close

লাইক দিন পয়েন্ট জিতুন!

ক্ষুধামুক্ত বিশ্ব গঠনে মুহাম্মদ ইউনূসের ছয় দফা প্রস্তাব..

Mahamud Mithu avatar   
Mahamud Mithu
প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস ইতালির রোমে বিশ্ব খাদ্য ফোরামে ছয় দফা প্রস্তাব পেশ করেন, যা বৈশ্বিক খাদ্য ও অর্থনৈতিক কাঠামো সংস্কারের আহ্বান জানায়।..

বিশ্বব্যাপী ক্ষুধা ও দারিদ্র্য দূরীকরণে একটি শক্তিশালী প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন নোবেল পুরস্কার বিজয়ী প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস। সম্প্রতি, তিনি ইতালির রোমে অবস্থিত জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) সদর দপ্তরে আয়োজিত বিশ্ব খাদ্য ফোরাম (ডব্লিউএফএফ) ২০২৫-এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে মূল বক্তব্য প্রদান করেন। এই বক্তৃতায় তিনি একটি 'তিন-শূন্য বিশ্ব' গড়ার আহ্বান জানান, যেখানে শূন্য দারিদ্র্য, শূন্য বেকারত্ব ও শূন্য কার্বন নিঃসরণ থাকবে।

### ছয় দফা প্রস্তাব

প্রফেসর ইউনূস বৈশ্বিক খাদ্য ও অর্থনৈতিক কাঠামো সংস্কারের জন্য ছয় দফা প্রস্তাব পেশ করেন।

১. **যুদ্ধ বন্ধ করুন, সংলাপ শুরু করুন**: সংঘাতপূর্ণ অঞ্চলে খাদ্য পৌঁছানোর ব্যবস্থা করতে হবে।

২. **টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জন**: জলবায়ু সংকট মোকাবিলায় কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে এবং ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীকে টিকে থাকার সক্ষমতা গড়ে তুলতে সহায়তা করতে হবে।

৩. **আঞ্চলিক খাদ্য ব্যাংক গঠন**: খাদ্য সরবরাহ চেইন স্থিতিশীল রাখতে আঞ্চলিক খাদ্য ব্যাংক গঠন করতে হবে।

৪. **তরুণ কৃষি উদ্যোক্তা ও স্থানীয় ব্যবসায়ীদের সহায়তা**: অর্থায়ন, অবকাঠামো ও বৈশ্বিক অংশীদারত্বের মাধ্যমে তরুণ উদ্যোক্তাদের সহায়তা দিতে হবে।

৫. **রপ্তানি নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার**: বাণিজ্যনীতিকে খাদ্য নিরাপত্তার সহায়ক হতে হবে।

৬. **প্রযুক্তি ও উদ্ভাবনের সুযোগ নিশ্চিতকরণ**: গ্লোবাল সাউথের তরুণ কৃষক ও উদ্যোক্তাদের জন্য প্রযুক্তি ও উদ্ভাবনের সুযোগ নিশ্চিত করতে হবে।

### অর্থনৈতিক কাঠামোর পুনর্বিবেচনা

প্রফেসর ইউনূস বলেন যে, ক্ষুধা কোনো অভাবের কারণে নয়, এটি বর্তমান অর্থনৈতিক কাঠামোর ব্যর্থতা। তিনি উল্লেখ করেন, ২০২৪ সালে ৬৭৩ মিলিয়ন মানুষ ক্ষুধার্ত ছিল, অথচ যথেষ্ট খাদ্য উৎপাদিত হয়েছে। তার মতে, অস্ত্রের জন্য বিশ্বব্যাপী ব্যয় হয়েছে ২ দশমিক ৭ ট্রিলিয়ন ডলার, যা ক্ষুধা দূরীকরণে ব্যয় করা হলে পরিস্থিতি ভিন্ন হতে পারত।

### সামাজিক ব্যবসার গুরুত্ব

প্রফেসর ইউনূস তার বক্তব্যে সামাজিক ব্যবসার গুরুত্ব তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ‘আমাদের এমন এক নতুন ব্যবসা পদ্ধতি গড়ে তুলতে হবে— সামাজিক ব্যবসা, যা ব্যক্তিগত মুনাফার জন্য নয়, বরং সমাজের সমস্যা সমাধানের জন্য।’ তিনি উল্লেখ করেন, বাংলাদেশে সামাজিক ব্যবসার সাফল্য ইতিমধ্যে দেখা গেছে, যেখানে গ্রামীণ ব্যাংক দরিদ্র নারীদের উদ্যোক্তা হতে সহায়তা করেছে এবং গ্রামীণ দানোন শিশু অপুষ্টির বিরুদ্ধে কাজ করছে।

### তরুণদের ভূমিকা

অধ্যাপক ইউনূস তরুণদের ক্ষমতায়নের ওপর জোর দিয়ে বলেন, ‘আজকের তরুণ প্রজন্ম অনেক বেশি সংযুক্ত, সৃজনশীল ও প্রযুক্তিনির্ভর। তাদের চাকরি খোঁজার কথা বলবেন না, বরং চাকরি সৃষ্টির ক্ষমতায়ন করুন।’ তিনি উল্লেখ করেন, তরুণদের বিনিয়োগ তহবিল ও সামাজিক ব্যবসা তহবিলের মাধ্যমে মূলধনে প্রবেশাধিকার দিতে হবে।

### বাংলাদেশে খাদ্য নিরাপত্তা

অধ্যাপক ইউনূস বলেন, বাংলাদেশ আজ ১৭ কোটি মানুষের খাদ্য নিশ্চিত করছে এবং মিয়ানমারের সহিংসতা থেকে পালিয়ে আসা ১৩ লাখ রোহিঙ্গাকেও আশ্রয় ও খাদ্য সহায়তা দিচ্ছে। তিনি উল্লেখ করেন, বাংলাদেশ ধান উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়েছে এবং কৃষিতে যান্ত্রিকীকরণ ও সবুজায়ন সম্পন্ন করেছে।

অধ্যাপক ইউনূসের প্রস্তাবনা ও দৃষ্টিভঙ্গি আমাদেরকে একটি নতুন বিশ্ব গঠনের পথে এগিয়ে নিতে পারে, যেখানে খাদ্য নিরাপত্তা, অর্থনৈতিক সমতা ও পরিবেশ সুরক্ষিত থাকবে। তার বক্তব্য ও প্রস্তাবনা একটি নতুন অর্থনৈতিক কাঠামোর দিকে নির্দেশ করে, যা সামাজিক পরিবর্তন ও উন্নয়নের জন্য অপরিহার্য।

لم يتم العثور على تعليقات


News Card Generator