টেকনাফে সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মো. রাশেদ খান হত্যা মামলায় বরখাস্ত ওসি প্রদীপ কুমার দাশ ও এসআই লিয়াকত আলীর মৃত্যুদণ্ড বহাল রেখেছে হাইকোর্ট। একইসঙ্গে ছয় আসামির যাবজ্জীবন কারাদণ্ডও বহাল রাখা হয়েছে।
রোববার (২ জুন) বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমান ও বিচারপতি মো. সগীর হোসেনের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এই রায় ঘোষণা করেন। বিচারিক আদালতের দেওয়া রায় যাচাইয়ের জন্য পাঠানো ডেথ রেফারেন্স গ্রহণ এবং দণ্ডিতদের আপিল খারিজ করে এই রায় দেন আদালত।
বহাল রাখা দণ্ডপ্রাপ্তদের নাম:
-
মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত:
-
প্রদীপ কুমার দাশ (সাবেক ওসি, টেকনাফ)
-
লিয়াকত আলী (সাবেক এসআই, বাহারছড়া তদন্ত কেন্দ্র)
-
-
যাবজ্জীবন দণ্ডপ্রাপ্ত:
-
নন্দদুলাল রক্ষিত (সাবেক এসআই)
-
সাগর দেব (সাবেক কনস্টেবল)
-
রুবেল শর্মা (দেহরক্ষী)
-
নুরুল আমিন (পুলিশের সোর্স)
-
মো. নেজামউদ্দিন
-
আয়াজ উদ্দিন
-
খালাসপ্রাপ্ত আসামিরা:
সাফানুর করিম, কামাল হোসেন, আব্দুল্লাহ আল মামুন, লিটন মিয়া (সাবেক এএসআই), মো. শাহজাহান (এপিবিএন), মো. রাজীব ও মো. আব্দুল্লাহ।
মামলার পটভূমি:
২০২০ সালের ৩১ জুলাই রাতে টেকনাফের শামলাপুরে বাহারছড়া পুলিশ তল্লাশিচৌকিতে গোলাগুলিতে নিহত হন মেজর সিনহা। ঘটনার পাঁচ দিন পর নিহতের বড় বোন শারমিন শাহরিয়ার ফেরদৌস কক্সবাজার আদালতে হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলায় প্রধান আসামি করা হয় এসআই লিয়াকত আলীকে এবং দুই নম্বর আসামি ছিলেন ওসি প্রদীপ কুমার দাশ।
তদন্ত ও বিচার:
মামলার তদন্তভার দেওয়া হয় র্যাবকে। তদন্ত শেষে ১৫ জনকে অভিযুক্ত করে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়। একইসঙ্গে ৮৩ জনকে সাক্ষী করা হয়।
২০২১ সালের ২৭ জুন কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালত বিচার শুরুর নির্দেশ দেয়। করোনার কারণে বিচার বিলম্বিত হলেও, ২০২১ সালের আগস্ট থেকে ডিসেম্বরের মধ্যে ৬৫ জন সাক্ষ্য দেন। যুক্তিতর্ক শেষে ২০২২ সালের ৩১ জানুয়ারি বিচারিক রায় ঘোষণা করা হয়।
রায়ে, প্রদীপ ও লিয়াকতকে মৃত্যুদণ্ড, ছয়জনকে যাবজ্জীবন, এবং সাতজনকে খালাস দেওয়া হয়। পরে ফৌজদারি কার্যবিধির ৩৭৪ ধারা অনুযায়ী, ওই রায় কার্যকরের জন্য ডেথ রেফারেন্স হাইকোর্টে পাঠানো হয়, এবং আসামিরাও আপিল করেন।
শুনানি ও হাইকোর্টের রায়:
ডেথ রেফারেন্স ও আপিলের শুনানি শুরু হয় ২০২৪ সালের ২৩ এপ্রিল। দীর্ঘ শুনানি শেষে ২ জুন ২০২৫ হাইকোর্ট চূড়ান্ত রায় ঘোষণা করে।
শুনানিতে অংশগ্রহণ:
রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান এবং ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল জসিম সরকারসহ আরও কয়েকজন আইনজীবী।
আসামিপক্ষে শুনানিতে নেতৃত্ব দেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এস এম শাহজাহান এবং আরও কয়েকজন সিনিয়র আইনজীবী।
এই রায়ের মাধ্যমে আলোচিত এই হত্যা মামলার বিচার প্রক্রিয়ার একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় শেষ হলো। এখন আসামিরা সুপ্রিম কোর্টে আপিল করতে পারবেন।



















