নারায়ণগঞ্জ বন্দরের কলাগাছিয়া এলাকায় ভোরের নিস্তব্ধতা ভাঙল নৌ-ডাকাতদের হামলায়। শনিবার (১৬ আগস্ট) ভোরে সংঘটিত এ ঘটনায় এক ডাকাত গণপিটুনিতে প্রাণ হারিয়েছে এবং দুইজন গুরুতর আহত হয়েছে। খবর পেয়ে নৌ-পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে আহতদের উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করে। আহতদের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানা গেছে। নিহত ডাকাতের মরদেহ উদ্ধার করে মর্গে পাঠানো হয়েছে।
বন্দর থানার ওসি লিয়াকত আলী গণমাধ্যমকে জানান, ভোরে ডাকাতরা ট্রলারযোগে সোনারগাঁয়ের শম্ভুপুরা এলাকায় ডাকাতি করার চেষ্টা করে। স্থানীয়রা বিষয়টি আঁচ করতে পেরে তাদের ধাওয়া করে। প্রাণ বাঁচাতে ডাকাতরা পালিয়ে বন্দরের কলাগাছিয়ায় ঢুকে পড়ে। কিন্তু সেখানেও স্থানীয়রা সংগঠিত হয়ে ডাকাতদের ঘেরাও করে ফেলে। এ সময় তিনজন ডাকাত গ্রামবাসীর হাতে ধরা পড়ে, বাকিরা পালিয়ে যায়।
ধৃত তিনজনকে স্থানীয়রা গণপিটুনি দিলে ঘটনাস্থলেই একজন মারা যায়। অপর দুইজন গুরুতর আহত অবস্থায় ছটফট করতে থাকলে পুলিশ এসে তাদের উদ্ধার করে দ্রুত হাসপাতালে পাঠায়। আহতদের অবস্থা এতই খারাপ যে তারা কিছু বলার মতো অবস্থায় নেই বলে জানিয়েছেন নৌ থানার ওসি মামুন পাঠান। তিনি আরও জানান, নিহতের পরিচয় শনাক্তের চেষ্টা চলছে এবং ঘটনাটি নিয়ে মামলার প্রস্তুতি চলছে।
স্থানীয়দের ভাষ্য অনুযায়ী, নদীপথে ডাকাতি এখন প্রায় নিয়মিত ঘটনায় পরিণত হয়েছে। ট্রলার, জেলে ও ব্যবসায়ীরা প্রায়ই ডাকাত দলের আক্রমণের শিকার হচ্ছেন। তবে আজকের ঘটনার পর এলাকাবাসীর মধ্যে স্বস্তি ফিরেছে। তারা মনে করছেন, জনতার ঐক্যই ডাকাতদের দমনের সবচেয়ে বড় অস্ত্র।
এদিকে একই দিনে নারায়ণগঞ্জ বন্দরে আরেকটি আলোচিত ইস্যুতে সংবাদ সম্মেলন করেছেন নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির সাবেক দপ্তর সম্পাদক এবং নাসিকের সাবেক কাউন্সিলর হান্নান সরকার। শনিবার বিকেল সাড়ে ৩টায় বন্দর প্রেসক্লাব মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত এ সংবাদ সম্মেলনে তিনি বন্দরে জোড়া খুনের ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত দাবি করেন।
লিখিত বক্তব্যে তিনি জানান, গত ২১ জুন বন্দরের শাহী মসজিদ হাফেজিবাগ এলাকায় আধিপত্য বিস্তার এবং অটোরিকশা স্ট্যান্ড দখল নিয়ে জাফর-রনি গ্রুপের সঙ্গে রহিম-জুয়ারী বাবু গ্রুপের সংঘর্ষ হয়। সংঘর্ষের জেরে রাত সাড়ে ৯টার দিকে বন্দর রেলওয়ে স্টেশনে কুদ্দস নামের এক ব্যক্তিকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। দেড় ঘণ্টা পর আবারো সিরাজউদ্দৌলা ক্লাব মাঠের সামনে মেহেদী হাসান নামের এক যুবককে নির্মমভাবে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। এ সময় তার বাড়িতেও হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করা হয়।
হান্নান সরকার দাবি করেন, এ ঘটনার সঙ্গে তার কোনো সম্পৃক্ততা নেই। কিন্তু রাজনৈতিকভাবে তাকে উদ্দেশ্যমূলকভাবে আসামি করা হয়েছে। তিনি কিছুদিন কারাভোগ করে বর্তমানে হাইকোর্ট থেকে জামিনে রয়েছেন। সংবাদ সম্মেলনে তিনি নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু তদন্তের দাবি জানান।
সংবাদ সম্মেলনে নাজির আহমেদ সুমন, শাহী মসজিদ পঞ্চায়েত কমিটির সদস্য ডালিম প্রধান, এম এ মান্নানসহ স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলেন।
নৌ-ডাকাত দমন ও বন্দরের জোড়া খুনের ঘটনায় একদিনেই দুটি বড় সংবাদ নারায়ণগঞ্জবাসীর মধ্যে আলোড়ন তুলেছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বলছে, এসব ঘটনায় জড়িতদের আইনের আওতায় আনতে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হবে।