মাদারীপুরের রাজৈর ও সদর উপজেলা বর্তমানে অবৈধ বালু উত্তোলনের কারণে মারাত্মক পরিবেশগত এবং সামাজিক সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে। প্রতিদিন অন্তত ১০টি স্থানে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের কাজ চলছে, যা স্থানীয় নদীগুলোর স্বাভাবিক প্রবাহ ও আশেপাশের কৃষিজমির জন্য বিপজ্জনক হয়ে উঠেছে। কুমার নদী এবং আড়িয়াল খাঁ নদীতে ড্রেজার মেশিনের মাধ্যমে এই বালু উত্তোলন কার্যক্রম প্রতিদিনের মতো রাতে আরও তীব্র হয়।
রাজৈরের কবিরাজপুরের কালার চর, শংকরদী, গোয়াল পাতান, কালিবাড়ি এবং সদরের শ্রীনদী, রায়েরকান্দি, কোটবাড়ি, গোসাদিয়া ও নতুন রাজারহাট এলাকার বালু উত্তোলন বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। স্থানীয়দের অভিযোগ, এই অবৈধ কার্যক্রমে প্রভাবশালী ব্যক্তিরা জড়িত, যারা প্রশাসনের নাকের ডগায় থেকে কাজটি চালিয়ে যাচ্ছে। স্থানীয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মাঝে মাঝে অভিযান চালালেও এর স্থায়ী সমাধানে তা এখনও অপর্যাপ্ত।
কৃষিজমি হারিয়ে ক্ষোভে ভরা কৃষকরা জানান, নদী ভাঙনে তাদের জমি ও বসতভিটা বিলীন হয়ে যাচ্ছে। এর ফলে তারা আর্থিকভাবে বিপর্যস্ত। এক কৃষক বলেন, ‘নদী ভাঙনে আমার বসতভিটা চলে গেছে। প্রতিবাদ করলে হুমকি আসে। প্রশাসন যদি কঠোর না হয়, আমরা সব হারিয়ে ফেলবো।’
এই অবৈধ কার্যক্রমের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য স্থানীয় সচেতন মহলের সভাপতি বাবলুর রহমান সোহেল বলেন, ‘এই অপরিকল্পিত বালু উত্তোলন শুধু পরিবেশের ক্ষতি করছে না, আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকেও হুমকিতে ফেলছে। স্থানীয় প্রশাসনের আরও কঠোর হওয়া দরকার।’
মাদারীপুর জেলা প্রশাসক জানান, ‘আমরা রাতের বালু উত্তোলন নিয়ে তথ্য নিচ্ছি। দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’ তবে এখন পর্যন্ত কার্যকর কোনো পদক্ষেপ দেখা যায়নি, যা ফেলে যাওয়া কৃষিজমি ও পরিবেশ রক্ষায় অত্যন্ত জরুরি।
প্রকৃতপক্ষে, এই অবৈধ বালু উত্তোলন কেবল পরিবেশগত ক্ষতিই করছে না, বরং স্থানীয় অর্থনীতির ওপরও নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। বালু উত্তোলনের কারণে নদীর প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হওয়ায় নদী ভাঙনের ভয়াবহতা বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং অনেক চাষযোগ্য জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। এই বিষয়টি স্থানীয় প্রশাসন এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে, যেখানে প্রয়োজন কঠোর পদক্ষেপ এবং কার্যকর নিয়ন্ত্রণ।