ভোলায় অনুষ্ঠিত সমাবেশে এনসিপি আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, মুজিববাদী আদর্শ ৫০ বছর ধরে জাতিকে বিভক্ত করেছে। জুলাই অভ্যুত্থান ছিল সেই বিভাজনের বিরুদ্ধে একটি ঐতিহাসিক প্রতিরোধ।
ভোলায় এক জনসভায় জাতীয় নাগরিক কমিটির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, মুজিববাদী আদর্শ গত ৫০ বছর ধরে বাংলাদেশের সমাজ ও রাজনীতিকে বিভাজনের পথে ঠেলে দিয়েছে। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ‘মুক্তিযোদ্ধা বনাম রাজাকার’ নামক বিভাজনের এক বিষাক্ত রাজনীতি গড়ে তোলা হয়, যা জাতীয় ঐক্যকে ধ্বংস করে দেয়।
তিনি আরও বলেন, ১৫ জুলাই একটি ঐতিহাসিক দিন। গত বছর এই দিনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা আমাদের নারী নেতাকর্মীদের ওপর নির্মম নির্যাতন চালায়। আমরা সেই দুঃসহ ঘটনার বিরুদ্ধে শুধু প্রতিবাদই করিনি, বরং সেই নির্যাতনের জবাব দিয়েছি গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে। ২০২৪ সালের সেই অভ্যুত্থান ছিল বিভাজনের রাজনীতির বিরুদ্ধে এক ঐতিহাসিক ধাক্কা।
মঙ্গলবার (১৫ জুলাই) দুপুর ২টায় ভোলা প্রেস ক্লাব চত্বরে আয়োজিত একটি বিক্ষোভ ও জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
নাহিদ ইসলাম বলেন, জুলাই আন্দোলন ছিল মর্যাদাকেন্দ্রিক, বৈষম্যবিরোধী এবং এক নতুন বাংলাদেশ গড়ার সংকল্পের প্রকাশ। আমরা মাফিয়াচক্রের বিরুদ্ধে, দলীয় সুবিধাবাদীদের বিরুদ্ধে এবং দুঃশাসনের বিরুদ্ধে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার লড়াই চালিয়ে যাচ্ছি।
তিনি বলেন, আমরা একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক বাংলাদেশ চাই—যেখানে শ্রমিক, কৃষক, মধ্যবিত্ত, এবং সাধারণ জনগণই হবে রাষ্ট্রের মূল চালিকা শক্তি। এখানে কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠী রাজনীতি ও রাষ্ট্রকে জিম্মি করে রাখতে পারবে না।
ভোলার মানুষ যুগের পর যুগ উন্নয়ন থেকে বঞ্চিত — এ কথা উল্লেখ করে নাহিদ ইসলাম বলেন, ভোলার গ্যাস সম্পদ থাকা সত্ত্বেও এখানকার জনগণ সেই সুবিধা থেকে বঞ্চিত। আধুনিক যুগেও এই জেলার মানুষকে স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষাসেবা, এমনকি গ্যাসের মতো মৌলিক সুবিধা থেকেও বঞ্চিত করা হয়েছে। এখানের হাসপাতাল কার্যত অকার্যকর, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অবস্থা করুণ। আমরা এই বৈষম্যের অবসান ঘটাতে এসেছি।
তিনি আরও বলেন, ভোলাকে আমরা একটি মর্যাদাপূর্ণ, স্বনির্ভর, ও সমৃদ্ধ জেলায় পরিণত করতে চাই। এখানে আর ঢাকার সঙ্গে দূরত্ব থাকবে না — মানসিক ও বাস্তব উভয় অর্থেই।
সভায় আরও বক্তব্য রাখেন এনসিপির মুখ্য সংগঠক (উত্তরাঞ্চল) সারজিস আলম, সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক সামান্তা শারমিন, শহীদ হাসানের পিতা মনির হোসেন, আইনজীবী রাসেল, ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সমন্বয়ক সালমা আক্তার, ফারজানা আহমেদ, আব্দুল্লাহ আল মামুন, বরিশাল অঞ্চলের যুগ্ম সমন্বয়ক ফয়সাল মাহমুদ শান্ত, ভোলা জেলা সমন্বয়কারী মেহেদী হাসান শরীফ ও ইয়াসির আরাফাত, মাকসুদুর রহমান প্রমুখ।
এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন—দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আব্দুল্লাহ, সিনিয়র যুগ্ম সদস্যসচিব ডা. তাসনিম জারা, যুগ্ম সদস্যসচিব মশিউর রহমান, যুগ্ম মুখ্য সংগঠক ডা. মাহমুদা আক্তার মিতু এবং যুগ্ম সমন্বয়ক আরিফুর রহমান তুহিনসহ কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় পর্যায়ের অসংখ্য নেতাকর্মী।
এই সমাবেশটি ছিল শুধুমাত্র স্মৃতিচারণ নয়, বরং এক নতুন রাজনৈতিক প্রতিজ্ঞা—বাংলাদেশের নতুন ভবিষ্যতের ঘোষণা।