দক্ষিণ ভারতের জনপ্রিয় নায়ক থালাপতি বিজয় এবার রাজনীতির ময়দানে। নতুন দল গঠন করে ২০২৬ সালের তামিলনাড়ু নির্বাচনে এককভাবে লড়াইয়ের ঘোষণা দিয়েছেন তিনি। ডিএমকে ও বিজেপির বিরুদ্ধে তার এই যুদ্ধ কি তামিল রাজনীতিতে নতুন সমীকরণ তৈরি করবে?
দক্ষিণ ভারতের জনপ্রিয় অভিনেতা থালাপতি বিজয় দীর্ঘদিন ধরেই রাজনীতিতে আসার ইঙ্গিত দিচ্ছিলেন। অবশেষে তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে নতুন দল ‘তামিলাগা ভেত্রি কাজাগাম’ (টিভিকে) ঘোষণা করেন এবং জানান ২০২৬ সালের তামিলনাড়ু বিধানসভা নির্বাচনে এককভাবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। এ ঘোষণার পর তামিল রাজনীতিতে যেন নতুন সমীকরণের সূচনা হয়েছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, দীর্ঘদিন ধরে ডিএমকে ও এআইএডিএমকে রাজনীতির মাঠে আধিপত্য ধরে রেখেছিল। এবার সেই জমাট ভাঙতে বিজয় নতুন শক্তি হয়ে উঠতে পারেন। এমনকি বিজেপির দক্ষিণ ভারতের রাজনীতিতেও এর প্রভাব পড়তে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।
জোসেফ বিজয় চন্দ্রশেখর, জনপ্রিয় নাম থালাপতি বিজয়, জন্ম ১৯৭৪ সালে চেন্নাইতে। ১৯৯২ সালে ‘নালাইয়া থিরপু’ ছবির মাধ্যমে নায়ক হিসেবে যাত্রা শুরু করলেও জনপ্রিয়তা পান ১৯৯৬ সালের ‘পুভে উনাকাগা’ চলচ্চিত্রে। এরপর ‘ঘিলি’, ‘পক্কিরি’, ‘কাধালুক্কু মারিয়াধাই’, ‘থুল্লাধা মনমুম থুল্লুম’-এর মতো সিনেমা তাঁকে দক্ষিণ ভারতের অন্যতম সুপারস্টার বানায়।
তার ভক্তরা তাকে ‘থালাপতি’ বা সেনাপতি নামে ডাকতে শুরু করে। তিনি শুধু নায়কই নন, মানুষের কাছে ধীরে ধীরে এক প্রেরণার প্রতীক হয়ে ওঠেন। এই জনপ্রিয়তাই তাকে রাজনৈতিক অঙ্গনে প্রবেশে আত্মবিশ্বাসী করেছে।
২০২৪ সালে তিনি ঘোষণা দেন যে বাকি দুটি ছবি শেষ করেই পুরোপুরি রাজনীতিতে যোগ দেবেন। তার শেষ সিনেমা ‘জানানায়াগন’ মুক্তি পাবে ২০২৬ সালের জানুয়ারিতে, নির্বাচনের ঠিক আগেই। বিশ্লেষকরা মনে করেন, এটাই হতে পারে বিজয়ের জনপ্রিয়তাকে ভোটে রূপান্তরিত করার কৌশল।
২০০৯ সালে তার ভক্তদের উদ্যোগে ‘বিজয় মাক্কাল ইয়াক্কাম’ (বিএমআই) নামের সংগঠন গড়ে ওঠে। শুরুতে এটি জনকল্যাণমূলক কাজে যুক্ত থাকলেও ধীরে ধীরে রাজনৈতিক রূপ নেয়। ২০২১ সালের স্থানীয় নির্বাচনে তাদের প্রার্থীরা বিপুল সাফল্য পেয়ে বিজয়ের রাজনৈতিক সম্ভাবনাকে স্পষ্ট করে তোলে।
এই সাফল্যের ধারাবাহিকতায় ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে দল ঘোষণা করেন। দলের নাম দেন ‘তামিলাগা ভেত্রি কাজাগাম’ (টিভিকে)। স্লোগান ঘোষণা করেন— “জন্মের দিক দিয়ে সবাই সমান।”
২০২৪ সালের অক্টোবরে বিকরাভান্ডিতে দলের প্রথম সম্মেলনে হাজির হয় ৮ লাখেরও বেশি মানুষ। এত বড় সমাবেশ প্রমাণ করে, সিনেমার জনপ্রিয়তা এখন রাজনীতির শক্তি হয়ে উঠছে। এরপর মাডুরাইতে আরেক সম্মেলনে বিজয় বলেন— “আমরা ফ্যাসিবাদী বিজেপি ও বিষাক্ত ডিএমকের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করছি।
তিনি আরও বলেন, “সিংহ কখনো ভয় পায় না। সিংহ শুধু শিকারের জন্য বেরোয়, বিনোদনের জন্য নয়।” এই বক্তব্যে তিনি ইঙ্গিত দেন, তিনি হালকা প্রতিযোগিতায় আসেননি; বরং প্রকৃত রাজনৈতিক পরিবর্তনের জন্যই নেমেছেন।
বিজয়ের রাজনৈতিক টার্গেট স্পষ্ট— ডিএমকে এবং বিজেপি। তিনি ঘোষণা দিয়েছেন, তার দল কোনো জোটে যাবে না। ২০২৬ সালের নির্বাচনে প্রতিটি আসনে তাদের নিজস্ব প্রার্থী থাকবে। তিনি নিজে মাডুরাই ইস্ট আসন থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, তামিলনাড়ুতে বহু বছর পর প্রথমবারের মতো একটি নতুন শক্তি মাঠে নামছে, যা রাজনীতির ক্ষমতার ভারসাম্য পরিবর্তন করতে পারে। বিজয়ের জনপ্রিয়তা ও তার ফ্যান ক্লাবের সংগঠিত শক্তি যদি ভোটে রূপান্তরিত হয়, তাহলে ইতিহাস গড়তে পারে টিভিকে।
নায়ক থেকে নেতা হওয়ার এই যাত্রা নিঃসন্দেহে তামিল রাজনীতির সবচেয়ে আলোচিত অধ্যায় হয়ে উঠেছে। ২০২৬ সালের নির্বাচনই প্রমাণ করবে, থালাপতি বিজয় শুধু সিনেমার সুপারস্টার নন, রাজনীতিতেও কি তিনি নতুন ইতিহাস গড়তে পারবেন কিনা। তবে ইতিমধ্যেই তামিলনাড়ুর রাজনীতি তার নাম ঘিরে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে।