এক্স-ফোর্সেস অ্যাসোসিয়েশন মেজর (অব.) সিনহা হত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত সাবেক ওসি প্রদীপের ফাঁসির কার্যকরের তারিখ অবিলম্বে ঘোষণার দাবি জানিয়েছে। বিলম্বকে তারা ন্যায়বিচারের অপমান হিসেবে দেখছেন।
মেজর (অব.) সিনহা মো. রাশেদ খান হত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত সাবেক টেকনাফ থানার ওসি প্রদীপ কুমার দাশের ফাঁসির কার্যকরের তারিখ অবিলম্বে ঘোষণা করার জোর দাবি জানিয়েছে এক্স-ফোর্সেস অ্যাসোসিয়েশন। সংগঠনটির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, এই বিলম্ব শুধু আইনের প্রতি অবহেলা নয়, বরং ন্যায়বিচারের প্রতি প্রকাশ্য অবমাননা এবং শহীদের আত্মার প্রতি চরম বিশ্বাসঘাতকতা।
সোমবার (১১ আগস্ট) দুপুরে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর-রুনি মিলনায়তনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনটির সেক্রেটারি লেফটেন্যান্ট (অব.) সাইফুল্লাহ খাঁন সাইফ এই দাবি জানান। সংবাদ সম্মেলনে তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “মেজর সিনহা হত্যার প্রধান আসামি প্রদীপ কুমার দাশের ফাঁসির রায় ঘোষিত হয়েছে অনেক আগেই। কিন্তু আজ অবধি ফাঁসি কার্যকরের তারিখ ঘোষণা হয়নি। এটি শুধু সময়ক্ষেপণ নয়, বরং রাষ্ট্র ও জনগণের সঙ্গে এক ধরনের প্রহসন।”
তিনি প্রশ্ন তোলেন, “প্রদীপের মতো একজন দাগী খুনির শাস্তি কার্যকরে সরকারের এই দীর্ঘসূত্রতা আসলে কী বার্তা দিচ্ছে? অপরাধীরা কি রাজনৈতিক বা প্রশাসনিক ছত্রছায়ায় থাকলে বিচার থেকে রেহাই পেতে পারে? এই বিলম্ব শুধু ভুক্তভোগীর পরিবারের জন্য নয়, বরং সেনাবাহিনী, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এবং সাধারণ জনগণের মনোবলকে আঘাত করছে।
লেফটেন্যান্ট (অব.) সাইফুল্লাহ আরও বলেন, “আমরা স্পষ্টভাবে জানাচ্ছি, এই বিলম্ব আর সহ্য করা হবে না। সরকারের কাছে আমাদের চূড়ান্ত দাবি, প্রদীপের ফাঁসির কার্যকরের নির্দিষ্ট তারিখ অবিলম্বে ঘোষণা করতে হবে। অন্যথায় আমরা আরও কঠোর কর্মসূচি নিতে বাধ্য হবো।” তিনি জোর দিয়ে বলেন, ন্যায়বিচার কেবল আদালতের রায়ে সীমাবদ্ধ নয়, এর বাস্তবায়নই জনগণের কাছে বিচার প্রতিষ্ঠার প্রমাণ।
তিনি সতর্ক করে দেন, “যদি রায় কার্যকর না হয়, তবে তা হবে জনগণের প্রতি প্রকাশ্য চ্যালেঞ্জ এবং আইনের শাসনের প্রতি আঘাত।” সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত অ্যাসোসিয়েশনের অন্যান্য সদস্যরাও একমত হয়ে দ্রুততম সময়ের মধ্যে রায় কার্যকরের দাবি জানান। তারা বলেন, মেজর সিনহার মতো একজন মুক্তিকামী, সৎ ও দেশপ্রেমিক সেনা কর্মকর্তার হত্যাকাণ্ডে দোষীদের সর্বোচ্চ শাস্তি কার্যকর না হওয়া দেশের মানুষের মনে গভীর হতাশা সৃষ্টি করেছে।
উল্লেখ্য, মেজর (অব.) সিনহা মো. রাশেদ খান ২০২০ সালের ৩১ জুলাই কক্সবাজারের টেকনাফে পুলিশের গুলিতে নিহত হন। এই ঘটনায় প্রদীপ কুমার দাশসহ কয়েকজন পুলিশ সদস্য ও চিহ্নিত সহযোগীর বিরুদ্ধে হত্যা মামলা হয়। দীর্ঘ বিচারিক প্রক্রিয়ার পর আদালত প্রদীপকে মৃত্যুদণ্ড দেন। কিন্তু রায় ঘোষণার পরও দীর্ঘ সময় ধরে তার ফাঁসি কার্যকরের প্রক্রিয়া শুরু হয়নি।
এক্স-ফোর্সেস অ্যাসোসিয়েশন মনে করে, এই বিলম্ব বিচার ব্যবস্থার প্রতি মানুষের আস্থা নষ্ট করছে এবং দোষীদের জন্য অব্যক্ত বার্তা দিচ্ছে যে, ক্ষমতা বা প্রভাব থাকলে আইনের শাস্তি এড়িয়ে যাওয়া সম্ভব। সংগঠনটি সরকারের কাছে আহ্বান জানিয়েছে— আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা ও জনগণের আস্থা পুনরুদ্ধারে অবিলম্বে রায় কার্যকরের সুনির্দিষ্ট তারিখ ঘোষণা করা হোক।