তামিল সুপারস্টার থালাপতি বিজয় এবার রাজনীতির মঞ্চে নেমে বিজেপিকে সরাসরি ফ্যাসিবাদী আখ্যা দিলেন। মাদুরাইয়ে ১৫ লাখ মানুষের সমাবেশে তার ঘোষণা জাতীয় রাজনীতিতে নতুন সমীকরণ তৈরি করেছে।
ভারতের রাজনীতিতে এক নতুন ঝড় বইতে শুরু করেছে, যার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছেন দক্ষিণ ভারতের জনপ্রিয় সুপারস্টার থালাপতি বিজয়। দীর্ঘদিন সিনেমার পর্দায় তামিল সমাজের মানুষের মনে রাজত্ব করার পর এবার তিনি সরাসরি রাজনীতির ময়দানে নেমে বিজেপির বিরুদ্ধে এক তীব্র লড়াই ঘোষণা করলেন।
গত বৃহস্পতিবার মাদুরাইয়ে তার দল তামিলাগা ভেত্রি কাজগাম (টিভিকে)-এর দ্বিতীয় রাজ্য সম্মেলনে প্রায় ১৫ লাখ মানুষের উপস্থিতি বিজয়ের জনপ্রিয়তা ও রাজনৈতিক সম্ভাবনার এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে। সমাবেশে তিনি বিজেপিকে প্রকাশ্যে ‘ফ্যাসিবাদী দল’ আখ্যা দিয়ে বলেন—
“গণতন্ত্রকে দুর্বল করে সমাজে বিভাজন ছড়াচ্ছে বিজেপি। আজ ভারতের সবচেয়ে বড় আদর্শগত শত্রু তারা। এই লড়াই কেবল তামিলনাডুর মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে না, এটি হবে জাতীয় সংগ্রাম।
বিজয় স্পষ্টভাবে জানান, তাদের দলের একমাত্র আদর্শগত শত্রু বিজেপি, আর রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী হলো ডিএমকে (দ্রাবের মনেত্র কাজাগাম)। তিনি দাবি করেন, টিভিকে কোনো আন্ডারওয়ার্ল্ড, মাফিয়া বা অবৈধ অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত নয়। তার ভাষায়—
“আমরা জনগণের শক্তিতে বিশ্বাস করি। পুরো তামিলনাডুর শক্তি আমাদের সঙ্গে আছে।”
টিভিকে প্রতিষ্ঠিত হয় ২০২৪ সালের ২ ফেব্রুয়ারি। দলটির মূলনীতি সমতা, মুক্তচিন্তা, ধর্মনিরপেক্ষতা এবং সামাজিক ন্যায়বিচার। যা সরাসরি বিজেপির আদর্শ ও রাজনীতির বিপরীতধর্মী। বিজয়ের দাবি, তার দলই আসল জনগণের কণ্ঠস্বর, আর সেই শক্তিই ভারতবর্ষের রাজনীতিতে বড় পরিবর্তন আনবে।
সমাবেশে বিজয়ের প্রতিটি বক্তব্যের পর করতালি আর উল্লাসে ফেটে পড়েন লাখো সমর্থক। একপর্যায়ে তিনি ঘোষণা দেন—
“আমরা নীরব দর্শক নই, বিজেপির ফ্যাসিবাদ থামাতেই হবে।”
মাদুরাইয়ের সভায় উপস্থিত মানুষের উচ্ছ্বাস প্রমাণ করে, রাজনীতির নতুন অধ্যায় শুরু করেছেন থালাপতি বিজয়। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, একজন সুপারস্টারের মুখে এ ধরনের ঘোষণা শুধু আঞ্চলিক রাজনীতিকেই নয়, বরং জাতীয় রাজনীতিকেও কাঁপিয়ে দেবে।
ভারতের প্রধান সংবাদমাধ্যম—পিটিআই, এএনআই, হিন্দুস্তান টাইমস, এনটিভি এবং ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস—সবাই একসঙ্গে বিজয়ের এই রাজনৈতিক অঙ্গীকারকে বড় খবর হিসেবে প্রকাশ করেছে। বিশ্লেষকদের মতে, যখন একজন সুপারস্টার প্রকাশ্যে বিজেপিকে ‘ফ্যাসিবাদী’ বলেন, তখন এটি নিছক কোনো প্রচারমূলক বক্তব্য থাকে না, বরং নতুন রাজনৈতিক সমীকরণের সূচনা করে।
রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা বলছেন, ২০২৬ সালের তামিলনাডু বিধানসভা নির্বাচনকে সামনে রেখে বিজয়ের এই ঘোষণা শুধু রাজ্যেই নয়, গোটা দেশজুড়েই আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে থাকবে। জনপ্রিয়তা ও রাজনৈতিক ক্যারিশমা মিলে তিনি জাতীয় পর্যায়ে বিজেপির জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠতে পারেন।
থালাপতি বিজয়ের এই পদক্ষেপ প্রমাণ করছে যে ভারতীয় রাজনীতিতে সেলিব্রেটিদের প্রভাব এখনো প্রবল। মাদুরাইয়ের সেই সমাবেশ শুধু একটি রাজনৈতিক সভা ছিল না, বরং ভারতের গণতন্ত্রে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা। বিজয়ের কণ্ঠে উঠে আসা ফ্যাসিবাদ-বিরোধী লড়াই আগামী দিনে জাতীয় রাজনীতির বড় মোড় ঘুরিয়ে দিতে পারে—এমনটাই মনে করছেন পর্যবেক্ষকরা।