বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী দাবি করেছেন, মিটফোর্ডে সংঘটিত হত্যাকাণ্ড সম্পূর্ণরূপে ব্যক্তিগত দ্বন্দ্বের ফল। অথচ কিছু রাজনৈতিক দল ঘটনাটিকে রাজনৈতিক রং দিয়ে ফায়দা নেওয়ার চেষ্টা করছে।
রাজধানীর ঐতিহ্যবাহী মিটফোর্ড এলাকায় সম্প্রতি ঘটে যাওয়া হত্যাকাণ্ড নিয়ে দেশের রাজনীতিতে চলছে উত্তাপ। এই ঘটনার সঙ্গে রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা অস্বীকার করে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, এটি নিছক একটি ব্যক্তিগত দ্বন্দ্বের বহিঃপ্রকাশ।
শনিবার (১২ জুলাই) রাজধানীর উত্তরায় এক আলোচনা সভায় তিনি এসব মন্তব্য করেন। রিজভীর ভাষ্য অনুযায়ী, এই ঘটনায় রাজনৈতিক উদ্দেশ্য নেই, কিন্তু কিছু রাজনৈতিক দল এ ঘটনাকে পুঁজি করে ফায়দা লুটতে মরিয়া হয়ে উঠেছে।
তিনি বলেন, যে হৃদয়বিদারক হত্যাকাণ্ড ঘটেছে, সেটির সঙ্গে বিএনপির বা অন্য কোনো রাজনৈতিক দলের আদর্শিক বা সাংগঠনিক সম্পর্ক নেই। এটি একান্তই ব্যক্তিগত বিরোধ থেকে জন্ম নেওয়া সহিংসতা।
রিজভী আরও বলেন, আমি দেখছি কিছু দল এই ঘটনাটিকে রাজনৈতিক রূপ দিয়ে মিথ্যা প্রচারণা চালাচ্ছে। তারা জনগণকে বিভ্রান্ত করতে চাইছে। অথচ ঘটনার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিরা নিজেদের ব্যবসায়িক স্বার্থ নিয়ে বিবাদে লিপ্ত হয়েছিল। তাদের মধ্যে কোনো রাজনৈতিক মতাদর্শগত দ্বন্দ্ব ছিল না, দলীয় পদ-পদবি নিয়েও কোনো সংঘর্ষ হয়নি।
তিনি দৃঢ়ভাবে বলেন, এই ঘটনার তদন্ত ও সত্য উদ্ঘাটনের দায়িত্ব আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর। এখানে দল জড়িত নয়। বিএনপি একটি বৃহৎ পরিবার, যেখানে ছিদ্র পথে কেউ ঢুকলেও তাকে চিহ্নিত করে শাস্তি দেওয়া হয়। আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান এসব বিষয়ে অত্যন্ত কঠোর।
তিনি স্বীকার করেন, রুট লেভেলে কী ঘটছে, সেটা সবসময় কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের জানা থাকে না। ওয়ার্ড পর্যায়ের কেউ যদি ব্যবসায়িক কোনো দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়ে, তা দায় দল নেবে না। তবে কেউ অপরাধ করলে তার শাস্তি হবেই।
রিজভী বলেন, আমরা অপরাধীদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিই, তাদের বহিষ্কার করি। অথচ কিছু রাজনৈতিক দল এই ঘটনাকে সামনে রেখে আমাদের বিরুদ্ধে মিছিল করে। যদি আমরা শেখ হাসিনার মতো নিশ্চুপ থাকতাম, তাহলে অভিযোগ তোলা যেত। কিন্তু আমরা তো দায়িত্ব নিয়েছি, ব্যবস্থা নিয়েছি। তবুও মিছিল করে আপনারা আসলে রাজনৈতিক ফায়দা নিতে চাইছেন।
বিশেষ একটি রাজনৈতিক দলকে ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, আপনারা অতীতের ভয়াবহ ঘটনাগুলো ভুলে গেলেও জনগণ ভোলেনি। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদের উপর যে বর্বরতা চালানো হয়েছিল, তা ইতিহাসে লেখা থাকবে। বাস থেকে ধরে ছাত্রদল নেতাকে হত্যা করা হয়েছিল, রগ কেটে দেওয়া হয়েছিল—এসব নৃশংসতা আজও স্মৃতিতে গেঁথে আছে। বিএনপির সৎ ও ইতিবাচক অবস্থানকে আড়াল করে রাজনৈতিক লাভ তোলা যাবে না।
রিজভীর বক্তব্যে স্পষ্ট প্রতিফলন পাওয়া যায় যে, বিএনপি নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট রাখতে চায় এবং সহিংসতার বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানে রয়েছে। এ ঘটনায় দলের দায় নেই বলেই তিনি দৃঢ়ভাবে দাবি করেন।