নিজস্ব প্রতিবেদক:: সুনামগঞ্জ করোনাকালে যখন দেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যায়, তখন হতাশায় ডুবে যান অনার্স দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র আরিফ বাদশা। স্বপ্ন ভেঙে পড়তে থাকে, জীবনের গতি থেমে যায়। কিন্তু এক বন্ধুর পরামর্শ তার জীবনে মোড় ঘুরিয়ে দেয়। সুনামগঞ্জ যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের তিন মাস মেয়াদি গবাদি পশু পালনের প্রশিক্ষণ নিয়ে শুরু হয় তার নতুন যাত্রা। জামালগঞ্জ উপজেলার উত্তর ইউনিয়নের সাচনা গ্রামের আব্দুল মতিনের ছেলে আরিফ বাদশার ছোটবেলার স্বপ্ন ছিল উচ্চশিক্ষা শেষে সরকারি চাকরির মাধ্যমে দেশের সেবা করা। সিলেট দক্ষিণ সুরমা কলেজ থেকে গ্রাজুয়েশন শেষ করে বর্তমানে সিলেট ল কলেজে অধ্যয়নরত এই তরুণ জানান, "করোনার সময় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে গেলে বুঝতে পারছিলাম না কী করব। তখন এক বন্ধুর পরামর্শে যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের প্রশিক্ষণে ভর্তি হই। সেখান থেকেই শুরু আমার নতুন পথচলা।" ২০২১ সালের জুনে গবাদি পশু, মাছ ও হাঁস পালনের প্রশিক্ষণ শেষ করে পরিবারের সহায়তা ও টিউশনির জমানো টাকা দিয়ে চারটি গাভী কিনে প্রতিষ্ঠা করেন ‘গোয়াল ডেইরি ফার্ম’। প্রথমদিকে যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর থেকেও ৫০ হাজার টাকা ঋণ পান। এরপর বাড়ির পিছনে সমন্বিত কৃষি খামার গড়ে তোলেন — গবাদি পশু পালন, ধান চাষ, মাছ চাষ ও হাঁস পালন একসাথে। বর্তমানে তার খামারে ১৪টি গবাদি পশু, ১৫ শতক পুকুরে নিয়মিত মাছ উৎপাদন হয় এবং প্রতি বছর ৪-৫ হাজার হাঁস পালন করেন। এই সব মিলিয়ে তার বাৎসরিক আয় প্রায় ১০ লক্ষ টাকা। তার ফার্মের সম্পদের পরিমাণ এখন প্রায় অর্ধ কোটি টাকা, ঋণ রয়েছে মাত্র ৮০ হাজার টাকা। শুধু নিজের সাফল্যেই থেমে থাকেননি আরিফ। গত দুই বছরে জামালগঞ্জ যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের সহযোগিতায় তিনি ৫ শতাধিক তরুণ-তরুণীকে কৃষি প্রশিক্ষণ দিয়েছেন, যার মধ্যে প্রায় ৩০ জন নিজস্ব ব্যবসা শুরু করেছেন। তার এই অবদানের জন্য গত বছর উপজেলায় ‘সফল আত্মকর্মী উদ্যোক্তা’ হিসেবে পুরস্কৃত হন। এ বছর ১২ আগস্ট জেলা পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ যুব উদ্যোক্তা হিসেবে ক্রেস্ট ও সম্মাননা স্মারক লাভ করেছেন। এছাড়া বিভিন্ন সময় স্বেচ্ছাসেবামূলক কাজের জন্যও সম্মাননা পেয়েছেন। আরিফ বাদশা বলেন, "আমার এই সাফল্যের পেছনে যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের অবদান রয়েছে। আল্লাহ তায়ালার কাছে কৃতজ্ঞ, আর আমার বাবা-মা ও শুভানুধ্যায়ীদের প্রতি ভালোবাসা রইল।
close
ভিডিও আপলোড করুন পয়েন্ট জিতুন!
Keine Kommentare gefunden