close

ভিডিও আপলোড করুন পয়েন্ট জিতুন!

মাধবকুণ্ডে ৪৩ বছরে ৩২ মৃত্যু: ঝুঁকি উপেক্ষা করে চলছে তরুণদের দুঃসাহসিকতা..

Amran Ahmed avatar   
Amran Ahmed
মাধবকুণ্ড জলপ্রপাতের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে প্রতিবছর ভিড় করেন হাজারো পর্যটক। তবে গত চার দশকে এখানে প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত ৩২ জন, বেশিরভাগই তরুণ। অসচেতনতা ও নিরাপত্তা ঘাটতির কারণে বারবার ঘটছে দুর..

মাধবকুণ্ড জলপ্রপাত—দেশের সর্ববৃহৎ প্রাকৃতিক জলপ্রপাত। মৌলভীবাজার জেলার বড়লেখা উপজেলার এই জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্র বছরের পর বছর ধরে দেশ-বিদেশের হাজারো ভ্রমণপিপাসুর আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে আছে। উঁচু নিচু পাহাড়ি টিলা, সবুজে ঘেরা চা-বাগান, খাসিয়াদের পানপুঞ্জি, পাহাড়িদের বৈচিত্র্যময় জীবনধারা এবং জুমচাষ মিলে এই জলপ্রপাত অঞ্চলের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য নজরকাড়া। তবে এই সৌন্দর্যের অন্তরালে লুকিয়ে আছে এক ভয়াবহ সত্য—প্রাণহানির আশঙ্কা।

সদ্য সাবেক রেঞ্জ কর্মকর্তা শেখর রঞ্জন দাসের দেওয়া পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গত ৪৩ বছরে মাধবকুণ্ড জলপ্রপাতে প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত ৩২ জন পর্যটক। কেউ কেউ চূড়া থেকে পা ফসকে নিচে পড়ে যান, কেউ আবার ঝরনার নিচে সাঁতার কাটতে নেমে ডুবে যান গভীর পানিতে। দুর্ঘটনাগুলোর বেশিরভাগই ঘটে পর্যটকদের অসচেতনতা ও নিরাপত্তার ঘাটতির কারণে। 


সাম্প্রতিক সময়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়া একাধিক ভিডিওতে দেখা গেছে, উঠতি বয়সী তরুণরা প্রায় ২০০ ফুট উঁচু জলপ্রপাতের চূড়ায় উঠে ছবি ও ভিডিও ধারণ করছেন। কেউ কেউ আবার ঝুঁকিপূর্ণ ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে সেলফি তুলছেন, কেউ বানাচ্ছেন টিকটক কিংবা রিল। এদের বেশিরভাগই কিশোর কিংবা কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া তরুণ। প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে তারা বিভিন্ন গোপন পথ দিয়ে উপরে উঠে যাচ্ছেন, যার বেশিরভাগ পথ ট্যুরিস্ট পুলিশের নজরের বাইরে।


ঘটনাস্থলে বুধবার সকালে বেড়াতে আসা সারজান আহমদ বলেন, এই জায়গাটা সত্যিই অনেক সুন্দর, তবে কিছু মানুষ ছবি তোলা ও ভিডিও তৈরির নেশায় পাহাড়ের ঝুঁকিপূর্ণ চূড়ায় উঠে যায়। এটা একেবারেই ঠিক না। আমরা চাই, প্রশাসন যেন এই ব্যাপারে আরও কঠোর হয়।

  
ঢাকা থেকে আগত আছিয়া খানম বলেন, ভ্রমণের ক্ষেত্রে নিরাপত্তা আগে। আমরা এখানে প্রকৃতি উপভোগ করতে এসেছি, জীবন ঝুঁকির মধ্যে ফেলে ছবি তোলা বা অ্যাডভেঞ্চার খোঁজা মোটেই গ্রহণযোগ্য না। সবাইকে সচেতন হওয়া উচিত।


মোটোফোনে কথা হলে, এমন প্রশ্নের জবাবে মাধবকুণ্ড ট্যুরিস্ট পুলিশের ইনচার্জ মহসিন আহমদ বলেন,  
আমরা নিয়মিত টহল দেই এবং পর্যটকদের নিরাপদ স্থানে থাকার পরামর্শ দেই। ঝুঁকি নিয়ে পাহাড়ের চূড়ায় উঠার বিষয়ে তিনি বলেন, পুলিশের চোখ ফাঁকি দিয়ে কেউ উপরে উঠতে পারে না। যারা উঠার চেষ্টা করেন তাদের আমরা সতর্ক করছি। তবে পর্যটকদের নিজেদেরও সচেতন হওয়া জরুরি।


মাধব ছড়া বিট কর্মকর্তা সোহেল রানা বলেন, ঈদুল ফিতর উপলক্ষে মাধবকুণ্ড জলপ্রপাতে কয়েক হাজার পর্যটকের সমাগম হয়েছে। এ সময় কিছু পর্যটক ঝর্ণার যেদিক দিয়ে পানি পড়ে, সেই বিপজ্জনক স্থানে উঠে পড়েন, যা আমাদের দৃষ্টিগোচর হয়েছে। আমরা অনেক পর্যটককে সেই স্থান থেকে নিচে নামিয়ে এনেছি এবং তাদের সচেতন করেছি যেন ভবিষ্যতে তারা এমন ঝুঁকি না নেয়।

তিনি আরও জানান, সামনের দিক দিয়ে উঠলে তাদের নিয়ন্ত্রণ করা গেলেও পাশ্ববর্তী গোপন পথগুলো দিয়ে অনেকেই উপরে উঠে যায়, যেটি প্রশাসনের নজরের বাইরে থেকে যাচ্ছে।


সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, মূল জায়গায় সীমারেখা হিসেবে দড়ি দিয়ে বিপদজনক জায়গা আলাদাকরা থাকলেও সেখানে নির্দ্বিধায় ডুকে পড়ছেন পর্যটকরা। তাদের সাঁতার কাটতে দেখা যায় ঝুঁকিপূর্ণ জায়গায়। অনেকেই বলেন, পাহাড়ে ওঠার রাস্তাগুলো পুরোপুরি বন্ধ করে দেওয়া হলে এই ঝুঁকি অনেকাংশে হ্রাস পাবে।


মাধবকুণ্ড জলপ্রপাত নিঃসন্দেহে এক অনন্য প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের আধার। তবে পর্যটকদের অসচেতনতা একে মৃত্যুফাঁদে রূপ দিচ্ছে। মৃত্যুঝুকি থামাতে প্রয়োজন যুগোপযোগী পদক্ষেপ—নিয়মিত নজরদারি। নয়তো, এই প্রাকৃতিক সৌন্দর্য পর্যটকদের জন্য হয়ে উঠবে আতঙ্কের নাম।

 

Amran Ahmed
Amran Ahmed 4 bulan yang lalu
Thanks ..Eye News BD
0 0 Membalas
Menampilkan lebih banyak