ঝালকাঠি: 'সবাই মিলে গড়বো দেশ, দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ' এই স্লোগানকে সামনে রেখে ঝালকাঠিতে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) এর ১৮৬তম গণশুনানি অনুষ্ঠিত হয়েছে। স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করে সরকারি সেবা প্রাপ্তি নিশ্চিত করার লক্ষ্যে আজ (১৩ অক্টোবর'২৫) সোমবার এই গণশুনানি অনুষ্ঠিত হয়।
দুর্নীতি দমন কমিশনের সমন্বিত জেলা কার্যালয় পিরোজপুর আয়োজিত এই গণশুনানি ঝালকাঠি জেলা শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হয়। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন দুদকের মাননীয় কমিশনার (তদন্ত) মিঞা মুহাম্মদ আলি আকবার আজিজী।
কমিশনারের কঠোর বার্তা:
প্রধান অতিথির বক্তৃতায় দুদকের কমিশনার (তদন্ত) মিঞা মুহাম্মদ আলি আকবার আজিজী সরকারি কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্যে কঠোর বার্তা দিয়ে বলেন, "নিজের বিবেক কারো কাছে লিজ দিবেন না। নিজ দায়িত্বে নিজ নিজ দপ্তর দুর্নীতিমুক্ত রাখুন।"
তিনি দুর্নীতিমুক্ত সমাজ গঠনের উপর জোর দিয়ে বলেন, "দুর্নীতিমুক্ত সমাজ গঠনে আমাদের মানসিক অবস্থার পরিবর্তন ঘটাতে হবে। দুর্নীতি নির্মূলের উদ্যোগ নিজেদের ঘর থেকে শুরু করতে হবে। ব্যক্তিগত লোভ-লালসা পরিহার করতে হবে, অন্যকে তার অধিকার থেকে বঞ্চিত করা যাবে না।"
ভবিষ্যৎ প্রজন্মের মধ্যে দুর্নীতিবিরোধী চেতনা গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, "বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকগণ সপ্তাহে অন্তত একদিন শিক্ষার্থীদের নৈতিক শিক্ষা, শুদ্ধাচার এবং ভালোকে ভালো, মন্দকে মন্দ বলতে শিক্ষা দিন।" তিনি আরও উল্লেখ করেন যে, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করে সরকারি সেবা প্রাপ্তি নিশ্চিত করাই গণশুনানির মূল লক্ষ্য।
বিশেষ অতিথিদের বক্তব্য:
ঝালকাঠির জেলা প্রশাসক আশরাফুর রহমান-এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এই গণশুনানিতে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন দুদকের মহাপরিচালক (প্রতিরোধ) মো. আক্তার হোসেন, ঝালকাঠির পুলিশ সুপার উজ্জল কুমার রায় এবং দুদকের বিভাগীয় কার্যালয় বরিশালের পরিচালক মো. মোজাহার আলী সরদার।
বক্তারা দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি বজায় রাখার এবং জনগণকে দুদকের কার্যক্রমে সহযোগিতা করার আহ্বান জানান।
জমা পড়া অভিযোগসমূহ:
এদিনের গণশুনানিতে জেলার ২৯টি সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও বেসরকারি দপ্তরের বিরুদ্ধে মোট ৯৫টি অভিযোগ জমা পড়ে। এর মধ্যে দুদক তফসিলভুক্ত ৭৪টি অভিযোগের সরাসরি শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। অভিযোগকারীরা সরাসরি কমিশনারসহ উপস্থিত কর্তৃপক্ষের সামনে তাদের সমস্যা ও অভিযোগ তুলে ধরেন। কমিশন তাৎক্ষণিকভাবে কিছু অভিযোগের বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেয় এবং বাকিগুলো তদন্ত সাপেক্ষে দ্রুত নিষ্পত্তির আশ্বাস দেয়।
গণশুনানিতে জেলার বিভিন্ন সরকারি দপ্তরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, জনপ্রতিনিধি, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি এবং সাধারণ অভিযোগকারীরা উপস্থিত ছিলেন।