কলাপাড়া উপজেলার আদালতগুলোতে বিচারক সংকটের কারণে বিচারিক কার্যক্রমে স্থবিরতা দেখা দিয়েছে, ফলে হাজারো বিচারপ্রার্থী ভোগান্তিতে পড়েছেন।..

MD MEHEDI MRIDHA avatar   
MD MEHEDI MRIDHA
কলাপাড়া উপজেলার আদালতগুলোতে বিচারক সংকটের কারণে বিচারিক কার্যক্রমে স্থবিরতা দেখা দিয়েছে, ফলে হাজারো বিচারপ্রার্থী ভোগান্তিতে পড়েছেন।..

কলাপাড়া উপজেলার সিনিয়র সহকারী জজ, জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট এবং উপজেলা নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের পদ দীর্ঘদিন ধরে শূন্য থাকায় আদালতের স্বাভাবিক বিচারিক কার্যক্রম কার্যত অচল হয়ে পড়েছে। গত ৩ জুন সহকারী জজ ও জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট এবং ১৫ জুলাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার বদলির পর থেকে এসব পদে নতুন নিয়োগ না হওয়ায় আদালত কার্যক্রম থমকে রয়েছে। বিচারক না থাকায় তিনটি গুরুত্বপূর্ণ আদালতের কার্যক্রম পুরোপুরি ব্যাহত হচ্ছে।

 

বিচারক সংকটের সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়ছে ফৌজদারি মামলার বিচারপ্রার্থীদের ওপর। সপ্তাহে মাত্র দুই দিন—সোমবার ও বৃহস্পতিবার—পটুয়াখালী জেলা সদর আদালতে হাজিরা দিতে হচ্ছে। এতে একদিকে আর্থিক ক্ষতি, অন্যদিকে জামিনযোগ্য ধারার মামলায়ও আসামিদের হাজতে থাকতে হচ্ছে। বিচারপ্রার্থী শাহাবুদ্দিন জানান, “চেক ডিজঅনার নিয়ে উকিল নোটিশ দিয়েছি। মামলা দায়েরের সময় শেষ হয়ে যাচ্ছে। পটুয়াখালী গিয়ে মামলা করতে এত খরচ, বুঝতেই পারছি না কীভাবে করব।”

 

নীলগঞ্জ ইউনিয়নের কৃষক গোলাম সরোয়ার জানান, ১৬ বছর ধরে দেওয়ানি মামলা চালিয়ে অবশেষে রায় পেয়েছেন, কিন্তু খরচ হয়েছে জমির বর্তমান মূল্যের সমান। কলাপাড়া চৌকি আদালতের সহকারী সরকারি কৌশলী মেহেদী হাসান রুবেল জানান, সিনিয়র সহকারী জজ আদালতে প্রায় ৬ হাজার মামলা বিচারাধীন। বিচারক না থাকায় বেঞ্চ সহকারী শুধু তারিখ দিচ্ছেন, ফলে মামলার জট প্রতিনিয়ত বেড়ে চলেছে।

 

তিনি আরও জানান, পায়রা বন্দরের অধিগ্রহণ সংক্রান্ত মামলার নিষ্পত্তি না হওয়ায় ক্ষতিগ্রস্তরা পাওনা টাকা উত্তোলন করতে পারছেন না, যা উন্নয়নকাজেও বাধা সৃষ্টি করছে। ম্যাজিস্ট্রেট সংকটে জেলা সদর থেকে একজন ম্যাজিস্ট্রেটকেই একাধিক আদালতের দায়িত্ব পালন করতে হচ্ছে। কলাপাড়া উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) অতিরিক্ত দায়িত্বে থাকলেও প্রশাসনিক ব্যস্ততার কারণে আদালতে সময় দিতে পারছেন না, ফলে কার্যক্রম আরও ব্যাহত হচ্ছে।

 

উপজেলা চৌকি আদালতের সেরেস্তাদার মিজানুর রহমান জানান, সহকারী জজ আদালতে ৫ হাজার ৮০৯টি মামলা, জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে প্রায় ৩ হাজার ৬০০ মামলার মধ্যে ১ হাজার ৯০০টি বিচারাধীন এবং নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ২০০টিরও বেশি মামলা ঝুলে রয়েছে। কলাপাড়া আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মো. আবুল হোসেন বলেন, “বিচারক বদলির দুই মাস পার হলেও নতুন বিচারক নিয়োগ হয়নি। ফলে বিচারপ্রার্থীরা দুর্ভোগে পড়েছেন।” তিনি দ্রুত পদগুলোতে বিচারক নিয়োগের দাবি জানান।

 

এই সংকটের ফলে কলাপাড়ার বিচারপ্রার্থীরা চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। একদিকে অর্থনৈতিক ক্ষতি, অন্যদিকে সময়ের অপচয়—এই দুইয়ের মিলিত প্রভাব সমাজের বিভিন্ন স্তরে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। উপজেলা প্রশাসন এবং বিচার বিভাগের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উচিত দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করে এই সমস্যা সমাধান করা, যাতে স্থানীয় জনগণ ন্যায্য বিচার পেতে পারেন।

No se encontraron comentarios