close

লাইক দিন পয়েন্ট জিতুন!

কুমিল্লার ১১ আসনে বিএনপির পুনরুত্থান, মাঠে সক্রিয় জামায়াত ও এনসিপি..

এইচ,এম,এ ভূঁইয়া avatar   
এইচ,এম,এ ভূঁইয়া
নেতৃত্ব প্রতিযোগিতায় উত্তাপ, মনোনয়ন দৌড়ে বিএনপিতে নতুন মুখের উত্থান

কুমিল্লা জেলার ১১টি সংসদীয় আসনে রাজনৈতিক উত্তাপ বাড়ছে। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা মাঠে অনুপস্থিত থাকায় বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী এবং নবাগত জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) নিজেদের সাংগঠনিক ভিত্তি পুনর্গঠনে সক্রিয়। ১৭টি উপজেলা ও ১৮টি থানা নিয়ে গঠিত এই বৃহৎ জেলায় মনোনয়ন দৌড়ে নেতৃত্ব প্রতিযোগিতা এখন তুঙ্গে।

কুমিল্লা–১ (দাউদকান্দি ও মেঘনা)
এই আসনে বিএনপির দীর্ঘদিনের পরিচিত মুখ সাবেক মন্ত্রী জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন। বার্ধক্যজনিত কারণে তাঁর মাঠপর্যায়ের সক্রিয়তা কিছুটা সীমিত।  
এই প্রেক্ষাপটে আলোচনায় উঠে এসেছে তাঁর ছেলে খন্দকার মারুফ হোসেনের নাম, যিনি বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য। তিনি নিয়মিত দাউদকান্দি ও মেঘনা এলাকায় গণসংযোগ ও দলীয় কার্যক্রমে অংশ নিচ্ছেন।  
জামায়াতে ইসলামী এখানে মনিরুজ্জামান বাহলুলকে কেন্দ্র করে সংগঠন পুনর্গঠনের চেষ্টা চালাচ্ছে। তিনি দাউদকান্দি উপজেলা জামায়াতের আমির হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। এনসিপির তেমন কোনো দৃশ্যমান তৎপরতা নেই।তবে ইসলামী আন্দোলন মাঠে সক্রিয়।

কুমিল্লা–২ (হোমনা ও তিতাস)
এই আসনে বিএনপির রাজনৈতিক ভিত্তি দৃঢ়। দলের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অধ্যক্ষ মো. সেলিম ভূঁইয়ার নেতৃত্বে মাঠপর্যায়ে দল সক্রিয়।  
তৃণমূলের পছন্দের তালিকায় রয়েছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার এপিএস–২ আব্দুল মতিন খান।  
মনোনয়নপ্রত্যাশীদের মধ্যে আরও রয়েছেন সাবেক মন্ত্রী মরহুম এম কে আনোয়ার হোসেনের ছেলে মাহমুদ আনোয়ার (কাইজার) এবং হোমনা উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আজিজুর রহমান মোল্লা।  
জামায়াতের নাজিম উদ্দিন মোল্লা কেন্দ্রীয় মজলিশে শুরা সদস্য হিসেবে সংগঠনের পক্ষ থেকে নির্বাচনী প্রস্তুতি নিচ্ছেন। এনসিপির এখন পর্যন্ত তেমন কোনো সাংগঠনিক তৎপরতা নেই। 

কুমিল্লা–৩ (মুরাদনগর)
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান কায়কোবাদ দেশে ফিরে মাঠে সক্রিয়। এনসিপির আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়ার সম্ভাব্য প্রার্থিতা নিয়ে আলোচনা থাকলেও তিনি ঢাকায় নির্বাচন করার ইঙ্গিত দিয়েছেন।  
জামায়াতের ইউসুফ হাকিম সোহেল কুমিল্লা উত্তর জেলা কর্মপরিষদের সদস্য এবং উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান হিসেবে নির্বাচনী মাঠে সক্রিয়।

কুমিল্লা–৪ (দেবীদ্বার)
এনসিপির দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ নিয়মিত সভা-সমাবেশে অংশ নিচ্ছেন এবং সামাজিক কর্মকাণ্ডে যুক্ত।  
বিএনপির মধ্যে গ্রুপিং রয়েছে, মনোনয়নপ্রত্যাশী মঞ্জুরুল আহসান মুন্সি, তারেক মুন্সি, রিজভীউল আহসান মুন্সি ও আবদুল আউয়াল খান।  
জামায়াতের সাইফুল ইসলাম শহীদ কুমিল্লা উত্তর জেলা জামায়াতের সেক্রেটারি হিসেবে দলীয়ভাবে সক্রিয় রয়েছেন।

কুমিল্লা–৫ (বুড়িচং–ব্রাহ্মণপাড়া)
বিএনপির মধ্যে কোন্দল রয়েছে। মনোনয়নপ্রত্যাশী আলাউদ্দিন ভূঁইয়া, মিজানুর রহমান, জসিম উদ্দিনসহ কয়েকজন।  
জামায়াতের মোবারক হোসেন ছাত্রশিবিরের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি হিসেবে তরুণ নেতৃত্বের প্রতীক। তিনি নির্বাচনী মাঠে সক্রিয় রয়েছেন। তবে এন সি পির তেমন কোনো তৎপরতা দৃশ্যমান নয়। 

কুমিল্লা–৬ (সদর)
বিএনপির আমিন–উর রশিদ ইয়াছিন দীর্ঘদিন ধরে নেতৃত্বে আছেন। বহিষ্কৃত সাক্কু ও শাহ মো. সেলিমও মনোনয়নপ্রত্যাশী।  
জামায়াতের কাজী দ্বীন মোহাম্মদ মহানগর জামায়াতের আমির হিসেবে প্রতিদিনই গণসংযোগ করছেন।  
এনসিপির তেমন কোনো তৎপরতা নেই, যদিও ইসলামী আন্দোলন, হেফাজতে ইসলাম ও এবি পার্টির নেতাকর্মীরা মাঠে সক্রিয়।

কুমিল্লা–৭ (চান্দিনা)
এলডিপির রেদোয়ান আহমেদ ও বিএনপির আতিকুল আলম শাওনের মধ্যে বিরোধ রয়েছে।  
জামায়াতের মাওলানা মোশাররফ হোসেন স্থানীয় পর্যায়ে পরিচিত এবং সংগঠনের মনোনীত প্রার্থী হিসেবে মাঠে রয়েছেন।এনসিপির তেমন কোন তৎপরতা নেই। 

কুমিল্লা–৮ (বরুড়া)
জাকারিয়া তাহের (সুমন) বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী। যুবদলের মুরতাজুল করিমও মনোনয়ন চান।  
জামায়াতের রয়েছেন  শফিকুল আলম, হেলাল ইবনে তাইমিয়া স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ এবং স্থানীয়ভাবে পরিচিত।  
এনসিপির ছাত্রসংগঠন গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদের আহ্বায়ক আবু বাকের মজুমদারের বাড়ি বরুড়ায় হলেও দলীয় তৎপরতা দৃশ্যমান নয়।

কুমিল্লা–৯ (লাকসাম–মনোহরগঞ্জ)
বিএনপির মধ্যে দীর্ঘদিনের গ্রুপিং। মনোনয়নপ্রত্যাশী আবুল কালাম, রশিদ আহমদ, সফিকুর রহমান ও এ কে এম জাহাঙ্গীর।  
জামায়াতের সরওয়ার উদ্দিন ছিদ্দিকী কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা জামায়াতের সেক্রেটারি হিসেবে নির্বাচনী মাঠে সক্রিয়।  
এনসিপি এখনো এখানে সংগঠনগতভাবে সক্রিয় হয়নি।

কুমিল্লা–১০ (নাঙ্গলকোট, সদর দক্ষিণ ও লালমাই)
বিএনপির মনিরুল হক চৌধুরী, আবদুল গফুর ভূঁইয়া ও মোবাশ্বের আলম ভূঁইয়া মনোনয়নপ্রত্যাশী।  
জামায়াতের ইয়াসিন আরাফাত ছাত্রশিবিরের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি হিসেবে সংগঠনের মনোনীত মুখ।  
এনসিপির জয়নাল আবেদীন দলটির যুগ্ম সদস্যসচিব হিসেবে নিয়মিত গণসংযোগ করছেন।

কুমিল্লা–১১ (চৌদ্দগ্রাম)
জামায়াতের সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের কেন্দ্রীয় নায়েবে আমির হিসেবে একক প্রার্থী। তিনি ২০০১ ও ২০১৮ সালে চারদলীয় জোটের প্রার্থী ছিলেন।  
বিএনপির কামরুল হুদা, গোলাম কাদের চৌধুরী ও কাজী নাসিমুল হক মনোনয়নপ্রত্যাশী।  
এনসিপির এখানে এখনো সংগঠনগত তৎপরতা শুরু হয়নি।

সারসংক্ষেপ:  
বিএনপি কুমিল্লার ১১টি আসনে সাংগঠনিকভাবে শক্তিশালী অবস্থানে রয়েছে।তবে প্রায় সব আসনেই রয়েছেন একাধিক মুখ,নির্বাচনের পূর্বে দলীয় কোন্দল মিটাতে না পাড়লে  আগামী নির্বাচনে প্রভাব পড়তে পারে বলে মনে করছেন অনেকেই। জামায়াতে ইসলামী প্রতিটি আসনে দলীয়ভাবে একক প্রার্থী চূড়ান্ত করেছে এবং মাঠে সক্রিয়। এনসিপি তিনটি আসনে দৃশ্যমান তৎপরতা চালালেও বেশ কয়েকটি এলাকায় সংগঠনগত প্রস্তুতি এখনও প্রাথমিক পর্যায়ে।

Keine Kommentare gefunden


News Card Generator