ঢাকায় সফররত পাকিস্তানের উপপ্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দার গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন। বৈঠকে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুলসহ শীর্ষ নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
ঢাকায় সফররত পাকিস্তানের উপপ্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দার রোববার সন্ধ্যায় গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেছেন। এই সাক্ষাৎকে ঘিরে রাজধানীর কূটনৈতিক মহলে নতুন আলোচনার জন্ম নিয়েছে।
রাত ৭টার কিছু আগে গুলশানের বিএনপি চেয়ারপারসনের বাসভবনে প্রবেশ করেন ইসহাক দার। তার সঙ্গে ছিলেন ঢাকায় নিযুক্ত পাকিস্তানের হাইকমিশনার ইমরান হায়দার। প্রায় এক ঘণ্টার এই বৈঠকে দুই দেশের রাজনৈতিক সম্পর্ক ও আঞ্চলিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হয়েছে বলে জানা গেছে।
বিএনপির পক্ষ থেকে এসময় উপস্থিত ছিলেন মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এবং দলের জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন। বিএনপি মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির খান সাংবাদিকদের বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
খালেদা জিয়ার সঙ্গে এ ধরনের বৈঠককে অনেকেই গুরুত্বপূর্ণ কূটনৈতিক বার্তা হিসেবে দেখছেন। বিশেষ করে বাংলাদেশে চলমান রাজনৈতিক অচলাবস্থার প্রেক্ষাপটে পাকিস্তান সরকারের উচ্চপর্যায়ের এই সফর বিএনপিকে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আরও দৃশ্যমান করে তুলেছে।
এর আগে শনিবার বিকেলে ঢাকায় পাকিস্তান দূতাবাসে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নেতৃত্বে ছয় সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল ইসহাক দারের সঙ্গে বৈঠক করেন। সেই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, বেগম সেলিমা রহমান, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান অবসরপ্রাপ্ত এয়ার ভাইস মার্শাল আলতাফ হোসেন চৌধুরী এবং দলের সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ।
সেদিনের বৈঠকে বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি, দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা এবং ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা নিয়ে দীর্ঘ আলোচনা হয় বলে দলীয় সূত্র জানিয়েছে। পরপর দুই দিনে অনুষ্ঠিত বৈঠকগুলোকে বিএনপির নেতারা কূটনৈতিক সফলতা হিসেবেই দেখছেন।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, এই সাক্ষাৎ কেবল আনুষ্ঠানিক সৌজন্য নয়, বরং এর মাধ্যমে পাকিস্তান সরকার বিএনপির সঙ্গে সম্পর্ক জোরদারের স্পষ্ট বার্তা দিয়েছে। বিশেষ করে আসন্ন জাতীয় নির্বাচনকে ঘিরে বাংলাদেশের রাজনীতিতে যে অস্থিরতা তৈরি হয়েছে, সেই প্রেক্ষাপটে পাকিস্তানের এই কূটনৈতিক সক্রিয়তা তাৎপর্যপূর্ণ।
বিএনপি নেতাদের মতে, আন্তর্জাতিক অঙ্গনে দলের কণ্ঠস্বরকে শক্তিশালী করতে এ ধরনের বৈঠক বড় ভূমিকা রাখবে। আর খালেদা জিয়ার সঙ্গে পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সরাসরি সাক্ষাৎ বিএনপির প্রতি আন্তর্জাতিক মহলের আস্থার প্রতিফলন।
রাজনৈতিক মহলে এখন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে এই প্রশ্ন—বৈঠকে ঠিক কী কী বিষয় নিয়ে খোলামেলা আলোচনা হয়েছে এবং এর প্রভাব ভবিষ্যতে বাংলাদেশ-পাকিস্তান সম্পর্কের ওপর কতটা পড়বে। তবে বিএনপি পক্ষ থেকে বৈঠকের বিস্তারিত তথ্য প্রকাশ না করলেও শীর্ষ নেতারা জানিয়েছেন, আলোচনার মূল বিষয় ছিল আঞ্চলিক রাজনৈতিক পরিস্থিতি, দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক এবং গণতন্ত্রের ভবিষ্যৎ দিকনির্দেশনা।
এদিকে কূটনৈতিক অঙ্গনের অনেকে মনে করছেন, পাকিস্তান সরকারের এই ধরনের সরাসরি সম্পৃক্ততা বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে একটি কৌশলগত বার্তা দিচ্ছে। বিশেষ করে বিএনপির সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বৃদ্ধি করে ভবিষ্যতে দুই দেশের সম্পর্ককে নতুন উচ্চতায় নেওয়ার সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে।
খালেদা জিয়ার বাসভবনে অনুষ্ঠিত এই বৈঠক শুধু বিএনপির রাজনীতির জন্য নয়, বরং পুরো দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন মাত্রা যোগ করেছে। কারণ, এ ধরনের বৈঠককে কেন্দ্র করে ভবিষ্যতে আন্তর্জাতিক মহলে বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংকট নতুনভাবে আলোচনায় আসবে বলেই রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মত।