সিলেটের সাদাপাথর পর্যটনকেন্দ্র থেকে লুট হওয়া পাথর তিন দিনের মধ্যে ফেরত দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে জেলা প্রশাসন। সময়সীমা না মানলে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সিলেটের বিখ্যাত পর্যটনকেন্দ্র সাদাপাথর থেকে লুট হওয়া পাথর উদ্ধার ও ফেরতের জন্য জেলা প্রশাসন কঠোর অবস্থান নিয়েছে। এ ঘটনায় প্রশাসন স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে—আগামী মঙ্গলবার (২৬ আগস্ট) বিকেল ৫টার মধ্যে লুট হওয়া সব পাথর ফেরত দিতে হবে। অন্যথায় অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
জানা গেছে, ইতিমধ্যে কোম্পানীগঞ্জ ও আশপাশের এলাকায় মাইকিংয়ের মাধ্যমে স্থানীয়দের সতর্ক করা হচ্ছে। প্রশাসন বলছে, যারা নিজেরা এই কাজে জড়িত হয়েছেন তারা যেন দ্রুত পাথরগুলো নিজ উদ্যোগে ও নিজ খরচে পর্যটনকেন্দ্রে ফিরিয়ে দেন।
এ প্রসঙ্গে সিলেটের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) পদ্মাসন সিংহ বলেন, “মঙ্গলবার বিকেল ৫টার মধ্যে ভোলাগঞ্জ ১০ নম্বর ঘাট ডাম্পিং স্টেশনে পাথর ফেরত দিতে হবে। যদি নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ফেরত না আসে, তাহলে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
তিনি আরও সতর্ক করে বলেন, “নির্ধারিত সময়ের পর যে এলাকায় অভিযান চালিয়ে পাথর উদ্ধার হবে, সেই এলাকার জনপ্রতিনিধিদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে। একইসঙ্গে পাথর লুটের মূল হোতাদের আইনের আওতায় আনার কাজও চলছে।”
সাদাপাথর দীর্ঘদিন ধরে সিলেটের অন্যতম পর্যটনকেন্দ্র হিসেবে পরিচিত। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে প্রতিদিন হাজারো পর্যটক এখানে ভিড় করেন। তবে সাম্প্রতিক সময়ে একাধিকবার স্থানীয় প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় অবৈধভাবে পাথর লুটের ঘটনা ঘটেছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
এমন পরিস্থিতিতে জেলা প্রশাসনের এই আলটিমেটামকে স্থানীয়রা ইতিবাচকভাবে দেখছেন। তারা মনে করছেন, দ্রুত কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া না হলে পর্যটনকেন্দ্রের সৌন্দর্য নষ্ট হয়ে যাবে এবং পরিবেশের ওপর মারাত্মক প্রভাব পড়বে।
একজন স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, “আমরা চাই প্রশাসন আরও কড়া হোক। কারণ এই লুটপাট শুধু পরিবেশ নষ্ট করছে না, আমাদের জীবনযাত্রাও ব্যাহত করছে। পাহাড় ভাঙা আর পাথর লুটের কারণে আশেপাশের গ্রামগুলো ঝুঁকির মুখে পড়ছে।”
বিশ্লেষকরা বলছেন, সিলেটের পাথরকেন্দ্রগুলোকে ঘিরে দীর্ঘদিন ধরে প্রভাবশালী চক্র সক্রিয় রয়েছে। অনেক সময় প্রশাসনিক তৎপরতা সাময়িক হলেও নিয়মিত নজরদারি না থাকায় পরিস্থিতি আবারও অবনতির দিকে যায়। তাই এবার জেলা প্রশাসনের কঠোর ঘোষণা বাস্তবায়ন হলে এ চক্রগুলো ভেঙে পড়তে পারে।
এদিকে পর্যটনকেন্দ্র রক্ষায় স্থানীয়রা প্রশাসনের পাশাপাশি গণসচেতনতারও আহ্বান জানিয়েছেন। তারা মনে করছেন, কেবল অভিযান চালিয়ে সমস্যার সমাধান হবে না, বরং স্থানীয়দের সম্পৃক্ত করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও প্রশাসনকে দীর্ঘমেয়াদি উদ্যোগ নিতে হবে।
বর্তমানে সবার নজর এখন আগামী মঙ্গলবার পর্যন্ত। সময়সীমা শেষ হওয়ার পর প্রশাসন কী ধরনের পদক্ষেপ নেয়, তা নিয়েই চলছে আলোচনা।