সিলেটের ভোলাগঞ্জ থেকে লুট হওয়া সমস্ত সাদা পাথর সাত দিনের মধ্যে আগের স্থানে ফেরত দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট। পাশাপাশি দায়ীদের তালিকা দাখিল ও কঠোর আইনি ব্যবস্থা নেওয়ারও নির্দেশ এসেছে।
সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার ভোলাগঞ্জ থেকে অবৈধভাবে লুট হওয়া সাদা পাথরের ঘটনায় কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছে হাইকোর্ট। বৃহস্পতিবার (১৪ আগস্ট) এক গুরুত্বপূর্ণ আদেশে আদালত নির্দেশ দিয়েছে, লুট হওয়া সমস্ত পাথর সাত দিনের মধ্যে আগের স্থানে ফেরত দিতে হবে। একই সঙ্গে ঘটনায় জড়িতদের সুনির্দিষ্ট তালিকা আদালতে দাখিল করারও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
বিচারপতি কাজী জিনাত হক ও বিচারপতি আইনুন নাহার সিদ্দিকার সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এই আদেশ দেন। আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন মানবাধিকার সংগঠন এইচআরআইবি'র সভাপতি অ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদ।
ঘটনার পটভূমিতে জানা যায়, ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট সরকারের পরিবর্তনের পর থেকে সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ ও গোয়াইনঘাট উপজেলায় অবৈধভাবে বিপুল পরিমাণ পাথর উত্তোলন শুরু হয়। অভিযোগ অনুযায়ী, এসব পাথর উত্তোলন ঘটে দিনের বেলায় স্থানীয় প্রশাসনের সামনেই, অথচ আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো কার্যকর ব্যবস্থা নেয়নি। স্থানীয় ও জাতীয় পর্যায়ে এ নিয়ে ক্ষোভ ও সমালোচনা বাড়তে থাকে।
এই ঘটনায় দায়ীদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে পৃথক একটি রিট দায়ের হয়। সেই রিটের শুনানির জন্য আগামী রোববার (১৭ আগস্ট) দিন ধার্য করেছেন বিচারপতি ফাহমিদা কাদের ও বিচারপতি সৈয়দ জাহেদ মনসুরের হাইকোর্ট বেঞ্চ। আদালতে রিট আবেদনটি উপস্থাপন করেন অ্যাডভোকেট মীর একেএম নূরুন নবী।
রিট আবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, ভোলাগঞ্জ ও আশপাশের এলাকায় অবৈধ পাথর উত্তোলন রোধে প্রশাসনের অবহেলা স্পষ্ট। ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে এবং প্রাকৃতিক সম্পদ রক্ষায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অতিরিক্ত সদস্য মোতায়েন করা জরুরি। আবেদনকারীরা জোর দিয়ে বলেন, দেশের প্রাকৃতিক সম্পদ কেবল অর্থনৈতিক দিক থেকে নয়, পরিবেশগতভাবেও অমূল্য, যা রক্ষায় সরকার ও আদালতের সক্রিয় ভূমিকা নেওয়া উচিত।
বিগত এক বছরে ভোলাগঞ্জ সীমান্ত এলাকায় অবৈধ পাথর উত্তোলনের মাত্রা এতটাই বেড়েছে যে, স্থানীয় নদীর প্রবাহ, পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্যের ওপর মারাত্মক প্রভাব পড়ছে বলে বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন। নদীর তলদেশ গভীর হওয়া, পাড় ভেঙে পড়া এবং আশপাশের কৃষিজমি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা বাড়ছে। এ কারণে আদালতের এই নির্দেশকে পরিবেশ ও প্রাকৃতিক সম্পদ রক্ষার ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে দেখা হচ্ছে।
জনগণের মধ্যে আদালতের এই পদক্ষেপকে স্বাগত জানানো হলেও, অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন—কেবল পাথর ফেরত দেওয়া যথেষ্ট কি না। তাদের মতে, অতীতে বারবার অবৈধভাবে প্রাকৃতিক সম্পদ লুট হলেও দায়ীরা প্রায়শই আইনের ফাঁক গলে বেঁচে গেছে। তাই এবার যেন কঠোর শাস্তির মাধ্যমে দৃষ্টান্ত স্থাপন করা হয়।
আইনজীবীরা মনে করছেন, হাইকোর্টের এই নির্দেশ বাস্তবায়ন করা গেলে দেশের অন্যান্য অঞ্চলে প্রাকৃতিক সম্পদ লুটপাট রোধে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। একইসঙ্গে প্রশাসনের দায়িত্বশীল ভূমিকা নিশ্চিত করার জন্য এটি একটি নজির তৈরি করবে।
এদিকে, পরিবেশবাদীরা বলছেন, অবৈধ পাথর উত্তোলন কেবল আইন লঙ্ঘন নয়, এটি দেশের প্রাকৃতিক সম্পদের ওপর সরাসরি হামলা। আদালতের নির্দেশ কার্যকর করতে স্থানীয় প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে এবং পাথর ফেরত দেওয়ার পাশাপাশি অপরাধীদের দ্রুত বিচারের আওতায় আনতে হবে।
পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন, এই রায় কার্যকর হলে কেবল ভোলাগঞ্জ নয়, দেশের অন্যান্য প্রাকৃতিক সম্পদসমৃদ্ধ এলাকাগুলোকেও সুরক্ষা দেওয়া সম্ভব হবে। এখন দেখার বিষয়—আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী সাত দিনের মধ্যে সমস্ত লুট হওয়া পাথর আগের জায়গায় ফেরত যায় কি না, এবং দায়ীদের তালিকা আদালতে জমা দিয়ে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হয় কি না।