close

ভিডিও আপলোড করুন পয়েন্ট জিতুন!

যতীন সরকারের চিরবিদায়: মাটি ও মানুষের শিক্ষক আর ফিরবেন না..

Md Humayun avatar   
Md Humayun
নেত্রকোণার কেন্দুয়া উপজেলার চন্দ্রপাড়া গ্রামে ১৯৩৬ সালের ১৮ আগস্ট জন্মেছিলেন যতীন সরকার। পরবর্তীতে তিনি নেত্রকোণা জেলা
শহরের রামকৃষ্ণ মিশন রোডের বাসভবন ‘বানপ্রস্থে’ বসবাস শুরু করেন।..

আজ সেই জনপদই শোকের ভারে নত হয়ে আছে। আকাশে যেন কালো মেঘ, শহরের রাস্তাঘাটে, গলিতে গলিতে, কথায় কথায় উচ্চারিত হচ্ছে একটাই নাম—যতীন সরকার।

 

প্রগতিশীল বাম ধারার এই বরেণ্য বুদ্ধিজীবী, শিক্ষক ও স্বাধীনতা পুরস্কারপ্রাপ্ত লেখক বুধবার বিকাল পৌনে ৩টায় ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আইসিইউতে শেষনিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন। বয়স হয়েছিল ৮৯ বছর।

 

জীবনের শেষ কয়েক বছর বার্ধক্যজনিত জটিলতায় ভুগলেও তার চিন্তা, দর্শন ও মমতায় ভরা কথা মানুষের হৃদয়ে রয়ে গিয়েছিল অমলিন। গত জুনে এক দুর্ঘটনায় উরুর হাড়ে আঘাত পাওয়ার পর শারীরিক অবস্থা আরও খারাপ হয়। অবশেষে থেমে গেল এক অবিরাম সংগ্রামের জীবনযাত্রা।

 

কৈশোর থেকেই দারিদ্র্যের সাথে লড়াই করে এগিয়েছেন তিনি। টিউশন ও নানা কাজ করে পড়াশোনা চালিয়ে গেছেন। ছাত্রজীবনে ছিলেন সাহিত্যের অনুরাগী; নেত্রকোণা কলেজে ইন্টারমিডিয়েটে পড়ার সময়ই ছাত্রসংসদের সাহিত্য সম্পাদক নির্বাচিত হন।

 

শিক্ষকতার জীবন শুরু আশুজিয়া হাই স্কুলে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা ভাষা ও সাহিত্য অধ্যয়ন শেষে দীর্ঘ চার দশক শিক্ষকতা করেছেন নাসিরাবাদ কলেজে। তার ক্লাসরুম শুধু পাঠদানের স্থান ছিল না, ছিল মুক্তবুদ্ধির আলো জ্বালানোর এক আশ্রয়।

 

প্রায় ছয় দশকের বুদ্ধিবৃত্তিক তৎপরতায় যতীন সরকার হয়ে উঠেছিলেন এক প্রজন্মের প্রেরণা। দুই মেয়াদে বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর কেন্দ্রীয় সভাপতি ছিলেন তিনি। লিখেছেন আড়াই ডজনেরও বেশি গ্রন্থ—সাহিত্যের কাছে প্রত্যাশা, পাকিস্তানের জন্ম-মৃত্যু দর্শন, বাংলাদেশী কাবি গান, বাঙালির সমাজতান্ত্রিক ঐতিহ্য, সংস্কৃতির সংগ্রাম—যেখানে রাজনীতি, সাহিত্য, সংস্কৃতি আর মানবতাবাদ মিলেমিশে একাকার হয়েছে।

 

তার অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে পেয়েছেন বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার (২০০৮), স্বাধীনতা পুরস্কার (২০১০)সহ অসংখ্য সম্মাননা। কিন্তু পুরস্কারের ঊর্ধ্বে ছিল তার সহজ-সরল জীবন, সাধারণ মানুষের সঙ্গে মিশে থাকার অদ্ভুত ক্ষমতা।

 

বুধবার বিকেলে ময়মনসিংহ থেকে মরদেহ পৌঁছায় নেত্রকোণায়। শহরের রামকৃষ্ণ মিশন রোডের বাসভবন ‘বানপ্রস্থে’ পরিবারের শ্রদ্ধা নিবেদনের পর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে জড়ো হন অসংখ্য মানুষ। কেউ চোখ মুছছিলেন, কেউ নীরবে দাঁড়িয়ে ছিলেন—যেন সময় থেমে গেছে।

 

রাত ১১টায় বারহাট্টা রোডের নেত্রকোণা কেন্দ্রীয় মহাশ্মশানে চিতায় আগুন ধরবে। আগুনে পুড়বে দেহ, কিন্তু তার শিক্ষা, তার সাহস, তার মানবিকতার আলো নিভবে না কোনোদিন। এই জনপদের স্মৃতি ও মমতার ভাঁজে যতীন সরকার রয়ে যাবেন চিরদিনের জন্য।

Nessun commento trovato