close

লাইক দিন পয়েন্ট জিতুন!

মেজর সিনহার র/ক্তে লেখা নতুন ইতিহাস: 'ক্র/স/ফা/য়ার’ সংস্কৃতির অবসান চান অ্যাটর্নি জেনারেল..

Mamun Sorder  avatar   
Mamun Sorder
অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান স্পষ্ট ভাষায় জানিয়ে দিলেন—মেজর সিনহা হত্যা কোনো আত্মরক্ষার ঘটনা নয়, এটি ছিল ঠান্ডা মাথার পূর্বপরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। তার রক্তপাত ভবিষ্যতের অনেক নিরীহ মানুষকে রক্ষা কর..

অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা মেজর মোহাম্মদ রাশেদ খান সিনহা হত্যাকাণ্ডকে ঘিরে পুরো দেশ এক সময় থমকে গিয়েছিল। এ ঘটনা জাতীয়ভাবে এতটাই নাড়া দিয়েছিল যে, সাধারণ মানুষের হৃদয়ের গভীরে স্থান করে নিয়েছে এই নির্মম বাস্তবতা। সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে বাংলাদেশ সরকারের অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান এই মামলার নানা গুরুত্বপূর্ণ দিক তুলে ধরে বলেছেন, “মামলার মূল বিষয় আসামিদের পরিচয় নয়, মুখ্য হলো মেজর সিনহা নিজেই।"

২৯ মে, বৃহস্পতিবার মামলাটির রাষ্ট্রপক্ষের ক্লোজিং আর্গুমেন্ট অনুষ্ঠিত হয়। সেই পরিপ্রেক্ষিতে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, “এটা আত্মরক্ষার ঘটনা ছিল না, এটি একটি ঠান্ডা মাথায় পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড।”

তিনি সরাসরি প্রত্যাখ্যান করেছেন আসামিপক্ষের সেই দাবি, যেখানে বলা হয়েছিল মেজর সিনহা চোরাচালানের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন এবং তাদের আত্মরক্ষার্থে গুলি চালানো হয়। অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, “আইনে আত্মরক্ষার অধিকার থাকলেও সেক্ষেত্রে 'ডকট্রিন অব প্রোপোরশনালিটি' প্রযোজ্য। কেউ যদি লাঠি নিয়ে আসে, আপনি তাকে গুলি করে মেরে ফেলতে পারেন না।”

“গাড়ি থেকে দুই হাত তুলে নামা একজন মানুষকে গুলি করা কোনো আত্মরক্ষা নয়”

সাক্ষাৎকারে ভয়াবহ ও করুণ এক চিত্র তুলে ধরেন অ্যাটর্নি জেনারেল। তার ভাষায়, মেজর সিনহা যখন গাড়ি থেকে দুই হাত তুলে নিরস্ত্র অবস্থায় নামলেন, তখনও তাকে গুলি করা হলো। এমনকি মৃত্যুর নিশ্চয়তা নিশ্চিত করতে তার গলায় পা দিয়ে চেপে ধরা হয়। এটি আত্মরক্ষার আওতায় পড়ে না, বরং এটি সরাসরি হত্যা।

তিনি বলেন, “আসামিপক্ষ যেই আত্মরক্ষার অজুহাত দিয়েছে, তার সমর্থনে তারা কোনো সাক্ষ্য, মৌখিক কিংবা পরিস্থিতিগত প্রমাণ দিতে পারেনি।” বরং মামলায় উপস্থাপিত সব সাক্ষী ও আসামিদের জবানবন্দি এই হত্যাকাণ্ডকে পরিকল্পিত বলে স্পষ্ট করেছে।

এই মামলায় রাষ্ট্রপক্ষ এমনভাবে প্রমাণ উপস্থাপন করেছে, যাতে ‘বিয়ন্ড অল রিজনেবল ডাউট’ বা কোনও যুক্তিপূর্ণ সন্দেহ ছাড়াই বোঝা যায়, এটি একটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড ছিল। মেজর সিনহার সঙ্গী শফায়েত, এক পথচারী এবং স্থানীয় মসজিদের ইমামসহ যেসব সাক্ষ্য এসেছে, সেগুলো একে অপরকে সমর্থন করেছে। প্রত্যেকেই একবাক্যে বলেছেন—“মেজর সিনহা ছিলেন নিরস্ত্র এবং তাকে ঠান্ডা মাথায় হত্যা করা হয়েছে।”

অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, “মেজর সিনহার মৃত্যু পুরো জাতিকে নাড়িয়ে দিয়েছে। এটি ছিল পাহাড়ের মতো ভারী। এই হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু বিচার না হলে তা হবে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে রাষ্ট্রের ব্যর্থতার প্রতীক।” তিনি আবরার ফাহাদের প্রসঙ্গ টেনে বলেন, “আবরার যেমন নিজের জীবন দিয়ে অনেক মেধাবী তরুণকে বাঁচিয়েছেন, মেজর সিনহার মৃত্যুও অনেক নিরীহ মানুষের প্রাণ বাঁচিয়ে দিয়েছে, যারা ভবিষ্যতে এই ‘প্রদীপদের’ রোষানল থেকে রক্ষা পেয়েছে।”

অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, “একসময় ‘ক্রসফায়ার’-এর নামে মানুষ হত্যা করে পরে গুলি বিনিময়ের গল্প বলা হতো। কিন্তু আমরা বলেছি, মেজর সিনহার ঘটনাটি কোনো ক্রসফায়ার ছিল না। এটি একটি পরিকল্পিত হত্যা।”

এই ধরনের বিচার সম্পন্ন হলে দেশের বিচারব্যবস্থার প্রতি মানুষের আস্থা আরও বাড়বে বলে মনে করেন তিনি। “এটি শুধু সিনহার পরিবারের জন্য নয়, এটি আমাদের রাষ্ট্র, সমাজ এবং মূল্যবোধ রক্ষার প্রশ্ন,” বলেন অ্যাটর্নি জেনারেল।

অ্যাটর্নি জেনারেল তার সাক্ষাৎকারের শেষ দিকে দেশের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটি স্বপ্নের কথা বলেন। তিনি বলেন, “আমরা চাই এমন একটি বাংলাদেশ গড়ে উঠুক, যা সুকান্ত ভট্টাচার্যের কবিতার মতো বাসযোগ্য হয়ে উঠবে আগামী প্রজন্মের জন্য।”

মেজর সিনহার জীবন ও মৃত্যু আমাদের চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে—প্রশাসনের ভেতরের নৃশংসতা কতটা ভয়াবহ হতে পারে। এই মামলা শুধু একটি হত্যাকাণ্ড নয়, এটি একটি বার্তা—আইনের শাসনের জন্য, সত্য ও ন্যায়ের জন্য, এবং ভবিষ্যৎ বাংলাদেশের জন্য।

Keine Kommentare gefunden


News Card Generator