মুক্তিযুদ্ধের সত্য বিকৃতির অভিযোগ তুলে বিএনপি নেতা ফজলুর রহমান প্রকাশ্যে জামায়াত-শিবিরকে ‘কালো শক্তি’ আখ্যা দিয়েছেন। জুলাই গণআন্দোলনের ফসল দখলের চক্রান্ত নিয়েও তিনি কঠোর মন্তব্য করেন।
বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও মুক্তিযোদ্ধা ফজলুর রহমান এক চাঞ্চল্যকর মন্তব্য করে রাজনৈতিক মহলে আলোচনার ঝড় তুলেছেন। তিনি বলেছেন, মৃত্যু সামনে দাঁড়িয়ে গেলেও তিনি মুক্তিযুদ্ধের সত্যকে বিকৃত হতে দেবেন না। এজন্যই তিনি খোলাখুলিভাবে জামায়াতে ইসলামী ও তাদের ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্রশিবিরকে ‘কালো শক্তি’ আখ্যা দিয়েছেন এবং তাদের নতুন ষড়যন্ত্রের কথা প্রকাশ্যে তুলে ধরেছেন।
ফজলুর রহমান বলেন, ৫ আগস্টের ঘটনাটি কেবলই একটি ‘ষড়যন্ত্র’। এর জন্য দায়ী একমাত্র শক্তি হলো জামায়াত-শিবির এবং তাদের সহযোগী ন্যাশনালিস্ট কনজারভেটিভ পার্টি (এনসিপি)। তিনি উল্লেখ করেন, “জুলাই মাসের গণআন্দোলনের পর থেকে জামায়াত-শিবির ও এনসিপি নতুন বর্ণনা দিতে শুরু করে—১৯৪৭ ছিল প্রথম স্বাধীনতা, ২০২৪ হলো দ্বিতীয় স্বাধীনতা, আর ১৯৭১ নাকি ছিল কেবল ভাইয়ে ভাইয়ে ঝগড়া। এ ধরনের অপপ্রচার মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে আমার কাছে এতটাই যন্ত্রণাদায়ক ছিল যে, মৃত্যুর মুখোমুখি দাঁড়িয়ে সত্যকে প্রকাশ করাই আমার কর্তব্য মনে করেছি।”
তিনি বলেন, দেশের মানুষ এখন বুঝতে শুরু করেছে যে জুলাই আন্দোলনের দুটি রূপ ছিল। প্রথমটি ছিল বিএনপি ও জাতীয়তাবাদী শক্তির নেতৃত্বে ফ্যাসিবাদী সরকার পতনের গণআন্দোলন। আরেকটি ছিল জামায়াত-শিবিরের ষড়যন্ত্রমূলক প্রভাব, যারা গণআন্দোলনের ফসল কুক্ষিগত করে নতুন করে স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে আঘাত করতে চাইছে।
ফজলুর রহমান দাবি করেন, জামায়াত এখন দেশের প্রশাসন, অর্থনীতি, এমনকি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ওপরও অঘোষিত নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেছে। তিনি বলেন, “এই কালো শক্তি কেবল রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রেই থেমে নেই, তারা নিজেদের আর্থিক ও সাংগঠনিক ক্ষমতা দিয়ে রাষ্ট্রযন্ত্রের ভেতরে ঢুকে পড়েছে।”
এক টকশোতে দেওয়া বক্তব্যে তিনি আরও বলেন, “৫ আগস্টের ঘটনার নেপথ্যে রয়েছে জামায়াতে ইসলাম ও তাদের অগ্রবর্তী শক্তি ইসলামী ছাত্রশিবির। আমরা ভেবেছিলাম, ৫৪ বছর পর তারা তাদের অতীতের গ্লানি ভুলে গেছে। কিন্তু দেখা গেল তারা আবারও ষড়যন্ত্রের পথ বেছে নিয়েছে।”
তিনি জামায়াতকে অভিযুক্ত করেন দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে নিজেদের প্রভাব বিস্তারের জন্য। তাঁর মতে, জামায়াতের এখন পর্যাপ্ত অর্থ, সংগঠন এবং বৈদেশিক সমর্থন রয়েছে। ফলে দলটি অপ্রাতিষ্ঠানিকভাবে ক্ষমতার অংশীদার হয়ে উঠেছে। তবে তারা জানে নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসা সম্ভব নয়। কারণ বিএনপি তাদের প্রধান বাধা।
ফজলুর রহমান বলেন, “বিএনপি নির্বাচনে অংশ নিলে দুই-তৃতীয়াংশ ভোট পেয়ে জিতবে—এটা জামায়াতও জানে। তাই তারা নির্বাচন চায় না। বরং তারা চায় বিএনপিকে ধ্বংস করতে, যাতে গণতান্ত্রিক শক্তি দুর্বল হয়।”
এই বক্তব্য প্রকাশ্যে আসার পর বিএনপির ভেতরেও আলোচনার ঝড় ওঠে। দলের পক্ষ থেকে তাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হলেও জবাবে তিনি দৃঢ়ভাবে নিজের অবস্থান ব্যাখ্যা করেন। তিনি পুনরায় জানান, সত্য প্রকাশ করাই ছিল তার দায়িত্ব, কারণ মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃত হলে দেশের ভবিষ্যৎ অন্ধকারে নিমজ্জিত হবে।
বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে ফজলুর রহমানের এই বক্তব্য নতুন করে বিতর্ক তৈরি করেছে। কেউ কেউ মনে করছেন, বিএনপি নেতার এই প্রকাশ্য মন্তব্য দলটির জন্য কৌশলগত সমস্যার কারণ হতে পারে। আবার অনেক বিশ্লেষকের মতে, মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ঘিরে তার এই স্পষ্ট অবস্থান রাজনৈতিক পরিসরে নতুন আলোচনার জন্ম দেবে।