বাংলাদেশের ধর্মীয় অঙ্গনে মুফতি কাজী মোহাম্মদ ইব্রাহিম একটি পরিচিত নাম। তবে তার পরিচিতি কেবল ধর্মীয় বক্তা হিসেবে সীমাবদ্ধ নয়; বরং তিনি বিভিন্ন সময় বিতর্কিত বক্তব্য, রাজনৈতিক চাটুকারিতা এবং ক্ষমতাসীনদের প্রতি অতিরিক্ত আনুগত্য প্রদর্শনের জন্য সমালোচিত হয়েছেন।
২০২১ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর গভীর রাতে রাজধানীর মোহাম্মদপুরের বাসা থেকে মুফতি ইব্রাহিমকে গ্রেফতার করে ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ (ডিবি)। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল, তিনি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে উসকানিমূলক ও বিভ্রান্তিকর বক্তব্য প্রচার করেছেন, যা দেশের শান্তি-শৃঙ্খলা বিঘ্নিত করতে পারে। এছাড়া, তিনি করোনাভাইরাসের টিকা নিয়ে অবৈজ্ঞানিক ও বিভ্রান্তিকর মন্তব্য করে জনমনে ভীতি সঞ্চার করেন। এই মামলায় তিনি দোষ স্বীকার করায় আদালত তাকে এক বছর তিন মাসের কারাদণ্ড প্রদান করেন, যা তিনি আগে থেকেই কারাভোগ করেছেন ।
এক ইসলামিক ওয়াজ মাহফিলে মুফতি কাজী ইব্রাহিম অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে নিয়ে মন্তব্য করেন, যা দেশজুড়ে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করে। তিনি বলেন:
“ড. ইউনূস নির্বাচিত হয়ে আসেননি, মনোনীত হয়ে এসেছেন। এখন আর নির্বাচিত হওয়ার প্রয়োজন নেই। আল্লাহ তাঁকে মনোনীত করে বসিয়ে দিয়েছেন। আমরা সবাই তাঁকে মনের সমর্থন দিয়ে দিয়েছি, ভোট দিয়েছি হৃদয় থেকে। এই নির্বাচন হয়েছে আসমানে।”
এই বক্তব্যে তিনি স্পষ্টভাবে আধ্যাত্মিক এক ব্যাখ্যার মাধ্যমে ইউনূসের নেতৃত্বকে বৈধতা দেওয়ার চেষ্টা করেন। তার ভাষায়,
“আসমানের মনোনয়ন আর জমিনের সমর্থন—এই দুইয়ের সমন্বয়ে খেলাফত হয়, নবুয়ত হয়। সব নবীই আল্লাহর মনোনীত ছিলেন, কেউই ভোটে নির্বাচিত হননি।”
এই ধরনের বক্তব্য রাজনৈতিক চাটুকারিতার এক নতুন দৃষ্টান্ত এবং ধর্মীয় অনুভূতির অপব্যবহার বলে সমালোচিত হয়েছে। অনেকে বলছেন, এটি একটি ব্যক্তিকে ঈশ্বরীয় বৈধতা প্রদান করে জনগণকে বিভ্রান্ত করার প্রচেষ্টা।
মুফতি ইব্রাহিমের রাজনৈতিক চাটুকারিতার নজিরও রয়েছে। তিনি বিভিন্ন সময় ক্ষমতাসীন দলের প্রতি অতিরিক্ত আনুগত্য প্রদর্শন করেছেন। একটি ওয়াজ মাহফিলে তিনি বলেন, “আমি দেশ, সরকার ও বঙ্গবন্ধুর পক্ষে কথা বলেছি। আমি তাদের বিরুদ্ধে কথা বলিনি” । এই ধরনের বক্তব্য তার রাজনৈতিক পক্ষপাতিত্বের ইঙ্গিত দেয়।
মুফতি ইব্রাহিম বিভিন্ন সময় তার ওয়াজ মাহফিলে অবৈজ্ঞানিক ও বিভ্রান্তিকর মন্তব্য করেছেন, যা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সমালোচিত হয়েছে। তিনি দাবি করেন, করোনাভাইরাসের টিকা নেওয়ার ফলে নারীদের দাড়ি গজাচ্ছে এবং পুরুষদের কণ্ঠস্বর নারীকণ্ঠে পরিবর্তিত হচ্ছে। এছাড়া, তিনি বলেন, ইংরেজ কবি উইলিয়াম শেক্সপিয়ারের আসল নাম ছিল ‘শেখ যুবায়ের’। এই ধরনের মন্তব্য তার বক্তব্যের বিশ্বাসযোগ্যতা প্রশ্নবিদ্ধ করে ।
মুফতি ইব্রাহিমের বক্তব্য ও কর্মকাণ্ড থেকে বোঝা যায়, তিনি ধর্মীয় নেতৃত্বের আড়ালে রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করেছেন। তিনি বিভিন্ন সময় ক্ষমতাসীনদের প্রশংসা করে এবং বিরোধীদের সমালোচনা করে রাজনৈতিক সুবিধা নেওয়ার চেষ্টা করেছেন। এটি তার চাটুকারিতার একটি দৃষ্টান্ত।
মুফতি কাজী ইব্রাহিমের কর্মকাণ্ড বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, তিনি ধর্মীয় বক্তা হিসেবে পরিচিত হলেও তার বক্তব্য ও কর্মকাণ্ডে রাজনৈতিক চাটুকারিতার প্রবণতা স্পষ্ট। তিনি ধর্মীয় মঞ্চকে ব্যবহার করে রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করেছেন এবং অবৈজ্ঞানিক ও বিভ্রান্তিকর মন্তব্য করে জনমনে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করেছেন। এই ধরনের কর্মকাণ্ড সমাজে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে এবং ধর্মীয় নেতাদের প্রতি মানুষের আস্থা কমিয়ে দেয়।
 'আই নিউজ বিডি' অ্যাপ
  'আই নিউজ বিডি' অ্যাপ
  
  
 
		 
				 
			



















 
					     
			 
						 
			 
			 
			 
			 
			 
			