close

লাইক দিন পয়েন্ট জিতুন!

কনস্টেবলকে ‘স্যার’ ডেকে ধরা পড়লেন এসআই পরিচয়ধারী তানিয়া..

আই নিউজ বিডি ডেস্ক  avatar   
আই নিউজ বিডি ডেস্ক
বোরকা পরে এসআই সেজে থানায় ঢুকে কনস্টেবলকে ‘স্যার’ বলতেই সন্দেহ! ধরা খেলো ভুয়া নারী পুলিশ তানিয়া, উদ্ধার হলো পুলিশের ইউনিফর্ম ও সরঞ্জাম।..

পুলিশ সদস্যদের পোশাক পরে, মুখ ঢাকা বোরকার আড়ালে। যেন ঠিক সিনেমার দৃশ্য। কিন্তু সেটি বাস্তবে ঘটেছে গাজীপুরে। জয়দেবপুর থানায় বৃহস্পতিবার রাত ১০টার দিকে এক নারীর আগমন ঘটে—যিনি এসেছিলেন অভিযোগ জানাতে, তবে ঘটনাক্রমে উল্টো নিজেই হয়ে গেলেন আসামি।

এই নারীর নাম তানিয়া (২৭)। নিজেকে তিনি নারী উপপরিদর্শক (এসআই) পরিচয় দিয়েছিলেন। অভিযোগের বিষয় ছিল টাকা-পাওনা। কিন্তু থানায় ঢুকে একজন কনস্টেবলকে ‘স্যার’ বলে সম্বোধন করার পর থেকেই ঘটনার মোড় ঘুরে যায়।

দায়িত্বরত অফিসারদের সন্দেহ হয়—কারণ, পুলিশের অভ্যন্তরীণ আচরণবিধিতে একজন এসআই সাধারণত একজন কনস্টেবলকে ‘স্যার’ বলেন না। তখনই শুরু হয় জিজ্ঞাসাবাদ ও তল্লাশি।

নারী পুলিশ সদস্যের সহায়তায় তানিয়ার শরীর তল্লাশি করা হলে দেখা যায়, তিনি আসলে পুলিশের কোনো সদস্যই নন। তার শরীরে থাকা ইউনিফর্ম জাল, কোনো নিয়োগপত্র নেই। এবং তার পরিচয় নিশ্চিত হলে জানা যায়, তিনি গাজীপুর সদর উপজেলার পিরুজালী (মধ্যপাড়া) এলাকার বাসিন্দা, নাম তানিয়া, পিতা আবু তালেব।

ঘটনাটি এখানেই শেষ নয়। তদন্তে আরও চাঞ্চল্যকর তথ্য সামনে আসে। পুলিশ জানায়, তানিয়ার ফেসবুক আইডিতে একাধিক ছবি ও ভিডিও রয়েছে, যেখানে তিনি পুলিশ ইউনিফর্ম পরে বিভিন্ন এলাকায় ঘোরাফেরা করছেন। নিয়মিতভাবে তিনি নিজেকে পুলিশের সদস্য হিসেবে উপস্থাপন করতেন।

স্থানীয় সূত্রেও জানা যায়, তানিয়া অনেক সময় এলাকায় পুলিশের পোশাকে অবস্থান করতেন এবং সাধারণ মানুষ তাকে সত্যিকারের পুলিশ ভেবে সমীহ করত।

পুলিশ তার বাসায় অভিযান চালিয়ে পুলিশের আরো সরঞ্জাম উদ্ধার করে—যার মধ্যে ছিল জিএমপির (গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ) পোশাক, টুপি, র‍্যাংক ব্যাজসহ অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ উপকরণ।

জয়দেবপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তৌহিদ আহমেদ জানান, তানিয়া নামে এক ভুয়া নারী পুলিশ সদস্যকে আটক করা হয়েছে। তার কাছ থেকে পুলিশের পোশাক উদ্ধার করা হয়েছে এবং বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, তানিয়াকে শুক্রবার (৪ জুলাই) আদালতে পাঠানো হয়েছে এবং তার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে। তার আসল উদ্দেশ্য কী ছিল, পুলিশের পোশাক সে কোথায় পেল, এবং কোনো অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত ছিল কি না—তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।

পুলিশ সূত্র জানায়, তাকে রিমান্ডে নেওয়ার আবেদনও করা হয়েছে, যাতে করে এই চক্রের পিছনে আরও কেউ রয়েছে কি না, তা জানা যায়।

এত নিখুঁতভাবে ইউনিফর্ম তৈরি, র‍্যাংক ব্যাজ জোগাড়, থানা পর্যন্ত প্রবেশ করার সাহস—সব কিছুই একটি সুপরিকল্পিত ছদ্মবেশী নাটকের ইঙ্গিত দেয়। পুলিশ এখন খতিয়ে দেখছে, কোনো অভ্যন্তরীণ সাহায্য ছিল কি না, কিংবা সে কোনো অপরাধচক্রের হয়ে কাজ করছিল কি না।

এই ঘটনা শুধু তানিয়ার বিচ্ছিন্ন অপরাধ নয়, বরং সমাজে ছদ্মবেশে ক্ষমতা অপব্যবহারের একটি বড় দৃষ্টান্ত। এ থেকে শিক্ষা হলো—আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতি সবার সম্মান থাকলেও, কখনো চোখ বন্ধ করে বিশ্বাস নয়। সন্দেহ হলে খোঁজ নিতে হবে, প্রশ্ন তুলতে হবে—যেমনটি করেছিলেন জয়দেবপুর থানার এক সতর্ক ডিউটি অফিসার।

No comments found