আগামী ২৬ আগস্ট চীন সফরে যাচ্ছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আট শীর্ষ নেতা। সফরে তারা চায়না কমিউনিস্ট পার্টির সঙ্গে বৈঠক করবেন এবং বিশ্ববিদ্যালয়, শিল্পকারখানা ও উন্নত শহর ঘুরে দেখবেন।
চীন সফরে যাচ্ছে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আট সদস্যের একটি উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধি দল। আগামী মঙ্গলবার, ২৬ আগস্ট, তারা ঢাকা থেকে চীনের উদ্দেশ্যে যাত্রা করবেন এবং ৩১ আগস্ট দেশে ফিরে আসবেন। এনসিপির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, এ সফরে তাদের কর্মসূচি অত্যন্ত ব্যস্ত এবং বৈচিত্র্যময়।
এনসিপির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক সামান্তা শারমিন শুক্রবার বিকেলে সাংবাদিকদের জানান, আট সদস্যের এই প্রতিনিধি দল সফরের সময় চীনের একটি বিশ্ববিদ্যালয়, একটি গ্রাম ও শিল্প কারখানা পরিদর্শন করবেন। এর পাশাপাশি তারা চীনের উন্নত শহর চংকিং ভ্রমণ করবেন এবং সেখানে স্থানীয় উন্নয়ন কার্যক্রম ঘনিষ্ঠভাবে পর্যবেক্ষণ করবেন। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, সফরের অংশ হিসেবে চায়না কমিউনিস্ট পার্টির শীর্ষ নেতাদের সঙ্গেও একটি আনুষ্ঠানিক বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে।
এনসিপির যুগ্ম সদস্যসচিব তাহসীন রিয়াজ জানিয়েছেন, এর আগে দলের আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম ২২ থেকে ২৪ আগস্ট পর্যন্ত মালয়েশিয়া সফরে থাকবেন। মালয়েশিয়া সফর শেষ করে তিনি সরাসরি চীন সফরে যোগ দেবেন এবং পুরো প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেবেন। চীন সফর শেষে প্রতিনিধি দল ৩০ আগস্ট দেশে ফেরার কথা রয়েছে।
চীন সফরে অংশগ্রহণকারী আট নেতার মধ্যে রয়েছেন—দলটির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম, সদস্যসচিব আখতার হোসেন, মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম, মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী, সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক সামান্তা শারমিন, সিনিয়র যুগ্ম সদস্যসচিব নাহিদা সারওয়ার নিভা, যুগ্ম আহ্বায়ক মাহবুব আলম এবং যুগ্ম সদস্যসচিব তাহসীন রিয়াজ।
এ সফরকে ঘিরে ইতিমধ্যে চীনা দূতাবাসের পক্ষ থেকে একটি সংবর্ধনার আয়োজন করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার ঢাকায় আয়োজিত এ সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে বাংলাদেশে নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন এনসিপির প্রতিনিধিদলের সঙ্গে মতবিনিময় করেন এবং তাদের সফরের সাফল্য কামনা করেন। চীন-বাংলাদেশ সম্পর্ক জোরদার করতে এ ধরনের রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক বিনিময় সফর অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে অভিহিত করেন তিনি।
উল্লেখ্য, সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশি রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে চীনের সম্পর্ক দৃঢ়তর হচ্ছে। এর আগে গত ১১ থেকে ১৫ জুলাই জামায়াতে ইসলামী আমির শফিকুর রহমানের নেতৃত্বে নয় সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল চীন সফর করে। তারও আগে জুন মাসে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল বেইজিং সফরে যায়। ধারাবাহিক এসব সফর বাংলাদেশি রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে চীনের সম্পর্ককে নতুন মাত্রা দিচ্ছে এবং ভবিষ্যতের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে এর প্রভাব গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে বলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন।
রাজনৈতিক অঙ্গনে এই সফর এনসিপির জন্য বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ বলে বিবেচিত হচ্ছে। কারণ, দলটি বর্তমানে নিজেদের অবস্থান সুসংহত করার পাশাপাশি আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলেও সক্রিয় ভূমিকা রাখতে চায়। চীনের মতো একটি পরাশক্তির সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ স্থাপন তাদের রাজনৈতিক কৌশলের অংশ হিসেবেই দেখা হচ্ছে।
বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক পরিস্থিতির পাশাপাশি আন্তর্জাতিক অঙ্গনের সাথেও যোগাযোগ রক্ষার এই পদক্ষেপকে অনেকে ইতিবাচকভাবে দেখছেন। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ ধরনের সফর কেবল রাজনৈতিক দলের জন্য নয়, বরং দুই দেশের পারস্পরিক সম্পর্ক উন্নয়নের ক্ষেত্রেও কার্যকর ভূমিকা রাখবে।