close

ভিডিও আপলোড করুন পয়েন্ট জিতুন!

ক্রিকেটে ইতালির পথচলা!

Mehedi Hasan avatar   
Mehedi Hasan
ইউরোপের দেশ ইতালি সাধারণত পরিচিত ফুটবলের রাজত্ব হিসেবে। চারবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন দেশটি এবার চমক দেখাল ক্রিকেটে! ২০২৬ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের মূল পর্বে জায়গা করে নিয়েছে ইতালি..

অনেকেই অবাক হয়ে প্রশ্ন করছেন— ইতালি ক্রিকেট খেলেও নাকি?

ক্রিকেটবিশ্বে এটি নিঃসন্দেহে একটি চমক। তবে এই চমকের পেছনে রয়েছে দীর্ঘ পথচলা আর অভিবাসীদের অবদান। বর্তমানে আইসিসি টি-টোয়েন্টি র‌্যাঙ্কিংয়ে ২৮তম অবস্থানে থাকা ইতালি ৯৬টি সহযোগী দেশের মধ্যে অনেককেই পেছনে ফেলেছে। খেলাটির প্রতি দেশটিতে ধীরে ধীরে আগ্রহ বাড়ছে, বিশেষ করে তরুণদের মাঝে। বিশ্বমঞ্চে তাদের এই প্রথম পদচারণা হতে পারে দীর্ঘ পথের সূচনা।

বাধার পাহাড় পেরিয়ে এগিয়ে চলা

ইতালিতে ক্রিকেটের জনপ্রিয়তা বাড়লেও প্রতিটি পথেই ছিল বাঁধা। দেশটির উত্তর-পূর্বাঞ্চলের শহর মনফালকোনে ক্রিকেট ছিল নিষিদ্ধ! সেখানকার মেয়র আন্না মারিয়া চিসিন্ত এক সময় সাফ জানিয়ে দিয়েছিলেন—‘ক্রিকেট ইতালির জন্য নয়।’ তার দাবি ছিল, জায়গার অভাব রয়েছে, বাজেট নেই এবং ক্রিকেট বল নাকি বিপজ্জনক!

শুধু নিষেধেই থেমে থাকেননি তিনি—শহরে কেউ ক্রিকেট খেললে ১০০ ইউরো পর্যন্ত জরিমানার নির্দেশনাও ছিল। এই শহরের একটি বড় অংশ অভিবাসী, বিশেষ করে বাংলাদেশি মুসলিমরা সংখ্যায় অনেক। দলীয় অধিনায়ক মিয়া বাপ্পি বলেছিলেন, স্থানীয়দের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ‘এই শহরে তোমাদের খেলা কেউ চায় না।’

 শতবর্ষ পুরোনো ক্রিকেট সংস্কৃতি

এই একটি শহরের প্রতিক্রিয়া দিয়ে পুরো ইতালির ক্রিকেট বাস্তবতা বোঝা যাবে না। বরং, দেশটিতে ক্রিকেটের শিকড় বেশ গভীর। ১৭৯৩ সালে নেপলস শহরে ব্রিটিশ নৌসেনারা প্রথম ক্রিকেট ম্যাচ খেলেছিল। এরপর ১৮২০ সালে গঠিত হয় রোম ক্রিকেট ক্লাব।
১৯ শতকের শেষভাগে ব্রিটিশ অভিজাতদের হাত ধরে ইতালির উচ্চবিত্ত সমাজে ক্রিকেট প্রবেশ করে। ঐতিহ্যবাহী ক্লাব জেনোয়া এফসি একসময় পরিচিত ছিল ‘জেনোয়া ক্রিকেট অ্যান্ড অ্যাথলেটিক ক্লাব’ নামে। এমনকি বিখ্যাত এসি মিলান-এরও শুরুর নাম ছিল ‘মিলান ফুটবল অ্যান্ড ক্রিকেট ক্লাব’।

বর্তমানে ইতালিতে ১০০টির বেশি ক্রিকেট ক্লাব এবং কয়েক হাজার নিবন্ধিত খেলোয়াড় রয়েছে।
১৯৮০ সালে সিমোন গাম্বিনোর নেতৃত্বে প্রতিষ্ঠিত হয় ইতালিয়ান ক্রিকেট ফেডারেশন, এবং ১৯৮৪ সালে আইসিসির সহযোগী সদস্যপদ লাভ করে।

অভিবাসী খেলোয়াড়দের শক্ত ভিত

ইতালির ক্রিকেট দল গঠনে বড় ভূমিকা রেখেছে অভিবাসী ও উপমহাদেশীয় পটভূমির খেলোয়াড়রা।
দলের অধিনায়ক জো বার্নস এক সময় অস্ট্রেলিয়ার হয়ে ২৩টি টেস্ট খেলেছেন। মায়ের ইতালিয়ান বংশ পরিচয়ের সূত্রে নাগরিকত্ব নিয়ে এখন নেতৃত্ব দিচ্ছেন ইতালিকে। বার্নস এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন প্রয়াত ভাইকে সম্মান জানাতে।

বার্নস বলেন: ‘এই অর্জন শুধু আমাদের জন্য নয়, ভবিষ্যতের খেলোয়াড়দের জন্য একটি অনুপ্রেরণা।’ তার সঙ্গে রয়েছেন ইংল্যান্ডে খেলা এমিলিও গে, হ্যারি ও বেন মানেনতি, মার্কাস কাম্পোপিয়ানো, টমাস ড্রাকা, ও গ্র্যান্ট স্টুয়ার্ট—যারা ইতালির জার্সিতে প্রতিনিধিত্ব করছেন।

শক্তিশালী কোচিং দল

ইতালির কোচিং স্টাফেও রয়েছে বৈচিত্র্য ও অভিজ্ঞতা। প্রধান কোচ হিসেবে আছেন জন ডেভিসন, যিনি এক সময় কানাডার অধিনায়ক ছিলেন।
তার সহকারী কেভিন ও’ব্রায়েন, আইরিশ ক্রিকেট ইতিহাসের অন্যতম সেরা পারফর্মার।
এ ছাড়া তথ্য বিশ্লেষকের দায়িত্ব পালন করছেন মহসিন শেখ, যিনি এর আগে বাংলাদেশ ও আফগানিস্তান জাতীয় দলের সাথেও কাজ করেছেন।

Aucun commentaire trouvé