close

ভিডিও আপলোড করুন পয়েন্ট জিতুন!

যমুনার সামনে বুয়েট শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশের লাঠিচার্জ, টিয়ার শেল-সাউন্ড গ্রেনেড..

আই নিউজ বিডি ডেস্ক  avatar   
আই নিউজ বিডি ডেস্ক
Police clashed with BUET students protesting with three-point demands, firing tear gas, sound grenades, and using water cannons near Jamuna, turning the entire area tense.

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থীদের তিন দফা দাবির আন্দোলনে পুলিশের লাঠিচার্জ, টিয়ার শেল ও সাউন্ড গ্রেনেড ছোড়ার ঘটনা ঘটেছে। যমুনার সামনে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে পুরো এলাকায়।

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থীরা তিন দফা দাবিতে বুধবার (২৭ আগস্ট) রাজধানীর শাহবাগ থেকে পদযাত্রা শুরু করে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনার সামনে পৌঁছালে পুলিশের বাধার মুখে পড়ে। এ সময় শিক্ষার্থীদের ওপর লাঠিচার্জ, টিয়ার শেল এবং সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। পরিস্থিতি দ্রুত উত্তপ্ত হয়ে ওঠে এবং পুরো এলাকায় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে।

দুপুর দেড়টার দিকে শাহবাগ থেকে যাত্রা শুরু করে শিক্ষার্থীরা যমুনার দিকে অগ্রসর হন। হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালের সামনের সড়ক পেরিয়ে তারা যমুনার কাছাকাছি পৌঁছালে পুলিশ প্রথমে ব্যারিকেড সৃষ্টি করে। পরে শিক্ষার্থীরা এগোতে চাইলে পুলিশ লাঠিচার্জ শুরু করে। বাধ্য হয়ে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা পিছু হটে যায়, তবে পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয়ে ওঠে।

ঘটনাস্থল থেকে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, শিক্ষার্থীদের ছত্রভঙ্গ করতে একের পর এক সাউন্ড গ্রেনেড ছোঁড়া হয়। বাতাসে টিয়ার শেলের ঝাঁঝালো গন্ধ ছড়িয়ে পড়ে, যা আশপাশের পথচারী ও স্থানীয়দের ভোগান্তিতে ফেলে। এক পর্যায়ে পুলিশ জল কামান ব্যবহার করেও শিক্ষার্থীদের সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা চালায়।

শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেন, তারা শান্তিপূর্ণভাবে তিন দফা দাবিতে আন্দোলন চালাচ্ছিলেন। কিন্তু হঠাৎ করেই পুলিশ তাদের ওপর অতর্কিত হামলা চালিয়েছে। পুলিশের এমন আচরণে তারা ক্ষোভ প্রকাশ করেন এবং জানান, যেকোনো মূল্যে দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে।

অন্যদিকে, পুলিশের দাবি—প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনার নিরাপত্তা নিশ্চিত করার স্বার্থে শিক্ষার্থীদের অগ্রসর হতে বাধা দেওয়া হয়েছে। তারা জানান, শিক্ষার্থীরা পরিস্থিতি উত্তপ্ত করলে বাধ্য হয়ে লাঠিচার্জ ও টিয়ার শেল ব্যবহার করা হয়েছে।

এর আগে সকাল থেকেই বুয়েট শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে জমায়েত হতে শুরু করেন। পরে বেলা সাড়ে ১১টার দিকে তারা মিছিল নিয়ে টিএসসি, চারুকলার সামনে দিয়ে শাহবাগে পৌঁছান। সেখানে তারা সড়ক অবরোধ করে স্লোগান দিতে থাকেন। শিক্ষার্থীরা "ব্লকেড ব্লকেড শাহবাগ ব্লকেড", "দিয়েছি তো রক্ত, আরও দেবো রক্ত", "জ্বালোরে জ্বালো আগুন জ্বালো" সহ বিভিন্ন শ্লোগানে পুরো এলাকা মুখর করে তোলেন।

যানবাহন চলাচলে বিঘ্ন সৃষ্টি হলেও শিক্ষার্থীরা আটকে পড়া গাড়িগুলো ঘুরিয়ে দেওয়ার সুযোগ দেন। আন্দোলনকারীরা সড়ক অবরোধের পাশাপাশি ঘোষণা দেন, তাদের তিন দফা দাবি পূরণ না হলে যমুনার দিকে পদযাত্রা করবেন। তারা স্পষ্ট জানিয়ে দেন, বিকেল ৩টার মধ্যে অন্তত তিনজন উপদেষ্টা এসে তাদের আশ্বাস দিতে হবে, অন্যথায় তারা যমুনার ব্যারিকেড ভেঙে অগ্রসর হবেন।

শিক্ষার্থীদের এই আন্দোলনে বুয়েটের সহকারী অধ্যাপক ইফতেখারুল ইসলাম ইমন উপস্থিত হয়ে সংহতি জানান। তিনি শিক্ষার্থীদের দাবিগুলোকে যৌক্তিক বলে অভিহিত করেন।

উল্লেখ্য, এর আগে মঙ্গলবার (২৬ আগস্ট) শিক্ষার্থীরা একই দাবিতে শাহবাগে পাঁচ ঘণ্টার অবরোধ কর্মসূচি পালন করেন। এরপর তারা "লং মার্চ টু ঢাকা" কর্মসূচিরও ঘোষণা দেন।

শিক্ষার্থীদের উত্থাপিত তিন দফা দাবি হলো:
১. নবম গ্রেডে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের জন্য বিদ্যমান ৩৩ শতাংশ কোটা বাতিল করে মেধার ভিত্তিতে নিয়োগ নিশ্চিত করা।
২. দশম গ্রেডে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের জন্য থাকা ১০০ শতাংশ কোটা বাতিল করে সবার জন্য উন্মুক্ত করা।
৩. বিএসসি ডিগ্রি ছাড়া ‘ইঞ্জিনিয়ার’ পদবি ব্যবহার না করা এবং করলে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা।

শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন, এই তিনটি দাবি পূরণ না হলে তারা যেকোনো পরিস্থিতিতেই আন্দোলন চালিয়ে যাবেন। তাদের মতে, আন্দোলন দমন করতে পুলিশি হামলা চালানো হলেও এতে তারা দমে যাবেন না, বরং আরও বৃহত্তর কর্মসূচির দিকে অগ্রসর হবেন।

No comments found