close

ভিডিও আপলোড করুন পয়েন্ট জিতুন!

ক্লাস নাইনের সমন্বয়ক এসেও আসামিকে ছাড়িয়ে নিতে পারে : মাসুদ কামাল..

Akram Hossen avatar   
Akram Hossen
পুলিশ বাহিনীর মনোবল কি দুর্বল?
রাজনৈতিক প্রভাব ও পুলিশের ভূমিকা
পুলিশের আতঙ্ক ও ক্ষমতার পিছুটান
মাগুরা প্রসঙ্গ ও পুলিশের আনুগত্য
পুলিশ বাহিনীর ভবিষ্যৎ কোন পথে?..

সাম্প্রতিক এক টেলিভিশন আলোচনায় প্রবীণ সাংবাদিক মাসুদ কামাল পুলিশের বর্তমান ভূমিকা ও মনোবল নিয়ে কঠোর প্রশ্ন তুলেছেন। তার বক্তব্যে উঠে এসেছে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কার্যকারিতা, সরকারের ভূমিকাহীনতা এবং রাজনৈতিক প্রভাবের বিষয়। এই বিশ্লেষণে আমরা তার বক্তব্যের মূল দিকগুলো পর্যালোচনা করব এবং বাস্তবতা কতটা নির্মম, তা অনুসন্ধানের চেষ্টা করব।

মাসুদ কামাল তার আলোচনায় পুলিশের কার্যক্রম নিয়ে প্রশ্ন তোলেন, বিশেষ করে গত সাত মাসে সরকারের পক্ষ থেকে এমন কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে কি না, যা পুলিশের মনোবল পুনরুদ্ধারে ভূমিকা রেখেছে। তিনি বলেন,

“এই সরকার গত সাত মাসে এমন কোন কাজ করেছে কি, যেটা দেখে পুলিশ বাহিনী মনে করতে পারবে যে তাদের আবার পুরনো উদ্যমে কাজে ফিরে আসা দরকার?”

তার কথার সারমর্ম হলো, পুলিশ বাহিনী কার্যত দিকনির্দেশনার অভাবে নিজেদের দায়িত্ব পালনে পিছিয়ে পড়েছে। রাজনৈতিক অস্থিরতা, ক্ষমতার পরিবর্তন এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রতি সরকারের উদাসীনতা তাদের কার্যকারিতা কমিয়ে দিয়েছে।

এর ফলে পুলিশ কি আদৌ আইনের রক্ষক হিসেবে কাজ করতে পারছে, নাকি তারা নির্দিষ্ট গোষ্ঠীর আনুগত্য রক্ষায় নিয়োজিত হচ্ছে?

মাসুদ কামাল তার আলোচনায় আরও বলেন,

“আপনি যদি পজিটিভ কিছু দেখাতে না পারেন, তাহলে আপনি কিছুই করবেন না। আপনি আশা করবেন যে ঘটনাটা ঘটে যাবে, কিন্তু তা হবে না। যেসব ক্ষেত্রে পুলিশের ভূমিকা নেওয়ার কথা, সেখানে আমরা দেখছি যে পুলিশ ঠিকভাবে ভূমিকা রাখছে না।”

এই বক্তব্যের মাধ্যমে তিনি ইঙ্গিত দেন যে, পুলিশ নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালন করতে পারছে না, বরং তারা এক ধরনের অচলাবস্থার মধ্যে পড়ে আছে। পুলিশের দায়িত্ব যেখানে কঠোরভাবে অপরাধ দমন করা, সেখানে রাজনৈতিক ক্ষমতার সামনে তারা অসহায় হয়ে পড়ছে।

এই প্রসঙ্গে তিনি উল্লেখ করেন,

“একজন স্কুলছাত্র এসে বলবে, ‘আমি সমন্বয়কের ছোট ভাই’ বা ‘আমি সমন্বয়ক’—পুলিশ তখন কি করবে? তাকে আটকাতে পারবে কি না, সেটাই প্রশ্ন।”

এর মাধ্যমে বোঝা যায়, রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক প্রভাব এতো বেশি বেড়েছে যে, পুলিশের উপরেও নিয়ন্ত্রণ আরোপ করা সম্ভব হচ্ছে। শুধু রাজনৈতিক নেতা নন, তাদের অনুসারীরাও পুলিশের কার্যক্রম প্রভাবিত করতে সক্ষম।

পুলিশের ভয়ের উৎস নিয়ে মাসুদ কামাল বলেন,

“পুলিশ কাকে ভয় পায়? যাদেরকে পাবলিক ভয় পায়, পুলিশও তাদের ভয় পায়। পুলিশ কাকে ভয় পায়? যারা ক্ষমতাশালী, তাদের ভয় পায়।”

তিনি ছাত্রলীগের প্রসঙ্গ টেনে বলেন,

“আওয়ামী লীগের আমলে ছাত্রলীগের নেতাদেরকে পুলিশ ভয় পেত। এখনো সেই অবস্থা চলছে। পুলিশ এখনো ক্ষমতাশালী ব্যক্তিদের সিট ছেড়ে দেয়, তাদেরকে সম্মান দেখায়।”

এর মানে দাঁড়ায়, পুলিশের চোখে আইন সবার জন্য সমান নয়। ক্ষমতাসীন দলের অনুগতরা বিশেষ সুবিধা পেয়ে থাকেন, যা বিচার ও শাসন ব্যবস্থার নৈতিকতা ধ্বংস করছে।

মাসুদ কামাল মাগুরার একটি ঘটনা উল্লেখ করে বলেন,

“আলম, হাসনাত আব্দুল্লাহ এবং মামুনুল হক—এই তিন মহারথী পুলিশের হেলিকপ্টারে উঠে মাগুরা গেলেন। আমি তাদের খুব একটা দোষ দিচ্ছি না। তারা গেছেন, কেউ তাদের সিট ছেড়ে দিয়েছে, বলেছে, ‘স্যার, সিট খালি আছে, আপনি বসেন।’ আমার প্রশ্ন হলো, পুলিশ কিভাবে তাদের নিল? পুলিশ কি এই মানুষগুলোকে না নিয়ে পারতো না?”

এর মাধ্যমে তিনি দেখিয়েছেন যে, আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো এখন নিরপেক্ষতা হারিয়ে প্রভাবশালী গোষ্ঠীর প্রতি আনুগত্য দেখাচ্ছে। ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দুর পরিবর্তন হলেও, পুলিশ কেবল শাসক শ্রেণির প্রতি অনুগত থাকে—এটাই মূল বাস্তবতা।

এই বিশ্লেষণ থেকে স্পষ্ট যে, বাংলাদেশে পুলিশ বাহিনী রাজনৈতিকভাবে এতটাই নিয়ন্ত্রিত যে, তারা নিজেদের স্বাধীনতা হারিয়েছে। পুলিশ এখন আর জনগণের নিরাপত্তার জন্য কাজ করছে না, বরং রাজনৈতিক নেতাদের আনুগত্য বজায় রাখতে বাধ্য হচ্ছে।

বর্তমান পরিস্থিতি যদি অব্যাহত থাকে, তাহলে বাংলাদেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির আরও অবনতি ঘটতে পারে। একটি কার্যকরী আইন প্রয়োগকারী বাহিনী ছাড়া রাষ্ট্রে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হওয়া অসম্ভব।

এখন প্রশ্ন হলো,

  • সরকার কি পুলিশের মনোবল ফিরিয়ে আনতে কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেবে?
  • পুলিশ কি রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত হয়ে নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালন করতে পারবে?
  • ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার জন্য কি প্রশাসনিক সংস্কারের প্রয়োজন?

এসব প্রশ্নের উত্তরই বাংলাদেশের ভবিষ্যতের রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক গতিপথ নির্ধারণ করবে।

Keine Kommentare gefunden


News Card Generator