নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জে যুবদল নেতা শাহাব উদ্দিনের ওপর হত্যাচেষ্টা ও বিএনপি নেতাদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রমূলক প্রচারণার প্রতিবাদে পৃথক দুটি সংবাদ সম্মেলন ও বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে।
রবিবার (১৭ আগস্ট) বিকেল ৪টার দিকে বসুরহাট হাসপাতাল গেইট সংলগ্ন একটি চা দোকানে বসে থাকার সময় চর এলাহী ইউনিয়ন যুবদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মো. শাহাব উদ্দিনের ওপর প্রাণঘাতী হামলার ঘটনা ঘটে। প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাতে জানা যায়, চর এলাহী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান তোতা মিয়ার ছেলে মো. ইব্রাহিম ও তার সহযোগীরা পেছন থেকে ধারালো খুর দিয়ে তাকে হত্যার চেষ্টা চালায়। এতে শাহাব উদ্দিনের কান, মুখ ও গলায় গুরুতর জখম হয়।
স্থানীয়রা দ্রুত তাকে উদ্ধার করে বসুরহাট সরকারি হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক উন্নত চিকিৎসার জন্য নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে পাঠান।
এ ঘটনার প্রতিবাদে বিকেল ৫টায় নোয়াখালী-৫ আসনের সম্ভাব্য সংসদ সদস্য পদপ্রার্থী আলহাজ ফখরুল ইসলাম নিজ বাসভবনে জরুরি সংবাদ সম্মেলন করেন। তিনি অভিযোগ করে বলেন, “চর এলাহী ইউনিয়নের তোতা চেয়ারম্যানের ছেলেরা সাবেক বিএনপি সভাপতি ও সম্পাদকের মদদে এসব সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালাচ্ছে। আওয়ামী লীগ আমলে এরা আওয়ামী লীগের ছায়াতলে থেকে নানা অপকর্মে জড়িত ছিল। এখন বিএনপির নাম ভাঙিয়ে দলকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে।” এ সময়ে উপস্থিত ছিলেন আফতাব আহমেদ বাচ্চুসহ সাংবাদিক মহল।
তিনি হামলাকারীদের দ্রুত গ্রেপ্তার ও আইনানুগ শাস্তির দাবি জানান।
পরে বাদ মাগরিব বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশে ফখরুল ইসলাম হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, “এই সন্ত্রাসীদের অন্যতম মাদর দাতা বজলুল রহমান চৌধুরী আবেদ। তার ছত্রছায়ায় থেকেই তারা সাহস পাচ্ছে। যদি উপজেলা বিএনপির কমিটিতে সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজ ও ভূমিদস্যুদের জায়গা দেওয়া হয়, তাহলে কঠোর আন্দোলনসহ প্রয়োজনে হরতাল কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।”
তিনি আরও বলেন, গত তিন বছরে যারা কমিটির নাম ব্যবহার করে সন্ত্রাসীদের প্রশ্রয় দিয়ে কোম্পানীগঞ্জের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নষ্ট করেছে, তাদের নতুন কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত না করার জন্য তিনি কেন্দ্রীয় নেতাদের প্রতি আহ্বান জানান।
এদিকে সোমবার (১৮ আগস্ট) সকাল ১০টায় উপজেলা ও বসুরহাট পৌরসভা বিএনপির যৌথ উদ্যোগে পৃথক আরেকটি সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন উপজেলা বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক নুরুল আলম শিকদার। উপস্থিত ছিলেন উপজেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম সদস্য সচিব জাহাঙ্গীর আলম, পৌর বিএনপির আহ্বায়ক আব্দুল মতিন লিটন, সদস্য সচিব আব্দুল্লাহ আল মামুনসহ উপজেলা ও পৌরবিএনপির অঙ্গ সংগঠনের শীর্ষ নেতারা।
সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা অভিযোগ করে বলেন, কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সদস্য আলহাজ্ব ফখরুল ইসলাম পরিকল্পিতভাবে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য প্রয়াত বর্ষীয়ান নেতা মওদুদ আহমদ, পল্লি উন্নয়ন বিষয়ক সম্পাদক বজলুল করিম চৌধুরী আবেদসহ নোয়াখালী জেলা, উপজেলা ও পৌর বিএনপির শীর্ষ নেতাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা, বানোয়াট, কুরুচিপূর্ণ ও ষড়যন্ত্রমূলক প্রচারণা চালাচ্ছে।
তারা আরো বলেন জামায়াত থেকে এসে বিএনপির মাঝে দ্বন্দ্ব তৈরি করে আবার জামাতে ফিরে যাওয়ার জন্য পায়তারা করছে বলে অভিযোগ করেন।
এদিকে ঘটে যাওয়া ঘটনার দোষীদের শাস্তির দাবিও জানানো হয়।
তারা বলেন, ত্যাগী ও পরীক্ষিত নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রমূলক অপপ্রচার কোনোদিন সফল হবে না। ফখরুল ইসলামের সংবাদ সম্মেলনের কঠোর নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই।
বক্তারা সংগঠনের ভেতর বিভাজনের চেষ্টা ব্যর্থ করে ঐক্য সুদৃঢ় রেখে আগামীর আন্দোলনকে বেগবান করার আহ্বান জানান।
এক দিনের ব্যবধানে অনুষ্ঠিত এই দুটি পৃথক সংবাদ সম্মেলন থেকে বিএনপি নেতারা একদিকে শাহাব উদ্দিনের ওপর হামলার নিন্দা জানিয়েছেন, অন্যদিকে ষড়যন্ত্রমূলক অপপ্রচারের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে কোম্পানীগঞ্জে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের ঘোষণা দিয়েছেন।