জাতীয় পার্টি নেতা গিয়াস উদ্দিন চৌধুরী ও তার ছেলে রিয়াজ উদ্দিনের বিরুদ্ধে জমি দখল ও কোটি টাকার চাঁদাবাজির অভিযোগ তুলে ভুক্তভোগীরা জাতীয় প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেছেন। তারা প্রধান উপদেষ্টা ও স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার জরুরি হস্তক্ষেপ দাবি করেছেন।
নারায়ণগঞ্জে জমি দখল ও কোটি টাকার চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে জাতীয় পার্টির প্রভাবশালী নেতা গিয়াস উদ্দিন চৌধুরী ও তার ছেলে রিয়াজ উদ্দিন চৌধুরীর বিরুদ্ধে বিস্ফোরক অভিযোগ তুলেছেন ভুক্তভোগীরা। মঙ্গলবার (২৬ আগস্ট) দুপুরে জাতীয় প্রেস ক্লাবে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তারা এ অভিযোগ করেন।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন নারায়ণগঞ্জ নগরীর ১৮ নং ওয়ার্ড শহীদনগর ডিয়ারা কড়ইতলা বিক্রমপুর সোসাইটির ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলো। লিখিত বক্তব্য উপস্থাপন করে তারা জানান, বহু বছর আগে মুন্সীগঞ্জ জেলার পদ্মা নদী ভাঙনে সর্বস্ব হারানো প্রায় ২০০ হিন্দু ও মুসলিম পরিবার একত্রিত হয়ে বিক্রমপুর সোসাইটি গড়ে তোলে। সেসময় বৈধ রেজিস্ট্রি সম্পন্ন করে জমিতে ঘরবাড়ি নির্মাণ ও বসবাস শুরু করেছিলেন তারা।
কিন্তু হঠাৎ করে গত ৩০ জুলাই বিকেলে পরিস্থিতি ভয়ঙ্কর মোড় নেয়। অভিযোগ অনুযায়ী, গিয়াস উদ্দিন চৌধুরীর ছেলে রিয়াজ উদ্দিন চৌধুরী ২০-২৫ জন সহযোগী নিয়ে বিক্রমপুর সোসাইটিতে প্রবেশ করে। সেখানে গিয়ে তারা ভুক্তভোগী পরিবারগুলোর কাছে সরাসরি ২ কোটি ৪০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে। টাকা দিতে অস্বীকার করলে তাদের জমিতে জোরপূর্বক ‘বায়নাপত্রের সাইনবোর্ড’ ঝুলিয়ে দেওয়া হয়। শুধু তাই নয়, চলমান নির্মাণকাজ বন্ধ করে অফিসে তালা মেরে দেওয়া হয়। এ সময় সোসাইটির বাসিন্দাদের প্রাণনাশের হুমকিও দেওয়া হয় বলে অভিযোগ করেন ভুক্তভোগীরা।
তাদের বক্তব্যে আরও উঠে আসে, গিয়াস উদ্দিন ও তার ছেলে দীর্ঘদিন ধরেই প্রতারণা ও চাঁদাবাজির মতো অপকর্ম চালিয়ে আসছেন। তবে রাজনৈতিক প্রভাবশালী হওয়ার কারণে তারা সবসময় আইনের নাগালের বাইরে থেকে গেছেন। এই ঘটনা তার আরেকটি দৃষ্টান্ত মাত্র।
ভুক্তভোগীরা জানান, তারা এ ঘটনায় ইতোমধ্যে নারায়ণগঞ্জ সদর থানায় লিখিত অভিযোগ করেছেন। পাশাপাশি জেলা পুলিশ সুপারের অফিসেও আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করা হয়েছে। কিন্তু এখনো পর্যন্ত এ বিষয়ে কার্যকর কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি, যা তাদের আরও বেশি উদ্বেগের মধ্যে ফেলেছে।
তাদের দাবি, বিক্রমপুর সোসাইটির বৈধ মালিকদের জমিতে অবৈধভাবে টাঙানো সাইনবোর্ড দ্রুত অপসারণ করতে হবে। একই সঙ্গে চাঁদাবাজি ও দখলদারিত্বে জড়িত ব্যক্তিদের দ্রুত গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনা জরুরি।
সংবাদ সম্মেলনে তারা গণমাধ্যমের মাধ্যমে সরকারের প্রতি জোরালো আহ্বান জানান। বিশেষ করে বাংলাদেশ সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ও স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার হস্তক্ষেপ কামনা করেন। ভুক্তভোগীদের বক্তব্যে উঠে আসে—যদি দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া না হয়, তবে জমি দখল ও চাঁদাবাজির এই চক্র আরও বেপরোয়া হয়ে উঠবে, আর তাদের জীবনে নেমে আসবে চরম অশান্তি ও নিরাপত্তাহীনতা।
এ সময় তারা আরও অভিযোগ করেন, রাজনৈতিক প্রভাবশালী গিয়াস উদ্দিন ও তার পরিবার স্থানীয়ভাবে এক প্রকার আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে। সাধারণ মানুষ মুখ খুলতে সাহস পান না। ভুক্তভোগীরা বিশ্বাস করেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও প্রশাসন নিরপেক্ষভাবে ব্যবস্থা নিলে এই অবৈধ কর্মকাণ্ড বন্ধ করা সম্ভব।
সংবাদ সম্মেলনের শেষে তারা সবাই একবাক্যে বলেন, “আমরা কোনো রাজনৈতিক সংঘাত চাই না, শুধু আমাদের বৈধ সম্পত্তি ও জীবনের নিরাপত্তা চাই।