বাংলাদেশের অন্যতম জনপ্রিয় পর্যটন শহর কক্সবাজার এখন যানজটের শহর বললেও ভুল হবে না। শহরের প্রতিটি মোড়, অলিগলি ও প্রধান সড়কজুড়ে ছড়িয়ে আছে হাজারো ব্যাটারিচালিত থ্রী-হুইলার (ইজিবাইক)। এসব যানবাহনের অনিয়ন্ত্রিত চলাচল এবং অপরিকল্পিত ব্যবস্থাপনার কারণে শহরের স্বাভাবিক জনজীবন আজ চরম ভোগান্তিতে পরে গিয়েছে।
কক্সবাজার শহরের কলাতলী, সুগন্ধা, লাবণী, বাজারঘাটা, হাসপাতাল সড়ক, বাসটার্মিনাল, টেকপাড়া, গোলদীঘিরপাড়, রুমালিয়ারছড়া ও বীরশ্রেষ্ঠ রুহুল আমিন স্টেডিয়াম এলাকার আশপাশে যানজট এখন নিত্যদিনের দৃশ্য। বিশেষ করে সকাল ৮টা থেকে ১১টা এবং বিকেল ৪টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত সময়টুকুতে শহরের রাস্তা প্রায় অচল হয়ে পড়ে। কর্মজীবী মানুষ, স্কুলগামী শিক্ষার্থী, রোগী বহনকারী অ্যাম্বুলেন্স থেকে শুরু করে পর্যটকরাও এই জটের কারণে পড়েন চরম বিপাকে।
স্থানীয় প্রশাসনের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, কক্সবাজার পৌর এলাকায় নিবন্ধিত থ্রী-হুইলারের সংখ্যা প্রায় ৩ হাজারের বেশি। কিন্তু বাস্তবে রাস্তায় চলাচল করছে ৬ হাজারেরও বেশি ইজিবাইক ও ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা। অধিকাংশ চালকের নেই বৈধ ড্রাইভিং লাইসেন্স। নিয়ন্ত্রণহীনভাবে তারা রাস্তায় চলাচল করছে, যাত্রী ওঠানামার জন্য যত্রতত্র দাঁড়িয়ে পড়ছে, যা যানজট সৃষ্টির অন্যতম কারণ।
শহরের কয়েকজন পথচারী ও ব্যবসায়ী অভিযোগ করে বলেন, এসব যানবাহনের চালকদের মধ্যে ট্রাফিক নিয়ম সম্পর্কে ন্যূনতম জ্ঞান নেই। যত্রতত্র পার্কিং, রং-সাইডে চালানো ও ওভারটেক করার প্রবণতা খুব বেশি। ট্রাফিক পুলিশ মাঝে মাঝে অভিযান চালালেও তা নিয়মিত নয় এবং কোনো দীর্ঘমেয়াদি কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, প্রথমত থ্রী-হুইলারের সংখ্যা নিয়ন্ত্রণে আনতে হবে। শুধুমাত্র লাইসেন্সধারী চালকদের চালনার অনুমতি ও ট্রাফিক ব্যবস্থার আধুনিকীকরণও অপরিহার্য। পাশাপাশি বিকল্প পরিবহন ব্যবস্থার উন্নয়ন, স্বয়ংক্রিয় ট্রাফিক সিস্টেম এবং পর্যটন মৌসুমে বিশেষ ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা চালুর পরামর্শ দিচ্ছেন অনেকে।
এ বিষয়ে কক্সবাজার জেলা ট্রাফিক বিভাগের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোঃ জসিম উদ্দিন চৌধুরী জানান, ‘ব্যাটারি চালিত গাড়িগুলো সড়ক পরিবহন আইনে অবৈধ। আর এসব অবৈধ যানবাহনের ফলে কক্সবাজার সড়কে যানজটের পাশাপাশি প্রতিনিয়ত সড়ক দুর্ঘটনা ঘটছে। এগুলোর বিরুদ্ধে আমরা নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করে যাচ্ছি। ইতোমধ্যে শহরের গুরুত্বপূর্ণ জায়গা গুলোতে পৌর কমিউনিটি পুলিশ ও জেলা ট্রাফিক পুলিশ সম্মিলিতভাবে অভিযান পরিচালনা করে অবৈধ যানবাহন ও চালকদের আইনের আওতায় আনছে। অবৈধ যান কমে গেলে শহরে যানযট অনেকটাই কমে যাবে, যার ফলশ্রুতিতে পর্যটন নগরী কক্সবাজারে সুন্দর একটি ট্রাফিক ব্যবস্থা উপহার দিতে পারব।’
চট্টগ্রাম নগরীর মতো কক্সবাজারে স্থায়ীভাবে ইজিবাইক বন্ধের সিদ্ধান্ত আছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে এই কর্মকর্তা বলেন, ‘এই পেশার সঙ্গে অনেক মানুষ জড়িত। তাদের দিকটাও আমাদের মাথায় রাখা জরুরি হয়ে পরেছে। হুট করেই বন্ধের সিদ্ধান্ত না নিয়ে আমরা ধারাবাহিকভাবে এর স্থায়ী সমাধানের কথা ভাবছি।’
close
ভিডিও আপলোড করুন পয়েন্ট জিতুন!
Комментариев нет