ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের সাথে মতবিনিময়ে স্বতন্ত্র ঐক্য প্যানেলের ভিপি প্রার্থী উমামা ফাতেমা বলেন, কিছু রাজনৈতিক গোষ্ঠী ৭১ ও ২৪ কে পরস্পরের বিপরীতে দাঁড় করাতে চাচ্ছে, অথচ দুটোই ইতিহাসের অবিচ্ছেদ্য অংশ।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররাজনীতির অঙ্গনে নতুন আলোচনার জন্ম দিয়েছেন স্বতন্ত্র ঐক্য প্যানেলের ভিপি প্রার্থী উমামা ফাতেমা। রোববার সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে জগন্নাথ হলের শিক্ষার্থীদের সাথে মতবিনিময় সভায় তিনি বলেন, বাংলাদেশের ইতিহাসকে খণ্ডিত করার এক গভীর ষড়যন্ত্র চলছে। কিছু রাজনৈতিক গোষ্ঠী মুক্তিযুদ্ধের গৌরবময় ১৯৭১ ও ২০২৪ সালের জনগণের জাগরণকে মুখোমুখি দাঁড় করাতে চাইছে। অথচ বাস্তবে এই দুটি অধ্যায় একে অপরের পরিপূরক, বিপরীত নয়।
উমামা ফাতেমা তার বক্তব্যে স্পষ্টভাবে উল্লেখ করেন, ১৯৭১ সালে দীর্ঘ নয় মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মাধ্যমে এ দেশ স্বাধীন হয়েছিল। স্বাধীনতার সেই স্বপ্ন, চেতনা ও আত্মত্যাগই বাংলাদেশের ইতিহাসের সবচেয়ে উজ্জ্বল অধ্যায়। তিনি বলেন, “৭১ যদি বড় করে দেখা হয় তবে ২৪ কে অবমূল্যায়ন করা হবে, আবার ২৪ কে বড় করলে ৭১ নষ্ট হয়ে যাবে। অথচ দুটোই ইতিহাসের অংশ, দুটোই আমাদের অস্তিত্বের ভিত্তি।”
তিনি শেখ হাসিনার শাসনামল নিয়েও তীব্র সমালোচনা করেন। তার মতে, গত ১৭ বছর ধরে শেখ হাসিনা একটি স্বৈরাচারী শাসন কায়েম করেছিলেন, যার ফলে দেশ এক গভীর সংকটে পড়ে। তবে ২০২৪ সালের আন্দোলনে সাধারণ মানুষ ঠিক যেভাবে ১৯৭১ সালে স্বৈরশাসকের বিরুদ্ধে উঠে দাঁড়িয়েছিল, সেই একই চেতনায় আবার জেগে উঠে শেখ হাসিনার পতন ঘটিয়েছে। তার ভাষায়, “৭১ যেমন আমাদের ইতিহাসের অংশ, ২৪ তেমনই আমাদের ইতিহাসের অংশ। এই ইতিহাস ধারণ করেই আগামী বাংলাদেশ নির্মাণ করতে হবে।”
শুধু ইতিহাসের আলোচনা নয়, উমামা ফাতেমা ভ্রাতৃত্ববোধ ও ঐক্যের ওপরও জোর দেন। তিনি বলেন, “নির্বাচনকে কেন্দ্র করে যে ভ্রাতৃত্ববোধ ও ঐক্য সৃষ্টি হয়েছে, নির্বাচনের পরও তা বজায় রাখতে হবে। কারণ এই ঐক্যের মাধ্যমেই নতুন বাংলাদেশ গড়ে তোলা সম্ভব।”
সভায় উপস্থিত ছিলেন স্বতন্ত্র ঐক্য প্যানেলের জিএস প্রার্থী আল সাদী ভূঁইয়া এবং অন্য অনেক কর্মী-সমর্থক। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হলের ছাত্রদল কর্মী নিলয় কুমার গুপ্ত সেখানে বক্তব্য রাখেন। তিনি বলেন, “আমরা ভিন্ন ভিন্ন মতাদর্শে বিশ্বাসী হলেও মুক্তিযুদ্ধ, বাংলাদেশ ও ২৪ এর প্রশ্নে কোনো আপোষ করব না। আমাদের সবার আগে থাকতে হবে দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব।”
মতবিনিময় সভায় তরুণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে গভীর আগ্রহ লক্ষ্য করা যায়। শিক্ষার্থীরা উমামার বক্তব্যে সাড়া দিয়ে জানান, তারা এমন একটি বাংলাদেশ গড়তে চান যেখানে অতীতের গৌরব এবং বর্তমানের সংগ্রাম মিলেমিশে একটি শক্তিশালী ভিত্তি তৈরি করবে।
উমামা ফাতেমার এই বক্তব্য ইতোমধ্যেই ছাত্রসমাজে আলোচনার জন্ম দিয়েছে। অনেকেই মনে করছেন, ৭১ ও ২৪-কে মুখোমুখি দাঁড় করানোর চেষ্টার বিপরীতে তার এই যুক্তি তরুণ প্রজন্মকে নতুনভাবে ভাবতে সাহায্য করবে। ইতিহাসের ধারাবাহিকতায় দুটি আন্দোলনের গুরুত্ব তুলে ধরে তিনি যে বার্তা দিয়েছেন, তা আগামী দিনের বাংলাদেশে রাজনৈতিক চেতনা গঠনে বিশেষ ভূমিকা রাখতে পারে।