ঝালকাঠির রাজাপুরে বিএনপি ও যুবদল একই সময়ে একই স্থানে সভা ডাকায় প্রশাসন ১৪৪ ধারা জারি করেছে। দুই পক্ষের মোটরসাইকেল শোডাউন ও মুখোমুখি অবস্থান এলাকায় চরম উত্তেজনা সৃষ্টি করেছে।
ঝালকাঠির রাজাপুর উপজেলায় রাজনৈতিক উত্তেজনা চরমে পৌঁছেছে। স্থানীয় বিএনপি এবং যুবদল একই সময়ে, একই স্থানে পৃথক সমাবেশের ডাক দেয়ায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে প্রশাসন বাধ্য হয়ে ১৪৪ ধারা জারি করেছে।
ঘটনাটি ঘটেছে রাজাপুর উপজেলা পরিষদ মার্কেট চত্বরে। বুধবার (১৩ আগস্ট) বিকেল ৩টায় এখানে সমাবেশ করার ঘোষণা দেয় উপজেলা বিএনপির একটি অংশ। কিন্তু একই স্থান ও সময়ে সমাবেশের ডাক দেয় উপজেলা যুবদলও। এই দ্বন্দ্বপূর্ণ পরিস্থিতি মঙ্গলবার (১২ আগস্ট) রাত ১০টা থেকে বুধবার রাত ১২টা পর্যন্ত উক্ত স্থান ও আশপাশের এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি করার সিদ্ধান্ত নেয় উপজেলা প্রশাসন। রাজাপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রাহুল চন্দ জানিয়েছেন, আইনশৃঙ্খলার অবনতি ঠেকাতে এ ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।
সূত্র জানায়, জুলাই গণঅভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে উপজেলা বিএনপির উদ্যোগে র্যালি ও সমাবেশের আয়োজন করা হয়। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকার কথা ছিল বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবদুস সালামের। দাওয়াতপত্রে স্বাক্ষর করেন উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট নুর হোসেন। সমাবেশ সফল করতে বেশ কয়েকদিন ধরে ঝালকাঠি–১ আসনের মনোনয়নপ্রত্যাশী হাবিবুর রহমান সেলিম রেজাসহ আরও পাঁচজন নেতা প্রচার চালিয়ে আসছিলেন। তারা সকলেই বিএনপির কেন্দ্রীয় ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক রফিকুল ইসলাম জামালের প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে পরিচিত।
উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, সমাবেশের দাওয়াতপত্রে রফিকুল ইসলাম জামাল এবং উপজেলা বিএনপির সভাপতি অ্যাডভোকেট আবুল কালাম আজাদের নাম ছিল না।
রফিকুল ইসলাম জামালের অনুসারী হিসেবে পরিচিত উপজেলা যুবদলের পক্ষ থেকেও একই স্থানে একই সময়ে সমাবেশের ডাক দেয়া হয়। যুবদলের দাওয়াতপত্রে অতিথি হিসেবে উল্লেখ করা হয় জেলা যুবদলের ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক রবিউল হোসেন তুহিন ও সদস্য সচিব আনিচুর রহমানের নাম। তবে রবিউল হোসেন তুহিন জানান, রাজাপুর যুবদলের সমাবেশ বিষয়ে তারা কিছুই জানেন না।
যুবদলের সদস্য সচিব সৈয়দ নাজমুল হক বলেন, “কেন্দ্রীয় নির্দেশনা অনুযায়ী অনেক আগে থেকেই আমরা সমাবেশের পরিকল্পনা করেছিলাম। বর্ষার কারণে দেরি হয়েছে। এক সপ্তাহ আগে অনুমতিও নিয়েছি। এখন তারা একই স্থানে সমাবেশ ডেকে অযথা জটিলতা তৈরি করছে।”
রাজাপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রাহুল চন্দ বলেন, “কাউকেই লিখিত অনুমতি দেয়া হয়নি। তবে দুপক্ষই আমাদের অবহিত করেছে। সম্ভাব্য সংঘর্ষ এড়াতে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে।”
জেলা বিএনপির আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট সৈয়দ হোসেন বলেন, “বিএনপির সমাবেশের কথা আমি জানি, কিন্তু যুবদলের সমাবেশ সম্পর্কে জানা নেই। বিষয়টি খতিয়ে দেখব।” সমাবেশে যোগ দেবেন কি না, জানতে চাইলে তিনি জানান, পরিস্থিতি বিবেচনা করেই সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
মঙ্গলবার রাত থেকেই সমাবেশস্থলে দু’পক্ষের অবস্থান, মোটরসাইকেল মহড়া এবং শোডাউনের কারণে রাজাপুরে চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে। সাধারণ মানুষ নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। অনেকেই আশঙ্কা করছেন, সামান্য উসকানিতেই বড় ধরনের সংঘর্ষ ঘটতে পারে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে সতর্ক অবস্থান নেয়া হয়েছে এবং অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েনের প্রস্তুতি চলছে।
রাজাপুরের রাজনৈতিক অঙ্গনে এই সংঘাত শুধু স্থানীয় বিরোধ নয়, বরং আসন্ন জাতীয় নির্বাচনের প্রাক-রাজনৈতিক তাপমাত্রার একটি প্রতিচ্ছবি হিসেবেও দেখা হচ্ছে।