ডেনমার্কের প্রধানমন্ত্রী মেট ফ্রেডরিকসেন বলেছেন, ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এখন দেশের জন্য সবচেয়ে বড় সমস্যা। গাজা যুদ্ধের ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয়ের প্রেক্ষাপটে তিনি ইসরায়েলের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপের হুঁশিয়ারিও দিয়েছেন।
ডেনমার্কের প্রধানমন্ত্রী মেট ফ্রেডরিকসেনের সাম্প্রতিক মন্তব্য আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নতুন আলোচনার জন্ম দিয়েছে। শনিবার ডেনমার্কের শীর্ষস্থানীয় পত্রিকা জিল্যান্ডস-পোস্টেন-এ প্রকাশিত সাক্ষাৎকারে তিনি সরাসরি বলেন, “নেতানিয়াহু এখন নিজেই একটি সমস্যা।” ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) বর্তমান সভাপতিত্বে থাকা দেশ হিসেবে ডেনমার্ক ইসরায়েলের ওপর চাপ বাড়ানোর ইঙ্গিত দিয়েছে, যা তেল আবিবের কূটনৈতিক অবস্থানকে আরও জটিল করে তুলতে পারে।
ফ্রেডরিকসেন কঠোর সমালোচনায় জানান, ইসরায়েলি সরকার গাজা উপত্যকায় এমনভাবে যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে, যা “অতিরিক্ত দূর পর্যন্ত চলে গেছে।” তিনি বলেন, গাজার মানবিক পরিস্থিতি এখন একেবারেই “ভয়াবহ ও বিপর্যয়কর” পর্যায়ে পৌঁছেছে। শুধু তাই নয়, অধিকৃত পশ্চিম তীরে নতুন করে বসতি স্থাপনের পরিকল্পনা নিয়েও তিনি তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
ডেনমার্কের এই মধ্য-ডানপন্থী নেত্রী স্পষ্টভাবে জানান, তাদের লক্ষ্য হচ্ছে ইসরায়েলের ওপর চাপ বাড়ানো। যদিও এখনও ইইউ সদস্য রাষ্ট্রগুলোর পূর্ণ সমর্থন ডেনমার্ক পায়নি, তবুও তিনি বিশ্বাস করেন যে মানবিক বিপর্যয়ের কারণে ইউরোপের বহু দেশ দ্রুত কঠোর অবস্থান নিতে বাধ্য হবে।
তিনি আরও বলেন, রাজনৈতিক চাপ এবং নিষেধাজ্ঞা—সবকিছুই এখন আলোচনার টেবিলে আছে। এই নিষেধাজ্ঞা হতে পারে বসতি স্থাপনকারীদের বিরুদ্ধে, ইসরায়েলি সরকারের মন্ত্রীদের বিরুদ্ধে, কিংবা গোটা ইসরায়েলের বিরুদ্ধেই। এমনকি বাণিজ্য ও গবেষণা খাতেও এর প্রভাব পড়তে পারে বলে উল্লেখ করেন ফ্রেডরিকসেন।
তার ভাষায়, “আমরা কিছুই বাদ দিচ্ছি না। রাশিয়ার ক্ষেত্রে যেমন কঠোর নিষেধাজ্ঞা নেওয়া হয়েছিল, সেরকমভাবেই আমরা পরিকল্পনা করব। আমাদের লক্ষ্য হবে এমন জায়গায় আঘাত হানা, যা সবচেয়ে কার্যকর।”
তবে, তিনি এটাও পরিষ্কার করে দেন যে, এখন পর্যন্ত ডেনমার্ক ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়নি। অর্থাৎ, ডেনমার্ক রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক চাপের কৌশলকে অগ্রাধিকার দিচ্ছে, কিন্তু আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতির দিকে এখনও ঝুঁকছে না।
বিশ্লেষকদের মতে, ইউরোপীয় রাজনীতিতে এই মন্তব্য এক নতুন মাত্রা যোগ করেছে। এতদিন ইইউ দেশগুলোর বড় অংশ ইসরায়েলি নীতির বিরোধিতা করলেও নেতানিয়াহুকে সরাসরি “সমস্যা” আখ্যা দেওয়া হয়নি। ডেনমার্কের প্রধানমন্ত্রীর এই ঘোষণা কেবল ইসরায়েলের জন্যই নয়, বরং ইউরোপীয় কূটনীতির জন্যও বড় ধরনের বার্তা বহন করছে।
গাজার যুদ্ধ, হাজার হাজার মানুষের প্রাণহানি এবং পশ্চিম তীরে বসতি স্থাপনের নীতির কারণে বিশ্বজুড়ে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ক্ষোভ বাড়ছে। এই পরিস্থিতিতে ইসরায়েলের সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ মিত্র পশ্চিমা বিশ্বের ভেতর থেকেই নেতানিয়াহুকে সরাসরি দায়ী করা নিঃসন্দেহে তার জন্য বড় রাজনৈতিক সংকট ডেকে আনবে।
আন্তর্জাতিক মহলে এখন প্রশ্ন উঠছে—ইউরোপ কি সত্যিই ইসরায়েলের বিরুদ্ধে অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা দিতে প্রস্তুত? আর যদি দেয়, তবে এর সবচেয়ে বড় আঘাত কাদের গায়ে গিয়ে পড়বে—ইসরায়েলি সরকারের, নাকি দেশটির সাধারণ জনগণের?
তবে একটি বিষয় পরিষ্কার—ডেনমার্কের প্রধানমন্ত্রী মেট ফ্রেডরিকসেনের মন্তব্যের মধ্য দিয়ে বোঝা যাচ্ছে, আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নেতানিয়াহুর কূটনৈতিক একাকিত্ব ক্রমেই গভীর হচ্ছে।