কুমিল্লায় সনাতনী নারী ধর্ষণের ঘটনায় প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে; বিচার দাবি করছে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়।..

পুলক শেখ avatar   
পুলক শেখ
কুমিল্লার মুরাদনগরের এক সনাতনী নারীকে ঘরে ঢুকে ধর্ষণ এবং ভিডিও ছড়িয়ে দেওয়ার ঘটনার প্রতিবাদে ২৯ জুন বিকেল ৫টায় রাণীর বাজারে সংখ্যালঘু ঐক্য মোর্চার ব্যানারে একটি বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়। মিছিলটি নগরীর..

কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার রামচন্দ্রপুর দক্ষিণ ইউনিয়নের বাহেরচর পাচকিত্তা গ্রামে এক সনাতনী নারীকে বিবস্ত্র করে ধর্ষণের জঘন্য ঘটনা কেবল স্থানীয় জনগণের নয়, সারা দেশের মানুষের মনোযোগ আকর্ষণ করেছে। এই ঘটনার প্রতিবাদে এবং ধর্ষকদের দ্রুত গ্রেপ্তার ও শাস্তির দাবিতে আজ রোববার, ২৯ জুন, কুমিল্লা নগরীতে এক বিশাল বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়েছে। 

বিকেল ৫টায় কুমিল্লার রাণীর বাজার রামঠাকুরের আশ্রম থেকে সংখ্যালঘু ঐক্য মোর্চার ব্যানারে শুরু হওয়া এই মিছিলটি নগরীর প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে কান্দিরপাড় পূবালী চত্বরে এসে শেষ হয়। মিছিলে অংশগ্রহণকারীরা বিভিন্ন স্লোগান দিয়ে তাদের প্রতিবাদ জানান, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল 'আমার বোন ধর্ষিতা কেন; প্রশাসন জবাব চাই', 'আমার সোনার বাংলায়, ধর্ষকের ঠাঁই নাই', 'সারা বাংলায় খবর দে, ধর্ষকের ফাঁসি দে', 'হ্যাং দ্য রেপিস্ট, উই ওয়ান্ট জাস্টিস'। 

সনাতন সম্প্রদায়ের নেতৃবৃন্দ তাদের বক্তব্যে বলেন, “প্রত্যেক ধর্ষিত মা-বোনের পাশে আমরা আছি। তাদের ন্যায়বিচারের জন্য আমরা রাস্তায় থাকবো। ধর্ষক ফজর আলী এবং ঘটনার সঙ্গে জড়িত সকলকে দ্রুত গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে।” তারা আরও বলেন, “এটাই যেন এদেশে এ ধরনের শেষ ঘটনা হয়। বিচারহীনতার সংস্কৃতি থেকে বের হয়ে এ ধরনের অপরাধের বিরুদ্ধে কঠোর সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে।”

এই বিক্ষোভ সমাবেশে বক্তব্য রাখেন চন্দন কুমার রায়, সভাপতি, বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদ, কুমিল্লা জেলা শাখা, অধ্যক্ষ তাপস কুমার বকসী, সাধারণ সম্পাদক, ঐক্য পরিষদ কুমিল্লা জেলা, এডভোকেট বিকাশ সাহা ও কমল চন্দ খোকন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, ঐক্য পরিষদ, এবং অমল দত্ত, সভাপতি, বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ, কুমিল্লা মহানগর শাখা। 

তারা উল্লেখ করেন, দেশে প্রতিনিয়ত ধর্ষণের মতো জঘন্য অপরাধের পুনরাবৃত্তি ঘটছে, যার মূল কারণ বিচারহীনতা। তারা জানান, এই ধরনের ঘটনার বিরুদ্ধে তাদের প্রতিবাদ ভবিষ্যতেও অব্যাহত থাকবে। সমাবেশ থেকে ধর্ষণের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপের পাশাপাশি, সামাজিকভাবে ঐক্যবদ্ধ হয়ে প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানানো হয়। নেতারা বলেন, “আমরা সমাজের সকল স্তরে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে চাই এবং এই ধরনের অপরাধের বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষকে সংঘবদ্ধ করতে চাই।”

এই ঘটনা কেবল স্থানীয় স্তরে নয়, জাতীয় স্তরেও একটি বড় প্রশ্নচিহ্ন তৈরি করেছে। বিচারহীনতার সংস্কৃতি এবং সামাজিক প্রতিরোধের অভাবই কি এই ধরনের অপরাধের পুনরাবৃত্তি ঘটাচ্ছে? সমাজবিজ্ঞানীরা মনে করেন, এই ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে কেবল আইনেই নয়, জনসচেতনতা এবং সামাজিক দায়বদ্ধতাও অত্যন্ত জরুরি। সমাজের প্রতিটি স্তরে নারীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে এবং এ ধরনের অপরাধের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে। 

এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে সরকার এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে দ্রুত ও কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। অপরাধীদের দ্রুত গ্রেপ্তার এবং কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। একই সাথে, সমাজের সকল স্তরে নারীর প্রতি সম্মান এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।

Ingen kommentarer fundet