close

লাইক দিন পয়েন্ট জিতুন!

জুলাইয়ের চেতনা নতুন সুবিধাবাদীদের হাতে বন্দি , আনিস আলমগীর..

আই নিউজ বিডি ডেস্ক  avatar   
আই নিউজ বিডি ডেস্ক
আনিস আলমগীর বলেন, জুলাইয়ের চেতনা হৃদয়ে জাগাতে হয়, চাপিয়ে নয়। এখন তা সুবিধাবাদীদের অস্ত্র, যার পেছনে আছে নাটক, বিভ্রান্তি ও ক্ষমতার খেলা।..

দেশের বর্তমান রাজনৈতিক ও আদর্শিক প্রেক্ষাপটে আলোচিত হয়ে উঠেছে "জুলাইয়ের চেতনা"। এই চেতনার স্বরূপ ও এর প্রয়োগ নিয়ে সরব হয়েছেন বিশিষ্ট সাংবাদিক ও কলামিস্ট আনিস আলমগীর। বৃহস্পতিবার দুপুরে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে একটি দীর্ঘ পোস্টে তিনি এই নিয়ে খোলামেলা ও তীব্র ভাষায় মতামত প্রকাশ করেন।

আনিস আলমগীর তার পোস্টে বলেন, “চেতনা কখনো চাপিয়ে দেওয়া যায় না—জাগাতে হয় হৃদয়ে, ত্যাগে, এবং উদাহরণে।” তাঁর মতে, ‘জুলাইয়ের চেতনা’ নামে বর্তমান সময়ে যা তুলে ধরা হচ্ছে, তা আদতে সুবিধাবাদীদের হাতে বন্দি হয়ে পড়েছে। এক সময় একাত্তরের চেতনার পেছনে যারা নিজেদের অবস্থান পোক্ত করেছিল, এখন তারাই আবার নতুন করে ‘জুলাই’ নামক আরেক চেতনাকে পুঁজি করে ক্ষমতা, সম্পদ ও প্রভাব বাড়াচ্ছে।

তিনি আরও লেখেন, “চেতনা গাছে ফলতেও না, আকাশে উড়তেও না—চেতনা মানুষ ধারণ করে।” এটি কোনো স্লোগান বা নাটকীয় কর্মসূচির মধ্য দিয়ে চাপিয়ে দেওয়ার জিনিস নয়। বরং, উদাহরণ ও জীবনাচরণ দিয়েই চেতনা সমাজে রোপণ করতে হয়।

আনিস আলমগীর লেখেন, একাত্তরের চেতনা যেমন একসময় কিছু সুবিধাবাদীর হাতে বন্দি হয়েছিল, এখন তেমনভাবেই “জুলাইয়ের চেতনা” একটি নির্দিষ্ট গোষ্ঠীর সুবিধার পণ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। তিনি বলেন, "মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিলের পক্ষে যারা ছিল, আজ তারাই জুলাই যোদ্ধাদের কোটা দাবি করছে।" সংসদে ‘জুলাই শহীদ পরিবার’দের জন্য সংরক্ষিত আসনের প্রস্তাব আসছে—এ যেন এক নতুন রাজবংশ তৈরির ইঙ্গিত।

এই প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এখন যদি মুহাম্মদ জাফর ইকবাল একাত্তরের পক্ষ নিয়ে কলাম লেখেন, কিংবা ফরহাদ মজহার যদি জুলাইয়ের পক্ষে কিছু বলেন, মানুষের মনে আর চেতনা জাগে না—বরং বিরক্তি বাড়ে। কারণ, মানুষ এখন এসব দেখছে এক ধরনের 'ব্র্যান্ডেড চেতনাবাজি' হিসেবে।

আনিস আলমগীর বলেন, শুধু বাংলাদেশ নয়, বিশ্বেও এমন উদাহরণ ভুরি ভুরি রয়েছে। তিনি তুলে ধরেন ইরানের ইসলামি বিপ্লব, ভেনেজুয়েলার বলিভার বিপ্লব, ও মিসরের তাহরির স্কয়ারের উদাহরণ। এসব বিপ্লবও শুরুতে চেতনার নামে হলেও, পরে ক্ষমতালোভী কিছু গোষ্ঠীর দখলে পড়ে গিয়েছিল।

তার ভাষায়, “জনগণ তখন বুঝে যায়, চেতনা আর বিপ্লবের নামেই কেবল ক্ষমতা বদল হয়, বাস্তব বদলায় না।” সেই পরিবর্তন কখনো জনগণের জীবনে সচ্ছলতা বা ন্যায়বিচার আনতে পারে না।

আনিস আলমগীরের বক্তব্যে উঠে আসে রাষ্ট্রীয় অস্থিরতা নিয়েও উদ্বেগ। তিনি বলেন, একের পর এক চাঁদাবাজি, বিভ্রান্ত কর্মসূচি ও নাটকীয় ঘোষণা যখন সমাজে প্রভাব ফেলে, তখন ‘চেতনা’ শব্দটি নিজেই ভোতা হয়ে যায়। তার ভাষায়, “জুলাইয়ের এক বছর না যেতেই চেতনার নামে মাসব্যাপী কর্মসূচি চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে—আর সেই কর্মসূচিও বারবার পরিবর্তিত হচ্ছে।”

এই রকম বারবার বদলে যাওয়া কর্মসূচির বাস্তবতা জনগণকে বুঝিয়ে দেয়, আদর্শ চাপিয়ে দিলে তা কখনো টিকে না।

পোস্টের শেষদিকে এসে আনিস আলমগীর লিখেছেন, চেতনা জাগাতে হলে স্লোগান নয়, উদাহরণ দরকার। বর্তমান বাস্তবতায় সেই উদাহরণ নেই, আছে শুধু নাটক, নাটকীয় ঘোষণা ও ব্র্যান্ডেড ‘চেতনাবাজি’। তিনি বলেন, “আমাদের সামনে এখন উদাহরণ নেই—আছে শুধু ব্যস্ততা চেতনাবাজির নতুন ব্র্যান্ডিংয়ে।”

এই অবস্থার প্রেক্ষিতে তিনি শঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, “জুলাই চেতনার এক বছরেই যদি এই হাল হয়, আগামী বছর কী হবে—আল্লাহ মালুম।

আনিস আলমগীরের বক্তব্য নিছক রাজনৈতিক নয়, বরং এক গভীর সতর্কবার্তা। তিনি চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়েছেন, কিভাবে একটি আদর্শিক ধারণা ধীরে ধীরে ক্ষমতালোভী ও সুবিধাবাদী গোষ্ঠীর হাতে ব্যবহৃত হয়ে যায়। তাঁর এই পোস্ট আজ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নতুন করে আলোচনার ঝড় তুলেছে।

Nessun commento trovato