কমিটি গঠনে টাকার লেনদেনের অভিযোগ তুলে ফেসবুকে পদত্যাগ করলেন যশোর গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক শেখ ফরহাদ রহমান মুন্না। এতে আসন্ন সমাবেশ ঘিরে নেতাকর্মীদের মধ্যে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে।
যশোরে গণঅধিকার পরিষদের রাজনীতিতে বড় ধাক্কা লেগেছে। কমিটি গঠনকে ঘিরে অর্থ লেনদেনের অভিযোগে পদত্যাগ করেছেন জেলা সাধারণ সম্পাদক শেখ ফরহাদ রহমান মুন্না। রোববার বিকেলে নিজের ফেসবুক আইডিতে দেওয়া এক পোস্টে তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে পদত্যাগের ঘোষণা দেন।
ফেসবুক পোস্টে মুন্না লেখেন, “আমি আমার নীতি, নৈতিকতা এবং আদর্শের বাইরে কোনো অনিয়ম গ্রহণ বা সমর্থন করব না। আজ থেকে সংগঠনের সঙ্গে আমার কোনো সাংগঠনিক বা রাজনৈতিক সম্পর্ক থাকবে না। গণঅধিকার পরিষদের কোনো দায় আমার ওপর বর্তাবে না।”
মুন্নার এই ঘোষণার পর যশোর ও আশপাশের এলাকার রাজনৈতিক অঙ্গনে ব্যাপক আলোচনা শুরু হয়েছে। বিশেষ করে ২২ আগস্ট যশোরের মুন্সি মেহেরুল্লাহ ময়দানে গণঅধিকার পরিষদের বড় সমাবেশকে কেন্দ্র করে যখন নেতাকর্মীরা প্রস্তুতি নিচ্ছেন, তার আগ মুহূর্তে এই পদত্যাগ দলটির তৃণমূল পর্যায়ে শঙ্কার সৃষ্টি করেছে। সমাবেশে দলের সভাপতি নুরুল হক নুর প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকার কথা রয়েছে।
শেখ ফরহাদ রহমান মুন্না অভিযোগ করেন, দলের কিছু প্রভাবশালী নেতা আওয়ামী লীগের ঘনিষ্ঠ মহল থেকে অবৈধ আর্থিক সুবিধা গ্রহণ করে দলে জায়গা করে দিচ্ছেন। তিনি বলেন, “দলের ক্রান্তিলগ্নে আমরা রাজপথে আন্দোলন করেছি। কিন্তু বর্তমানে কিছু সুবিধাবাদী নেতা আওয়ামী দোসরদের হাত ধরে টাকা নিয়ে কমিটি বানাচ্ছেন। দেশ ও জাতির সঙ্গে এমন বেঈমানি আমি করতে পারব না, তাই পদত্যাগ করেছি।”
তিনি আরও অভিযোগ করেন, খুলনা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আশিক ইকবাল এবং যশোর জেলা সভাপতি আশিকুর রহমান যৌথভাবে অর্থের বিনিময়ে শ্রমিক লীগের ঢাকা মহানগরের সহসভাপতি গাজী মো. আবুল কালামকে যশোর জেলা গণঅধিকার পরিষদের সিনিয়র সহসভাপতি পদে বসিয়েছেন। এটি দলের নীতি ও নৈতিকতার সঙ্গে সাংঘর্ষিক বলেই তার দাবি।
অন্যদিকে যশোর জেলা গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি আশিকুর রহমান এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, “জেলা কমিটি অনুমোদন দেয় কেন্দ্রীয় কমিটি। এখানে আমাদের কোনো আর্থিক লেনদেনের সুযোগ নেই।” তিনি আরও যোগ করেন, “গত বছরের ৫ আগস্টের আগে সবাই আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। গাজী মো. আবুল কালামের বিষয়ে আমার বিস্তারিত জানা নেই। মুন্না আবেগপ্রবণ মানুষ। এর আগেও তিনি একাধিকবার পদত্যাগ করেছিলেন।
খুলনা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আশিক ইকবালও অভিযোগ অস্বীকার করেন। তিনি দাবি করেন, গণঅধিকার পরিষদ গণমানুষের দল এবং দলের কার্যক্রম নেতা-কর্মী ও শুভানুধ্যায়ীদের অনুদানের মাধ্যমে চলে। তার ভাষায়, “গাজী মো. আবুল কালাম কখনো আওয়ামী লীগের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন না। বরং তিনি বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন।
এই ঘটনাকে ঘিরে স্থানীয় পর্যায়ের নেতাকর্মীরা দারুণ হতাশ ও ক্ষুব্ধ। তারা মনে করছেন, আসন্ন গণসমাবেশের আগে এমন পদত্যাগ ও প্রকাশ্যে অভিযোগ দলকে বিপাকে ফেলতে পারে। তবে তারা একইসঙ্গে আশা প্রকাশ করেছেন যে কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব এ বিষয়ে দ্রুত পদক্ষেপ নেবে এবং সত্য-মিথ্যা যাচাই করে দলের ভাবমূর্তি অক্ষুণ্ণ রাখবে।
গণঅধিকার পরিষদ দেশের সাম্প্রতিক রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোচিত একটি শক্তি। বিশেষ করে তরুণ প্রজন্ম ও সাধারণ মানুষের অধিকার নিয়ে সোচ্চার থাকার কারণে দলটি দ্রুতই জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। তবে সংগঠনের ভেতরে পদবন্টন ও কমিটি গঠনকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন সময় দ্বন্দ্ব দেখা দিয়েছে। শেখ ফরহাদ রহমান মুন্নার পদত্যাগ সেই দ্বন্দ্বকে আবারও সামনে এনে দিল।
যশোরের রাজনীতিতে এই ঘটনার প্রভাব পড়বে কিনা তা নিয়ে আলোচনা চললেও একটি বিষয় পরিষ্কার—গণঅধিকার পরিষদের ভেতরকার মতবিরোধ এখন খোলামেলা রূপ নিচ্ছে। আর সেই দ্বন্দ্বই হয়তো দলের ভবিষ্যৎ গতি নির্ধারণ করবে।