো শরিফুল টাকা নিয়েছে। আমি আমার শ্বশুর- শাশুড়ী সহ শরিফুলের কাছে এই বিষয়গুলো নিয়ে জানতে চাইলে তারা আমাকে কিছুই বলতো না। আজ প্রায় ০৭ ( সাত) মাস যাবৎ আমাদের যোগাযোগ নেই। আমি আমার বাবার বাড়িতে অবস্থান করছি। আমার মেয়ে হওয়ার পর থেকে ঠিক মতো ভরণপোষণ দেয় না। পরে জানতে পারি বিভিন্ন মানুষজনের কাছ থেকে প্রতারণা করে চাকরি দেওয়ার নাম করে টাকা - পয়সা হাতিয়ে নিয়েছে সে। পারিবারিক কলহের জন্য আমরা বিচ্ছিন্ন রয়েছি। পারিবারিক ভাবে ডিভোর্স এর বিষয়ে সিদ্ধান্ত চলছে। বর্তমানে শরিফুল কোথায় আছে আমার জানা নেই। মানুষের কাছে শুনেছি বিদেশে চলে গিয়েছে। বিষয়টি কতটুকু সত্য আমার জানা নেই।"
‎শরিফুলের অপকর্মের বিষয়ে তার পিতা সরাজল মিয়া ও তার মায়ের সাথে যোগাযোগ করা হলে তারা প্রথমে উগ্র আচরণ করেন এবং শরিফুলের সাথে যোগাযোগ নেই ও কোথায় আছে এই বিষয়ে কোনো কিছু তারা জানে না বলে জানান।
‎পরবর্তীতে অভিযোগের বিষয়ে জানানো হলে তারা বলেন , "শরিফুল কোথায় কী করে আমরা কিছুই জানি না, কখনো আমাদের কিছু জানায় নি। মানুষের কাছ থেকে টাকা আনে আর সেগুলো ধারদেনা করে আমাদের পরিশোধ করতে হচ্ছে।"
‎শরিফুল বর্তমানে কোথায় আছে বা কী করছে এ সম্বন্ধে জানতে চাইলে তারা জানায়, " মাস তিনেক আগে হঠাৎ বাড়িতে এসে জানায় বিদেশে চলে যাবে৷ বাড়ি থেকে তার ব্যবহৃত সব কাপড় - চোপড়, কাগজপত্র সবকিছু নিয়ে বের হয়ে যায়। পরে একদিন মোবাইল করে জানায়, ঢাকা বিমানবন্দরে আছে বিদেশে চলে যাচ্ছে। সবাই যেন ঢাকায় আসে, সবার সাথে শেষবারের মতো দেখা করে যাবে।
‎আমরা শরিফুলের কথা মতো ঢাকায় পৌঁছে তাকে ফোন দিয়ে জানাই আমরা বিমানবন্দরে পৌঁছেছি । কিন্তু এর কিছুক্ষণ পরে সে আর মোবাইল রিসিভ করে না, এক পর্যায়ে মোবাইল বন্ধ করে দেয়। আমরা বিভিন্ন জায়গায় তাকে খোঁজার চেষ্টা করি, অবশেষে না পেয়ে বাড়িতে চলে আসি ।
‎দুইদিন পরে মোবাইল করে জানায় সে বিদেশে চলে গেছে। সত্য মিথ্যা আমরা জানি না। মাঝে মাঝে ফোন দিয়ে খোঁজ খবর নেয়, মাঝে মাঝে টাকা পয়সা পাঠায়। "
‎অভিযুক্ত শরিফুল ইসলামের সাথে মোবাইল মারফত যোগাযোগ করা হলে তিনি তার অপরাধের কথা স্বীকার করে সবার টাকা পরিশোধ করে দিবেন বলে জানান । তবে ভুক্তভোগীদের মধ্যে অনেকেই জানিয়েছে টাকা চাইতে গেলে হুমকি ধামকি দেওয়া হচ্ছে । সে তার মনমতো টাকা পাঠাবে, বেশি কিছু বলতে গেলে জানায়, পারলে মামলা করে টাকা আদায় করতে।
‎শরিফুলের অবস্থান পরিষ্কার না হলেও সর্বশেষ তাকে ময়মনসিংহ জেলার আনন্দমোহন কলেজের জসীম উদ্দীন হলে দেখা গিয়েছিল। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, শিক্ষার্থী পরিচয়ে অবৈধ ভাবে কিছুদিন অবস্থান করেছিল সেখানে ।
‎শরিফুলের প্রতারণার অভিযোগ নিয়ে ময়মনসিংহ কোতোয়ালি মডেল থানার প্রাথমিক ভাবে একটি অভিযোগ ও শেরপুর সদর থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে।
‎শীঘ্রই আদালতে মামলা রুজু করার প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে ভুক্তভোগীরা জানিয়েছেন । সেই সাথে এই প্রতারকের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করেছেন তারা ।
Không có bình luận nào được tìm thấy


News Card Generator