কুতুব উদ্দিন আহমেদ (করিমগঞ্জ প্রতিনিধি, কিশোরগঞ্জ)
কিশোরগঞ্জ জেলার করিমগঞ্জ উপজেলার নোয়াবাদ ইউনিয়নের উত্তর পাড়াবালিয়া গ্রামের বাসিন্দা আরিফ হোসাইন (১৯) এক মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুবরণ করেছেন। তার এই অকাল মৃত্যুতে গোটা এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে। আরিফ ছিলেন জনাব মোঃ নজরুল ইসলামের তৃতীয় পুত্র এবং একজন নিবেদিতপ্রাণ মানবিক রক্তযোদ্ধা।
প্রত্যক্ষদর্শী ও পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, ৩০ মে বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে আরিফ হোসাইন তার ব্যক্তিগত মোটরসাইকেলে করিমগঞ্জ শহরের উদ্দেশ্যে রওনা দেন। পথিমধ্যে পূর্ব জাফরাবাদ খালপাড় মসজিদ ও বেপারীপাড়া মধ্যবর্তী স্থানে একটি মাইক্রোবাসের সঙ্গে সংঘর্ষে গুরুতর আহত হন তিনি। দুর্ঘটনার তীব্রতায় আরিফ মারাত্মকভাবে আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে রাস্তায় লুটিয়ে পড়েন।
স্থানীয়রা তাকে তাৎক্ষণিকভাবে উদ্ধার করে আব্দুল হামিদ মেডিকেল কলেজে নিয়ে যান। প্রাথমিক চিকিৎসার পর অবস্থার অবনতি হলে তাকে কিশোরগঞ্জ শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এবং পরে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার করা হয়। তবে ময়মনসিংহ মেডিকেলে প্রয়োজনীয় আইসিইউ সুবিধা না থাকায় দ্রুত ঢাকার নিউরোসায়েন্স ইনস্টিটিউটে স্থানান্তর করা হয়। কিন্তু সেখানে পৌঁছানোর কিছুক্ষণের মধ্যেই ডাক্তাররা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
মৃত্যুকালে তিনি বাবা-মা, দুই ভাই, এক বোন ও অসংখ্য আত্মীয়স্বজন ও শুভানুধ্যায়ী রেখে গেছেন। স্থানীয় ইউপি সদস্য মো. জাহাঙ্গীর আলম জানান, "মাত্র ১৯ বছর বয়সেই আরিফ হোসাইন ছিলেন একজন নিবেদিতপ্রাণ রক্তদাতা। তিনি স্থানীয় বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের সাথে যুক্ত থেকে অসুস্থ মানুষের পাশে দাঁড়াতেন। কোনো রোগীর রক্তের প্রয়োজন হলে, সময়-জায়গার তোয়াক্কা না করে রক্ত দিতে ছুটে যেতেন। তাঁর ব্যবহারে ছিলেন ভদ্র, বিনয়ী ও সদা হাস্যোজ্জ্বল। এলাকার তরুণদের মাঝে তিনি ছিলেন প্রেরণার উৎস।"
আরিফ হোসাইন করিমগঞ্জ সরকারি কলেজের মানবিক শাখার এইচ. এস. সি. পরীক্ষার্থী ছিলেন এবং ২৬ জুন থেকে পরীক্ষায় অংশগ্রহণের কথা ছিল। তার এই অকাল মৃত্যুতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শোক প্রকাশ করেছেন অনেকেই। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, শিক্ষকমণ্ডলী এবং যুবসমাজ আরিফের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন।
এই দুর্ঘটনা সমাজের জন্য একটি বড় ধাক্কা হিসেবে দেখা দিয়েছে। আরিফের মতো তরুণদের মৃত্যু কেবল একটি পরিবারের নয়, পুরো সমাজের জন্য অপূরণীয় ক্ষতি। তার মতো তরুণদেরকে সমাজে আরও প্রয়োজন ছিল। স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে এই দুর্ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের আশ্বাস দেওয়া হয়েছে।