close

লাইক দিন পয়েন্ট জিতুন!

লালমনিরহাটে সহিংসতার শিকার একটি পরিবার: ন্যায়বিচারের অপেক্ষায় নিঃস্ব ও নিরাপত্তাহীন মানুষ..

Akm Kaysarul Alam avatar   
Akm Kaysarul Alam
এ কে এম কায়সারুল আলমঃ

লালমনিরহাট জেলা শহরের ডায়াবেটিস মোড় এলাকায় ঘটে যাওয়া সাম্প্রতিক সহিংসতা এক চরম মানবিক বিপর্যয়ের চিত্র তুলে ধরেছে। মব সহিংসতার শিকার এক পরিবার সংবাদ সম্মেলন করে যে অভিযোগ এনেছে, তা শুধু ব্যক্তি বা গোষ্ঠীগত সংঘর্ষের বিষয় নয়—এটি দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি, বিচার ব্যবস্থার কার্যকারিতা ও রাজনৈতিক সংস্কৃতির ভয়াবহ অবনতির ইঙ্গিত বহন করে।

কী ঘটেছিল? ঘটনার পুঙ্খানুপুঙ্খ বিশ্লেষণ
গত সোমবার রাতে লালমনিরহাটের এক রেস্টুরেন্টে সংবাদ সম্মেলনে ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্য শাহাদাত হাবীব শাওন লিখিত বক্তব্য দেন। তিনি জানান, ২০২৩ সালের এপ্রিলে আওয়ামী লীগ-সমর্থিত কিছু ব্যক্তি তাদের বাড়িতে হামলা চালায়। এলোপাতাড়ি কোপানোর শিকার হন তার মা, নানি, দাদিসহ পরিবারের বেশ কয়েকজন।
এমন নৃশংস হামলার পরও পুলিশ মামলা নিতে গড়িমসি করে। শাওনের পরিবারের অভিযোগ, স্থানীয় সংসদ সদস্যের হস্তক্ষেপের কারণে থানায় মামলা নিতে অপারগতা প্রকাশ করা হয়। একপর্যায়ে পরিবারটি আদালতের দ্বারস্থ হয়।

এই ঘটনার জের ধরে সম্প্রতি নতুন আরেকটি সহিংসতার জন্ম হয়। গত শুক্রবার রাতে একটি গুজব ছড়িয়ে পড়ে যে, শাওনের পরিবারের হামলায় প্রতিপক্ষের একজন নিহত হয়েছে। নিষিদ্ধঘোষিত ছাত্রলীগ-সমর্থিত একদল যুবক এই গুজব উসকে দিয়ে প্রথমে শাওনের দুই ভাই সৈকত ও জিয়াকে অপহরণ করে এবং নির্মমভাবে পিটিয়ে আহত করে। পরে শতাধিক বিক্ষুব্ধ মানুষ শাওনের বাড়িসহ আরও তিনটি বাড়িতে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর ও লুটপাট চালায়।

পুলিশের ভূমিকা কতটা কার্যকর ছিল?
হামলার সময় প্রথমে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে ব্যর্থ হয়। পরিস্থিতি চরম আকার ধারণ করলে সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হয়, যা সামগ্রিক নিরাপত্তা ব্যবস্থার দুর্বলতাকে উন্মোচিত করে।
হামলাকারীরা শুধু বাড়িঘর ভাঙচুর করেই ক্ষান্ত হয়নি, স্বর্ণালংকার, নগদ টাকা ও বিভিন্ন মূল্যবান সামগ্রী লুটপাট করে নিয়ে যায়। ভুক্তভোগী পরিবারের বক্তব্য অনুযায়ী, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অতিসক্রিয়তা যেখানে দরকার ছিল, সেখানে নিষ্ক্রিয়তা ও পক্ষপাতমূলক আচরণ দেখা গেছে।

পুলিশ কেন মামলা নেয়নি? প্রশাসনের ভূমিকা কতটা নিরপেক্ষ?
শাওনের মা জমিলা বেগম সদর থানায় অভিযোগ দায়ের করলেও পুলিশ এখনো মামলা নথিভুক্ত করেনি। লালমনিরহাট সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নুরনবী জানিয়েছেন, "অভিযোগের তদন্ত চলছে, তদন্ত শেষে মামলা গ্রহণের মতো উপযুক্ত হলে অবশ্যই নেওয়া হবে।"
এই বক্তব্য পুলিশ প্রশাসনের উদাসীনতার পরিচায়ক। প্রশ্ন উঠছে, যখন বাড়ি জ্বালিয়ে দেওয়া হয়, অপহরণ করে পিটিয়ে আহত করা হয়, লুটপাট চলে—তখনো কী তদন্তের প্রয়োজন আছে? কেন তাৎক্ষণিকভাবে মামলা নথিভুক্ত করা হয়নি?

রাজনৈতিক পটভূমি ও সহিংসতার প্রকৃত কারণ
বাংলাদেশে রাজনৈতিক সহিংসতা নতুন কোনো বিষয় নয়। তবে লালমনিরহাটের এই ঘটনা আবারও প্রমাণ করল কীভাবে ক্ষমতার রাজনীতি সাধারণ মানুষের জীবন বিপর্যস্ত করে দেয়।
১. স্থানীয় রাজনীতির প্রভাব: শাওনের পরিবারের অভিযোগ, ক্ষমতাসীন দলের মদদপুষ্ট একটি চক্র দীর্ঘদিন ধরে তাদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে।
2. পুলিশের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন: এমপির হস্তক্ষেপের কারণে পুলিশ মামলা নেয়নি—এ অভিযোগ যদি সত্য হয়, তবে এটি দেশের বিচারব্যবস্থার প্রতি মানুষের আস্থা কমিয়ে দেবে।
৩. গুজব ও সহিংসতা: একটি ভুল তথ্য কীভাবে একটি পরিবারকে নিঃস্ব করে দিতে পারে, লালমনিরহাটের এই ঘটনা তার বড় উদাহরণ।

নিরাপত্তাহীনতায় চারটি পরিবার: এখন কী হবে?
বর্তমানে শাওনের পরিবারসহ পার্শ্ববর্তী তিনটি পরিবার নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। তাদের রক্ষা করার দায়িত্ব রাষ্ট্রের। প্রশাসন যদি নিরপেক্ষ তদন্ত ও সঠিক বিচার নিশ্চিত না করে, তাহলে এ ধরনের সহিংসতার পুনরাবৃত্তি হবেই।

লালমনিরহাটের এই ঘটনা বিচ্ছিন্ন কোনো ঘটনা নয়। এটি আমাদের বিচারব্যবস্থার দুর্বলতা, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অসহায়ত্ব এবং রাজনৈতিক শক্তির অপব্যবহারের একটি বাস্তব উদাহরণ।


এই ধরনের সহিংসতা বন্ধ করতে হলে গুজব নিয়ন্ত্রণ, পুলিশের নিরপেক্ষ ভূমিকা, বিচার দ্রুত সম্পন্ন করা এবং রাজনৈতিক শক্তির অপব্যবহার বন্ধ করা জরুরি।
যদি প্রশাসন ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে ব্যর্থ হয়, তবে সাধারণ জনগণ ভবিষ্যতে আরও বেশি নিরাপত্তাহীনতায় পড়বে এবং এর দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের সামগ্রিক রাজনৈতিক পরিবেশে।

Bristy rahman
Bristy rahman 5 months ago
Sad
1 0 Reply
Show more