close

ভিডিও দেখুন, পয়েন্ট জিতুন!

মুরাদনগরে গণপিটুনিতে তিনজনকে হত্যা, গ্রেফতার ৮

আই নিউজ বিডি ডেস্ক  avatar   
আই নিউজ বিডি ডেস্ক
কুমিল্লার মুরাদনগরে মোবাইল চুরি সন্দেহে গণপিটুনিতে নিহত একই পরিবারের তিনজন। মামলা হয়েছে ৬৩ জনের বিরুদ্ধে, গ্রেফতার ৮। এলাকায় থমথমে অবস্থা, সেনা ও র‌্যাবের অভিযান চলছে।..

কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার কড়ইবাড়ি গ্রামে সংঘটিত নৃশংস গণপিটুনিতে প্রাণ হারিয়েছেন একই পরিবারের তিনজন সদস্য। ঘটনাটি মোবাইল ফোন চুরিকে কেন্দ্র করে শুরু হলেও, ভেতরে জমে থাকা দীর্ঘদিনের ক্ষোভ ও উত্তেজনার ফলেই এমন ভয়াবহ সহিংসতা ঘটে বলে জানা গেছে।

নিহতরা হলেন—কড়ইবাড়ি গ্রামের বাসিন্দা খলিলুর রহমানের স্ত্রী রোকসানা বেগম ওরফে রুবি (৫৩), তার ছেলে রাসেল মিয়া (৩৫) এবং মেয়ে তাসপিয়া আক্তার ওরফে জোনাকি (২৯)। এই হামলায় গুরুতর আহত হয়েছেন একই পরিবারের আরেক সদস্য রুমা আক্তার (২৮), যিনি বর্তমানে ঢাকায় চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

ঘটনার পর নিহত রুবির মেয়ে রিক্তা আক্তার বাদী হয়ে বাংগরা বাজার থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলায় আকুবপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শিমুল বিল্লাহ শিমুলসহ মোট ৩৮ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে এবং অজ্ঞাত ২৫ জনসহ মোট ৬৩ জনকে আসামি করা হয়েছে।

এ ঘটনায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। শুক্রবার রাতে সেনাবাহিনীর ক্যাপ্টেন আদিল শাহরিয়ারের নেতৃত্বে একটি দল অভিযান চালিয়ে আকুবপুর ইউনিয়নের পীরকাশিমপুর এলাকা থেকে মো. নাজিম উদ্দিন বাবুল ও মো. সবির আহমেদকে গ্রেফতার করে। তারা এই মামলার ১৮ ও ১৯ নম্বর আসামি।

পাশাপাশি, র‌্যাব-১১ এর একটি বিশেষ দল রাজধানী ঢাকা থেকে অভিযান চালিয়ে আরও ৬ জন আসামিকে গ্রেফতার করেছে। সব মিলিয়ে এখন পর্যন্ত ৮ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন বাংগরা বাজার থানার ওসি মাহফুজুর রহমান।

গণপিটুনির ভয়াবহতা এবং এর পরবর্তী গ্রেফতার অভিযানকে ঘিরে এলাকায় চরম আতঙ্ক ও উত্তেজনা বিরাজ করছে। থানা পুলিশ, র‌্যাব ও সেনাবাহিনীর টহল জোরদার করা হয়েছে। গ্রামে গ্রামে চলছে সন্দেহভাজনদের ধরতে নজরদারি। স্থানীয়দের মধ্যে এখনও আতঙ্ক কাটেনি।

স্থানীয় একাধিক বাসিন্দা জানান, নিহত রুবির পরিবারটি দীর্ঘদিন ধরে এলাকায় মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত ছিল। রুবি ও তার সন্তানরা এলাকায় সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি ও ভয়ভীতি প্রদর্শনের মাধ্যমে একটি প্রভাবশালী চক্র গড়ে তোলে। তাদের ভয়ে কেউ মুখ খুলতে সাহস পেত না। এদের বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ থাকলেও প্রমাণের অভাবে কেউ কিছু করতে পারত না।

ঘটনার দিন, বৃহস্পতিবার (৩ জুলাই) সকাল ৯টার দিকে মোবাইল ফোন চুরির একটি গুজব রটে। এরপর উত্তেজিত গ্রামবাসী রুবি ও তার সন্তানদের ঘিরে ফেলে। একপর্যায়ে শুরু হয় বীভৎস গণপিটুনি, যা তাদের মৃত্যুর কারণ হয়ে দাঁড়ায়।

মুরাদনগর উপজেলা প্রশাসন জানিয়েছে, ঘটনার তদন্ত চলছে। অপরাধীদের দ্রুত বিচারের আওতায় আনা হবে এবং কেউই ছাড় পাবে না। প্রশাসন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে সর্বোচ্চ সর্তক রয়েছে।

এই গণপিটুনির ঘটনা আবারো বাংলাদেশের গ্রামীণ সমাজে বিচারবহির্ভূত শাস্তি প্রথার ভয়াবহতা সামনে নিয়ে এসেছে। প্রশাসনের উচিত হবে এই ধরণের আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়ার প্রবণতা কঠোরভাবে দমন করা এবং বিচারিক প্রক্রিয়ায় জনগণের আস্থা ফিরিয়ে আনা।

コメントがありません