বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান বলেছেন, মুক্তিযুদ্ধের সময় আওয়ামী লীগ পালিয়ে গিয়েছিল, আর স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছিলেন জিয়াউর রহমান। তিনি দাবি করেন, সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমেই গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনা সম্ভব।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম নিয়ে রাজনৈতিক বিতর্ক নতুন করে আলোচনায় এসেছে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খানের বক্তব্যের মাধ্যমে। সোমবার (২৫ আগস্ট) রাজধানীতে জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দলের ৩৩তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে তিনি সাংবাদিকদের সাথে আলাপকালে আওয়ামী লীগের ভূমিকা নিয়ে তীব্র সমালোচনা করেন।
ড. মঈন খান বলেন, “মুক্তিযুদ্ধের সময় সঠিক দায়িত্ব পালনে আওয়ামী লীগ সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছিল। তারা সে সময় পালিয়ে গিয়েছিল। অথচ স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছিলেন জিয়াউর রহমান, যার নেতৃত্বেই মুক্তিযোদ্ধারা ঐক্যবদ্ধ হয়েছিল।”
তিনি আরও উল্লেখ করেন, বাংলাদেশের গণতন্ত্র আজও পূর্ণরূপে পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হয়নি। এ অবস্থায় নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের বিকল্প নেই। ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠিতব্য জাতীয় নির্বাচনে জনগণ মুখিয়ে আছে জানিয়ে তিনি বলেন, “ইতোমধ্যেই নির্বাচন কমিশন জাতীয় নির্বাচনের সম্ভাব্য তারিখ ঘোষণা করেছে। এতে দেশের মানুষের ভোট দেয়ার প্রত্যাশা পূরণ হবে। জনগণের ভোটই হবে প্রকৃত গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার একমাত্র মাধ্যম।”
বিএনপি নেতা দাবি করেন, জনগণের স্বাধীন মতামত প্রকাশের একমাত্র পথ নির্বাচন, আর সেই নির্বাচনের মাধ্যমেই মানুষ তাদের পছন্দের ৩০০ প্রতিনিধিকে বেছে নিতে পারবে। “বাংলাদেশে যদি সত্যিকার গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে হয়, তবে একটি অবাধ, নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু নির্বাচন ছাড়া অন্য কোনো উপায় নেই,” বলেন তিনি।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত নেতাকর্মীরা বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক রাষ্ট্রপতি শহীদ জিয়াউর রহমানের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। এসময় তার সমাধিতে ফুলেল শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ ও দোয়া অনুষ্ঠিত হয়।
ড. মঈন খানের এ বক্তব্য রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন করে আলোড়ন তুলেছে। একদিকে তিনি আওয়ামী লীগের মুক্তিযুদ্ধকালীন ভূমিকার সমালোচনা করেছেন, অন্যদিকে জিয়াউর রহমানকে স্বাধীনতার ঘোষক হিসেবে উপস্থাপন করেছেন। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, নির্বাচনের প্রাক্কালে এ ধরনের বক্তব্য রাজনৈতিক বিতর্ককে আরও তীব্র করবে।
এছাড়া, বিএনপির ভেতরে ও বাইরে আলোচনা চলছে যে, এ বক্তব্য দলীয় নেতাকর্মীদের মধ্যে নতুন উদ্দীপনা যোগাবে। মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতার ইতিহাস নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যে মতপার্থক্য বিদ্যমান। ফলে মঈন খানের বক্তব্য আবারো সেই পুরোনো বিতর্ককে সামনে নিয়ে এসেছে।
বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে মুক্তিযুদ্ধের সময়কার নেতৃত্ব ও স্বাধীনতার ঘোষণার প্রশ্ন দীর্ঘদিন ধরে আলোচিত হয়ে আসছে। আওয়ামী লীগ দাবি করে, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানই ছিলেন স্বাধীনতার প্রকৃত স্থপতি। অন্যদিকে বিএনপি জিয়াউর রহমানকে স্বাধীনতার ঘোষক হিসেবে উপস্থাপন করে থাকে। মঈন খানের বক্তব্য সেই ঐতিহাসিক দ্বন্দ্বকেই নতুনভাবে উসকে দিলো বলে অনেকে মনে করছেন।