ঝালকাঠিতে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) আয়োজিত গণশুনানিতে একাধিক ঘুষ এবং দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। সোমবার ঝালকাঠি জেলা শিল্পকলা মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত এই গণশুনানিতে সাগর হোসেন নামের এক ব্যক্তি সরাসরি অভিযোগ করেন যে, তাঁর মায়ের পেনশনের অর্থ পেতে ঘুষ দিতে হয়েছে। অভিযোগ করা হয়, জেলা হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা সাজ্জাদ হোসেন তাঁর মায়ের পেনশনের জন্য আড়াই লাখ টাকা ঘুষ দাবি করেন। শেষ পর্যন্ত এক লাখ ৯০ হাজার টাকা দেওয়ার পরই পেনশনের অর্থ পাওয়া যায়।
সাগর হোসেন জানান, তাঁর মা চতুর্থ শ্রেণির একজন সরকারি কর্মচারী ছিলেন। পেনশনের জন্য ঘুষ দেওয়ার পর তাঁরা সেই টাকা হাতে পান। যদিও জেলা হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা সাজ্জাদ হোসেন এই অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছেন, তিনি কোনো ঘুষ নেননি এবং পেনশন পেতে সাগর হোসেনকে আন্তরিকভাবে সহায়তা করেছেন।
গণশুনানিতে আরও ২৯টি সরকারি দপ্তরের বিরুদ্ধে শতাধিক অভিযোগ ওঠে। উল্লেখযোগ্য প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে ছিল জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কার্যালয়, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর, সড়ক ও জনপথ বিভাগ, জেলা পরিষদ এবং ঝালকাঠি পৌরসভা। দুদকের তফসিলভুক্ত ৭৪টি অভিযোগের শুনানি হয় এবং কিছু অভিযোগের তাৎক্ষণিক সমাধান দেওয়া হয়।
অন্য আরেকটি অভিযোগে, সারেঙ্গল ফাজিল মাদ্রাসার শিক্ষক মীর এনামুল হক জানান, উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা এ কে এম হারুন অর রশিদ শিক্ষকদের এমপিওভুক্তির বিল পেতে জনপ্রতি ৫ হাজার টাকা ঘুষ দাবি করেন। পরে জনপ্রতি দুই হাজার টাকায় সমঝোতা হয়। যদিও ওই শিক্ষা কর্মকর্তা শুনানিতে অনুপস্থিত ছিলেন, বিষয়টি তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
গণশুনানির প্রথম পর্বে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন দুদক কমিশনার (তদন্ত) মিঞা মুহাম্মদ আলি আকবার আজিজী। তিনি বলেন, 'যদি আমরা আয়ের চেয়ে বেশি উপহার বা সম্পদ নিয়ে পরিবারে ফিরি, সন্তানদের সামনে কীভাবে জবাব দেব? নিজে সৎ থাকতে হবে এবং পরিবারকেও সৎ পথে রাখতে হবে।' অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ঝালকাঠির জেলা প্রশাসক আশরাফুর রহমান। বিশেষ অতিথি ছিলেন দুদকের মহাপরিচালক (প্রতিরোধ) মো. আক্তার হোসেন, বরিশাল বিভাগীয় পরিচালক মোজাহার আলী সরদার ও ঝালকাঠির পুলিশ সুপার উজ্জ্বল কুমার রায়।
দুদকের মতে, সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধি এবং সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত দপ্তরগুলোর স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করার লক্ষ্যে এ ধরনের গণশুনানির আয়োজন করা হচ্ছে। এর মাধ্যমে সেবাগ্রহীতাদের হয়রানি রোধ এবং দুর্নীতি প্রতিরোধ করা সম্ভব হবে।