মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিমের আমন্ত্রণে তিনদিনের সরকারি সফরে ঢাকা ছেড়েছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। সফরে প্রতিরক্ষা, জ্বালানি ও হালাল খাদ্যসহ বিভিন্ন খাতে পাঁচটি এমওইউ স্বাক্ষর হবে।
মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিমের আনুষ্ঠানিক আমন্ত্রণে তিনদিনের সরকারি সফরে ঢাকা ত্যাগ করেছেন বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। সোমবার দুপুর ২টায় তিনি বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের একটি বিশেষ ফ্লাইটে মালয়েশিয়ার রাজধানী কুয়ালালামপুরের উদ্দেশে রওনা হন।
সরকারি সূত্র জানিয়েছে, এই সফরের মূল লক্ষ্য হবে বাংলাদেশ ও মালয়েশিয়ার মধ্যে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে নতুন মাত্রায় উন্নীত করা। বিশেষ করে প্রতিরক্ষা, জ্বালানি এবং হালাল খাদ্য শিল্প খাতে সহযোগিতা বৃদ্ধির জন্য গুরুত্বপূর্ণ সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের পরিকল্পনা রয়েছে। সফরের সময় দুই দেশের উচ্চপর্যায়ের বৈঠকে মোট পাঁচটি এমওইউ এবং তিনটি নোট বিনিময় অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হবে।
প্রধান উপদেষ্টার এই সফরে গুরুত্ব পাবে কয়েকটি উল্লেখযোগ্য বিষয়। এর মধ্যে রয়েছে—
-
প্রতিরক্ষা সহযোগিতা: দুই দেশের সশস্ত্র বাহিনীর মধ্যে যৌথ প্রশিক্ষণ, প্রযুক্তি বিনিময় এবং সরঞ্জাম উন্নয়নে সমঝোতা।
-
জ্বালানি খাতের উন্নয়ন: বিদ্যুৎ ও নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতে বিনিয়োগ ও প্রযুক্তিগত সহযোগিতা।
-
হালাল খাদ্য শিল্প: আন্তর্জাতিক মান বজায় রেখে হালাল খাদ্য উৎপাদন ও বিপণনে যৌথ উদ্যোগ।
-
বাণিজ্যিক চুক্তি: বাংলাদেশ-মালয়েশিয়া চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (BMCCI) ও মালয়েশিয়ান কোম্পানি মেমোসের মধ্যে সমঝোতা স্বাক্ষর।
-
গবেষণা ও কূটনৈতিক সহযোগিতা: বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ (BIISS) এবং ইনস্টিটিউট অব স্ট্র্যাটেজিক অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজ (ISIS)-এর মধ্যে সমঝোতা।
-
বাণিজ্যিক নেটওয়ার্কিং: ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (FBCCI) এবং মালয়েশিয়ান ইন্টারন্যাশনাল চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (MICCI)-এর মধ্যে সমঝোতা।
প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের এই সফরে উভয় দেশের ব্যবসায়ী ও নীতিনির্ধারকদের মধ্যে সরাসরি আলোচনার সুযোগ সৃষ্টি হবে বলে আশা করা হচ্ছে। মালয়েশিয়া দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অন্যতম অর্থনৈতিক শক্তি এবং বাংলাদেশের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক অংশীদার। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দুই দেশের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের পরিমাণ উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে, যা এই সফরের মাধ্যমে আরও প্রসারিত হতে পারে বলে কূটনৈতিক মহল মনে করছে।
বাংলাদেশ সরকারের উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তারা মনে করছেন, এই সফরের মাধ্যমে প্রতিরক্ষা ও অর্থনৈতিক সহযোগিতার পাশাপাশি শ্রমবাজার, শিক্ষা এবং পর্যটন খাতেও ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। মালয়েশিয়ায় বর্তমানে বিপুল সংখ্যক বাংলাদেশি কর্মরত আছেন, এবং ভবিষ্যতে আরও কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হতে পারে।
তিনদিনের এই সফর শেষে প্রধান উপদেষ্টা ১৪ আগস্ট দেশে ফেরার কথা রয়েছে। সফরের প্রতিটি কার্যক্রম উভয় দেশের গণমাধ্যমে নিবিড়ভাবে কাভার করা হবে বলে জানানো হয়েছে।