ইরানের সঙ্গে চলমান উত্তপ্ত যুদ্ধ বন্ধ করতে এবার ভিন্ন পথে হাঁটছে ইসরায়েল। দীর্ঘদিনের সংঘাত আর সামরিক উত্তেজনার পর অবশেষে তারা যুদ্ধ বন্ধে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। মার্কিন সংবাদমাধ্যম ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল এবং টাইমস অব ইসরায়েল-এর বরাতে জানা গেছে, ইসরায়েল তাদের বার্তা গোপনে পৌঁছে দিয়েছে ইরানি কর্তৃপক্ষের কাছে। সেই বার্তায় উল্লেখ রয়েছে— "যদি ইরান পারমাণবিক কর্মসূচি বাতিল করতে রাজি হয়, তাহলে এখনই ইসরায়েল সব হামলা বন্ধ করতে প্রস্তুত।"
এখানেই শেষ নয়, এই বার্তা পৌঁছাতে ইসরায়েল তাদের কূটনৈতিক সহযোগী যুক্তরাষ্ট্রকে ব্যবহার করেছে। আর যুক্তরাষ্ট্র সেই বার্তা তাদের আরব মিত্রদের মাধ্যমে ইরানের কাছে পৌঁছে দেয়। মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে যুদ্ধের উত্তেজনার মাঝে এই বার্তা যেন এক নতুন মোড় তৈরি করেছে।
ইসরায়েলি টেলিভিশন চ্যানেল-১২ জানিয়েছে, "অপারেশন রাইজিং লায়ন" নামের সামরিক অভিযানের মাধ্যমে ইসরায়েল চায়, খুব দ্রুত ইরানের পারমাণবিক এবং ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র হুমকি মুছে দিতে। তারা আশা করছে, কয়েকদিনের মধ্যেই এই লক্ষ্য পূরণ সম্ভব হবে।
ইসরায়েলি এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা টাইমস অব ইসরায়েলকে জানান,আমরা চাই এখনই যুদ্ধ থামুক। কিন্তু সিদ্ধান্তটা ইরানের। তারা চুক্তিতে আসলে এই মুহূর্তেই বোমাবর্ষণ বন্ধ করব।
চ্যানেল-১২ আরও জানায়, ইসরায়েল এখন যুদ্ধ বন্ধ করার দুটি সম্ভাব্য পরিকল্পনার দিকে এগোচ্ছে:
-
একতরফা ঘোষণা: ইসরায়েল ঘোষণা করতে পারে যে, তারা যুদ্ধের লক্ষ্য পূরণ করেছে এবং হামলা থামিয়েছে।
-
যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় চুক্তি: উভয়পক্ষ যুদ্ধবিরতিতে পৌঁছেছে এমন ঘোষণা আসতে পারে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে।
তবে ইসরায়েল মনে করে, দ্বিতীয় পথটি বাস্তবে কার্যকর নয়, কারণ তারা ইরানকে একতরফাভাবে বাধ্য করতে চায়, আলোচনা নয়।
এদিকে ইরানের প্রতিক্রিয়া এখনো আগ্রাসী। তারা বলছে, হামলার জবাব না দিয়ে কোনও চুক্তি নয়। বিশেষ করে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি এই যুদ্ধ বন্ধে সম্মত হচ্ছেন না বলে জানিয়েছে ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম ওয়াল্লা।
ওয়াল্লা আরও জানায়, ইসরায়েল সোমবার তেহরানের গুরুত্বপূর্ণ সরকারি স্থাপনাগুলোতে হামলা চালিয়ে কড়া বার্তা দিয়েছে:ক্ষেপণাস্ত্র থামাও, না হলে আঘাত আরও ভয়াবহ হবে।
ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের দাবি, ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্র মনে করছে, এই যৌথ চাপ ইরানকে আবার আলোচনার টেবিলে ফিরিয়ে আনবে। যদি ইরান পারমাণবিক প্রকল্প বাতিল করতে রাজি হয়, তাহলে যুদ্ধ শেষ হবে।
তবে ইসরায়েলি নিরাপত্তা বাহিনী সতর্ক করে বলেছেইরান যদি আবার কর্মসূচি শুরু করে, তাহলে আমরা আবার হামলা করব—তাও আরও শক্তিশালীভাবে।
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু রবিবার বলেন,আমরা আমাদের সামরিক লক্ষ্য প্রায় পূরণ করেছি। তবে চূড়ান্ত লক্ষ্য অর্জিত না হওয়া পর্যন্ত এই অভিযান চলবে। ইসরায়েল দীর্ঘস্থায়ী যুদ্ধে যেতে চায় না, তবে প্রয়োজনে পিছিয়ে যাবে না।
সবচেয়ে বড় প্রশ্ন এখন—ইরান কি আলোচনায় ফিরবে? নাকি এই সংঘাত আরও গভীরে যাবে?
বর্তমানে যুদ্ধবিরতি ও চুক্তির সম্ভাবনা তৈরি হলেও, ইরান যদি ক্ষেপণাস্ত্র হামলা না থামায়, তাহলে ইসরায়েলও হামলার মাত্রা বাড়াবে—এমন হুমকি সরাসরি দিয়েছে তেলআবিব।
মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে এখন কেবল অপেক্ষা—একটি সিদ্ধান্তের। সেটি ইরানের। আর সেই সিদ্ধান্তই নির্ধারণ করবে—এই যুদ্ধ থামবে, না আরও ছড়িয়ে পড়বে।