নিষিদ্ধ হওয়ার পরেও থেমে নেই আওয়ামী লীগ। এবার কলকাতার একটি কমার্শিয়াল বিল্ডিংয়ে গোপনে পার্টি অফিস চালু করেছে তারা। হাসিনা-মুজিবের ছবি নেই, নেই কোনো সাইনবোর্ড—সবই নজর এড়াতে নতুন ছক!
গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার ব্যাপক আন্দোলনের মুখে পড়ে পতন ঘটে আওয়ামী লীগ সরকারের। সরকারের পতনের পরপরই দলটির সব ধরনের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধ করা হয়। এরপর থেকেই দলের অসংখ্য নেতাকর্মী দেশ ছেড়ে পালিয়ে যায়, অনেকেই ভারতে গিয়ে আশ্রয় নেন, বিশেষ করে পশ্চিমবঙ্গের কলকাতা শহরে।
কিন্তু ভারতে শুধু আশ্রয় গ্রহণেই থেমে থাকেননি তারা। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা গোপনে কলকাতার একটি বাণিজ্যিক ভবনে পার্টি অফিস চালু করেছেন। সেখানে নিয়মিত বৈঠক করছেন, রাজনৈতিক পরিকল্পনা গ্রহণ করছেন এবং পরবর্তী করণীয় ঠিক করছেন বলে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে বিবিসি বাংলা।
বিবিসির রিপোর্ট অনুযায়ী, কলকাতার এক বহুতল বাণিজ্যিক ভবনের অষ্টম তলায় এই অফিসটি অবস্থিত। অফিসটির আশপাশে রয়েছে আরও অনেক বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান—আইটি ফার্ম, কনসালটিং অফিস, ট্রাভেল এজেন্সি ইত্যাদি। বাইরে থেকে দেখে কেউ বুঝতেই পারবে না, ভিতরে কী ঘটছে।
এই অফিসটিকে বাইরে থেকে আলাদা করে চেনার কোনো উপায় নেই। নেই কোনো সাইনবোর্ড, নেই আওয়ামী লীগের প্রতীক বা ব্যানার, এমনকি শেখ হাসিনা কিংবা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি পর্যন্ত নেই ভিতরে। এটাই আওয়ামী লীগের নতুন কৌশল—জনগণের বা স্থানীয় প্রশাসনের নজর এড়িয়ে গোপনে সংগঠিত থাকা।
দলটির এক শীর্ষস্থানীয় নেতা বলেন, "আমরা এখানে মূলত বৈঠক করি। ৩০-৩৫ জন বসে একসঙ্গে আলোচনা করতে পারি। বড় মিটিং হলে ভাড়া নিতে হয় কোনো রেস্তোরাঁ বা ব্যাঙ্কোয়েট হল। বাসা-বাড়িতেও এখনো ছোটখাটো মিটিং চলে। কিন্তু একটি স্থায়ী ঘরের দরকার ছিল, যেটা আমাদের দলীয় কাজে ব্যবহার করা যায়।
২০২৪ সালের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা দেশ ছাড়ার পর প্রথমে কলকাতায় আশ্রিত নেতারা ছোট ছোট দলে ভাগ হয়ে নিজেদের বাসায় বৈঠক করতেন। পরে, নিয়মিত কর্মকাণ্ডের প্রয়োজনে একটি নির্দিষ্ট জায়গা প্রয়োজন হয়ে পড়ে। তখনই তারা ভাড়া নেন এই বাণিজ্যিক ইউনিটটি। যদিও কাগজপত্রে এটি একটি অফিস স্পেস হিসেবেই রেজিস্টার্ড, কিন্তু ব্যবহার করা হচ্ছে দলীয় কার্যালয় হিসেবে।
বিশ্লেষকদের মতে, এটি শুধু একটি অফিস চালু করা নয়—এটি একটি কৌশলগত পদক্ষেপ। একটি নিষিদ্ধ রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরা বিদেশে বসে কীভাবে সংগঠন ধরে রাখছে এবং পুনর্গঠনের চেষ্টা করছে, এই ঘটনা তার একটি বাস্তব উদাহরণ।
একজন রাজনৈতিক গবেষক বলেন, “কলকাতায় আওয়ামী লীগের অফিস চালুর বিষয়টি দুই দেশের রাজনীতির ওপর প্রভাব ফেলতে পারে। বাংলাদেশে দলটি নিষিদ্ধ হলেও ভারতে এমন কর্মকাণ্ড ভারতের অবস্থান নিয়েও প্রশ্ন তুলছে।
এছাড়া, প্রতিবেদনে বলা হয় যে ওই পার্টি অফিসে নিয়মিত বৈঠকের পাশাপাশি ‘নতুন সংযোগ’ তৈরি এবং বিদেশে অবস্থানরত সমর্থকদের সংগঠিত করার প্রচেষ্টাও চলছে। নেতারা চেষ্টা করছেন, প্রবাসে থেকেও রাজনৈতিক প্রভাব ধরে রাখা।
বর্তমানে এই অফিসটি দলীয় কর্মসূচি, পরিকল্পনা, যোগাযোগ এবং সাংগঠনিক গঠন সংক্রান্ত কাজের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছে। অথচ ওপরে একটি সাদামাটা দরজা, নেই কোনো রাজনৈতিক পরিচয়। এই ধরণের আন্ডারগ্রাউন্ড সংগঠন পরিচালনা একদিকে যেমন স্মার্ট স্ট্র্যাটেজি, অন্যদিকে বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন করে উদ্বেগেরও কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
বাংলাদেশ সরকার এ বিষয়ে এখনো প্রকাশ্যে কোনো প্রতিক্রিয়া জানায়নি। তবে গোয়েন্দা সংস্থাগুলো সতর্ক রয়েছে এবং সীমান্তবর্তী এলাকায় নজরদারি আরও বাড়ানোর কথা বলা হচ্ছে।