স্টাফ রিপোর্টার, রামু
কক্সবাজার জেলায় বর্তমানে অনুমোদনহীন ও স্বল্পশক্তির ২০-৩০টি লোকাল কেবল টিভি চ্যানেল নিয়মিত সম্প্রচার চালিয়ে যাচ্ছে। এসব চ্যানেলের বেশির ভাগই নির্দিষ্ট কোনো সম্পাদকীয় নীতি বা প্রশিক্ষিত সাংবাদিক না থাকায় তথ্য-বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে গুরুতর প্রশ্ন তুলছেন স্থানীয় গণমাধ্যম বিশ্লেষকেরা।
বিভ্রান্তিমূলক সংবাদ ও ‘পেইড কনটেন্ট’
বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) সূত্রে জানা গেছে, জেলায় নিবন্ধনপ্রাপ্ত কেবল নেটওয়ার্কের সংখ্যা ১১ টি, অথচ স্থানীয়ভাবে “টিভি” নামধারী প্লে-আউট বক্স চালু আছে অন্তত ২৫টি। এসব প্ল্যাটফর্মে ‘বিজ্ঞাপনের বিনিময়ে সংবাদ’—অর্থাৎ পেমেন্ট দিয়ে কাভারেজ কেনা—একটি ওপেন সেক্রেট। ফলাফল, একই বিষয়ের একাধিক “অনুকূল” প্রতিবেদন প্রচার হয়ে নীতিহীন প্রচারণার রূপ নেয়।
স্থানীয় কলেজের গণযোগাযোগ বিভাগের একজন শিক্ষক বলেন,
“বস্তুনিষ্ঠতার মানদণ্ড না মানা সংবাদ লুফে নেয় সহজ-বিশ্বাসী দর্শক। দিনশেষে ক্ষতিগ্রস্ত হয় প্রকৃত সাংবাদিকতা।”
রাজনৈতিক চাপ ও ব্ল্যাকমেইল
কিছু অপারেটর “সাহসী অনুসন্ধানী প্রতিবেদন” প্রকাশের নামে ব্যক্তিগত আক্রোশ বা রাজনৈতিক উদ্দেশে শিশুতোষ গ্রাফিক্সে অসত্য তথ্য ছড়ান। অভিযোগ আছে, প্রভাবশালী মহলকে ‘নেতিবাচক’ খবর না দেওয়ার শর্তে মাসিক হোল্ডিং মানি নেওয়া হয়। এমনকি ব্যবসায়ীদের পক্ষে “নেতিবাচক কভারেজ বন্ধের” বিনিময়ে অর্থ আদায়ের ঘটনাও থানা ডায়েরিতে উল্লেখ আছে।
“সকল চ্যানেলকে আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে বিটিআরসি লাইসেন্স ও আপ-টু-ডেট কারিগরি রিগুলেশনপালন করতেই হবে। আমরা এই পরিবর্তনকে স্বাগত জানাই।”
আইনের ফাঁকফোকর
২০০৬ সালের কেবল টিভি নেটওয়ার্ক পরিচালনা আইন অনুযায়ী, ‘লোকাল’ ছাপিয়ে ‘টেলিভিশন চ্যানেল’ পরিচয়ে অনুষ্ঠান প্রচারকে অকাট্যভাবে অবৈধ বলা হলেও বাস্তবে পর্যাপ্ত মনিটরিং নেই। জেলা-পর্যায়ের তথ্য মন্ত্রণালয় টাস্কফোর্সের বৈঠক প্রতি ছয় মাসে একবার হলেও অভিযানে পরিলক্ষিত হয় অনিয়ম, জরিমানা সাকুল্যে ১০-২০ হাজার টাকা; যা উদ্যোক্তারা সহজেই ‘ব্যবসায়িক খরচ’ ধরে ফেলে।
গণমাধ্যম বিশ্লেষকেরা মনে করেন, সংখ্যা নয়, মান-নির্ভর সম্প্রসারণই কক্সবাজারের দর্শক-স্বার্থ রক্ষা করতে পারে। অন্যথায়, অপরিপক্ক এয়ারটাইম ভরে উঠবে গুজব আর ব্যক্তিস্বার্থনির্ভর প্রচারণায়—যার খেসারত গুণতে হবে সাধারণ মানুষকেই।